শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

হস্তক্ষেপের ইতিহাস বহু পুরনো

ক্রীড়া প্রতিবেদক

হস্তক্ষেপের ইতিহাস বহু পুরনো

সাইফুল ইসলাম---মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের ১৪ সদস্যের স্কোয়াডে সুযোগ দেওয়া হয়নি মুমিনুল হককে। দেশসেরা টেস্ট ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়ায় মিডিয়া ও ক্রিকেটপ্রেমীরা সমালোচনার তীক্ষবাণে এফোঁড়-ওফোঁড় করেন নির্বাচক প্যানেল ও কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহকে। সমালোচনার ধার এতটাই তীব্র ছিল যে, অগ্নি স্ফূলিঙ্গ হয়ে ওঠা বিতর্ককে ধামাচাপা দিতে পরের দিন বাধ্য হয়ে হস্তক্ষেপ করেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। নিজ ক্ষমতায় স্কোয়াডে ফিরিয়ে আনেন মুমিনুলকে। এজন্য মাসুল গুনতে হয় মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে। যিনি শুরুতে দলে থেকেও শুধুমাত্র হস্তক্ষেপের জন্য ২৭ ঘণ্টার ব্যবধানে বাদ পড়েন। বাংলাদেশে ক্রিকেট ইতিহাসে হস্তক্ষেপ এটাই প্রথম নয় বহু পুরনো। সেই ১৯৭৯ সাল থেকে শুরু।      

বাংলাদেশ টেস্ট খেলছে ১৭ বছর। ওয়ানডে ১৯৮৬ সাল থেকে। প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ এমসিসির বিপক্ষে ১৯৭৬-৭৭ মৌসুমে। ১৯৭৭ সালের জানুয়ারিতে (৭-৯) বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে (তত্কালীন ঢাকা স্টেডিয়াম) সফরকারীদের বিপক্ষে তিনদিনের ম্যাচটি ড্র করেছিল বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের সেরা পারফরমার ছিলেন ব্যাটিংয়ে ইউসুফ রহমান বাবু এবং বোলিংয়ে নজরুল কাদের লিন্টু। তত্কালীন ক্রিকেটার ও সংগঠকদের মতে সে সময় দেশসেরা স্পিনার ছিলেন লিন্টু। পারফরম্যান্সের জন্য নয়, অদ্ভুত এক কারণে চায়নাম্যান স্পিনার লিন্টুর নাম বাংলাদেশের ইতিহাসে থাকবে আজীবন। লিন্টুই দেশের প্রথম উপেক্ষিত ক্রিকেটার। দেশসেরা স্পিনার হয়েও ১৯৭৯ সালের আইসিসি ট্রফি খেলার সুযোগ পাননি ক্রিকেট বোর্ডের তত্কালীন কর্মকর্তাদের নগ্ন হস্তক্ষেপে। সেই শুরু। এরপর বহু ক্রিকেটার বাদ পড়েছেন কোচ, নির্বাচক ও কর্মকর্তাদের বিরাগভাজন হয়ে। তালিকায় বাদ পড়া সর্বশেষ ক্রিকেটার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। সৈকতকে বাদ পড়তে হয় মুমিনুলকে দলভুক্ত করতে যেয়ে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের স্কোয়াডে নেওয়া হয়নি মুমিনুলকে। এতে করে বিতর্কের সৃষ্টি হয় দেশব্যাপী। সেখান থেকে উদ্ধার পেতেই বিসিবি সভাপতি নিজ ক্ষমতায় মুমিনুলকে দলভুক্ত করেন। ১৯৭৯ সালে আইসিসি ট্রফির দল গঠনের প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে দারুণ পারফরম্যান্স করেন। কিন্তু পরীক্ষার জন্য অনুশীলন ক্যাম্পে যোগ দেননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোড় ছাত্র লিন্টু পরীক্ষার জন্য ক্যাম্প করতে পারবেন না বলে লিখিত আবেদন করে ছুটি নিয়েছিলেন বোর্ড থেকে। ১৯৮২ সালের আইসিসি ট্রফিতেও একই রকম অবস্থার অবতারণা হয়। তত্কালীন ক্রীড়া সচিবের নগ্ন হস্তক্ষেপে স্কোয়াডে থেকেও শেষ মুহূর্তে বাদ পড়েন আহমেদ ফাইয়াজ শাহীন। তার জায়গায় নেওয়ায় হয় ক্রীড়া সচিবের ভাগিনা হামিন আহমেদকে। ইংল্যান্ড গেলেও প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেই সময় পার করতে হয়েছিল হামিনকে। ১৯৯৪ সালের আইসিসির ট্রফিতে নির্বাচকদের হস্তক্ষেপে সুযোগ পাননি পেসার সাইফুল ইসলাম। তার জায়গায় সুযোগ দেওয়া হয় অফ স্পিনার শরিফুল হক প্লাবনকে। প্লাবনের অন্তর্ভুক্তিতে বিস্মিত হয়েছিল গোটা দেশ। ফেবারিট হয়েও শুধুমাত্র নির্বাচকদের ভুলে ১৯৯৪ সালের আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি বাংলাদেশ।  

বাংলাদেশ প্রথম বিশ্বকাপ খেলে ১৯৯৯ সালে। সেবারও দল গঠন নিয়ে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিলেন তত্কালীন নির্বাচকরা। আজকের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুকে প্রথমে সুযোগ দেননি নির্বাচকরা। পরবর্তীতে চাপের মুখে দলভুক্ত করেন নান্নুকে এবং বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম জয়ের নায়ক আজকের প্রধান নির্বাচক। অথচ প্রধান নির্বাচক নান্নু দেশসেরা টেস্ট ক্রিকেটার মুমিনুলকে বাদ দিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন। ২০০০ সালে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকের স্কোয়াডেও ছিলেন আরেক নির্বাচক ও দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হাবিবুল বাশার। মিডিয়া ও দেশবাসীর চাপে শেষ পর্যন্ত বাশারকে সুযোগ দেন। এরপর বাকি সব ইতিহাস। বিসিবি সভাপতি এবারই শুধু হস্তক্ষেপ করেছেন তা নয়। কলম্বোয় বাংলাদেশের ১০০ নম্বর টেস্টে দেশে ফিরিয়ে আনেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে। স্কোয়াডে না থাকার পরও ওয়ানডে সিরিজ খেলতে পাঠান মেহেদী হাসান মিরাজকে। যুগে যুগে এরকম হস্তক্ষেপ দেশের ক্রিকেটকে কতটুকু এগিয়ে নিয়েছে, তার উত্তর মিলেছে তাত্ক্ষণিকভাবেই। তারপরও বোধদয় হয়নি নির্বাচক, কোচ ও কর্মকর্তাদের।

 

সর্বশেষ খবর