শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ব্যাটিংয়েই জবাব মুশফিক সাব্বিরদের

রাশেদুর রহমান, চট্টগ্রাম থেকে

ব্যাটিংয়েই জবাব মুশফিক সাব্বিরদের

সকালে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। বিকালে আবার টাইগাররা ঘুরে দাঁড়ায়। অধিনায়ক মুশফিক ও সাব্বির হাফ সেঞ্চুরির মাধ্যমে প্রথম দিনটি বাংলাদেশের করে রাখেন —এএফপি

ঢাকা টেস্টে জয়ের মহানায়ক সাকিব আল হাসান। নায়ক তামিম ইকবাল। মিরপুরে অস্ট্রেলিয়া বধের অন্যতম নায়ক একবার জীবন পেয়েও আলো ছড়াতে পারলেন না নিজের জন্মস্থান চট্টগ্রামে। লড়াই করে টিকে থাকতে পারলেন না চট্টগ্রামের বিরূপ উইকেটে। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের আক্ষেপটা এ কারণেই হয়ত আর নেই। কামিন্সের চতুর্থ ওভারের (দলীয় সপ্তম) প্রথম বলে স্লিপে ম্যাক্সওয়েলকে ক্যাচ দিয়েছিলেন তামিম (৬ রানে)। সেই ক্যাচ ফেলে ম্যাক্সওয়েল এতটাই হতাশায় পুড়েছিলেন যে, মনে হচ্ছিল ক্যারিয়ারের সেরা ভুলটা তিনি করেছেন। তাতে কি হলো? জীবন পেয়ে স্কোরবোর্ডে মাত্র তিন রান যোগ করলেন তামিম। চট্টগ্রামের ছেলে বিদায় নেওয়ার পর ইমরুল এসেও টিকলেন না বেশিক্ষণ। এরপর সৌম্য-মমিনুলের ৪৯ রানের জুটি পথ দেখাচ্ছিল বাংলাদেশকে। নাথান লায়নের ঘূর্ণিঝড় এসে এটাও ভেঙে দিল মধ্যাহ্নভোজের বিরতির আগেই। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম সেশনটাই বুঝিয়ে দিল, ব্যাটসম্যানদের জন্য উইকেটটা বড় ভয়ঙ্কর। তবে শেষ বিকালের চিত্র পুরোপুরিই ভিন্ন। একান্তই বাংলাদেশের। শুধুই টাইগারদের। শুধুই মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমানদের।

সমালোচনা কম হয়নি বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে। ফেসবুক-ইউটিউবের সমালোচনার ব্যাপারে সাব্বিররাও সজাগ দৃষ্টি রাখেন। সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টা সরাসরিই বললেন তিনি। তাই বলে ওসবকে খুব একটা পাত্তা যে দেন, তা নয়। এ কারণেই ব্যাটিংটা মন দিয়ে করতে পারেন। সময় লাগলেও জ্বলে উঠে ব্যাট। সমালোচনার জবাব কথায় নয় কাজে দেওয়া সম্ভব হয়। গতকাল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের নিরামিশ উইকেটে টাইগারদের ব্যাটিং দারুণ কিছুরই ইঙ্গিত। দিন শেষে ২৫৩ রান খুব আহামরি কিছু নয়। সৌম্য সরকারের ৩৩ আর মুমিনুল হক সৌরভের ৩১ রানও হয়ত খুব বড় অবদান নয়। কিন্তু স্পিনবান্ধব উইকেটে যেখানে টিকে থাকার জন্যই সংগ্রাম করতে হয় সেখানে তো অনেক কিছু। এই ছোটখাটো সংগ্রহও দুই দলের ব্যবধান গড়ে দিতে পারে। সৌম্য আর মুমিনুলের পর সাব্বিরের ব্যাটিং সবার পক্ষ থেকে সব সমালোচনারই যেন জবাব দিয়ে দিল। সংক্ষিপ্ত টেস্ট (৮টি) ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসটা খেললেন তিনি। আর কী দুরন্ত দাপটে! নাথান লায়নের ঘূর্ণিঝড়, প্যাট কামিন্সের সাইক্লোন গতি আর পেছন থেকে ম্যাথু ওয়েডের স্লেজিং। সবকিছুকে জয় করে ৬৬ রানের ঝলমলে এক ইনিংস খেললেন সাব্বির। স্লেজিং করলে অনেকেই বিরক্ত হন। সাব্বির বলেন, ‘আমি বরং স্লেজিংটা উপভোগ করি।’ তার এই রুদ্র রূপ দেখে অসি বোলার নাথান লায়ন তো সংবাদ সম্মেলনে বলে দিলেন, ‘সাব্বির অনেকটা বিরাট কোহলির মতো ব্যাটিং করে।’ তুলনাটা কী খুব বড় হয়ে গেল! সাব্বির খুব শান্ত স্বরে জানালেন, ‘দুজন দুই রকম। তুলনা করার ব্যাপারটা আসছে কেন!’

অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম (৬২*) নিজের কাজটা করে যাচ্ছেন। সাকিব আল হাসানকে নিয়ে করেছেন ৩২ রানের জুটি। সাব্বিরকে নিয়ে ১০৫ রানের জুটি গড়েছেন। নাসিরকে সঙ্গে নিয়ে ৩১ রান করে এখনো টিকে আছেন। মুশফিক-নাসির জুটির উপর এখন অনেক কিছুই নির্ভর করছে। অবশ্য শেষদিকে মেহেদী হাসান মিরাজও আছেন। ব্যাট হাতে কিছুটা কারিশমা দেখাতে পারেন তাইজুল-মুস্তাফিজরাও।

চট্টগ্রামের উইকেটে ব্যাটিং করাটা কঠিন নিঃসন্দেহে। এতো বুঝা গেছে গতকালই। কিন্তু এর গতি প্রকৃতি এমনকি বিশেষজ্ঞরাও বুঝতে পারছেন না। নাথান লায়ন বলছেন, জীবনের সবচেয়ে কঠিন টেস্ট খেলছেন তিনি। সাব্বির বলছেন, এই উইকেটের আচরণ এখনো বুঝিনি। সময় লাগবে। গত কয়েকদিন টানা বৃষ্টির কারণে ঢাকা ছিল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট। এ কারণেই এখনো অপরিচিত এটা। তবে সবাই বলছে, আজই বুঝা যাবে এর গতি প্রকৃতি। স্পিনে কতটা টার্ন নিবে তার উপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। এমনকি ম্যাচের ভবিষ্যতও। সাকিব-তাইজুল-মিরাজদের জন্য টার্নিং উইকেট খুব জরুরি। বিশেষ করে আজ প্রথম সেশনটা মুশফিকরা পার করতে পারলে সাকিবদের কাজ সহজ হতে পারে। দুপুরের পর বদলে যেতে পারে সাগরিকার উইকেটের রূপ। স্পিনাররা টার্ন পাবেন কি না বলা কঠিন।

তবে গতকাল সারা দিনে উইকেটের আচরণ বলছে, এখানে বাউন্স পাওয়া কঠিন। লো বাউন্সি উইকেটও স্পিনারদের বাড়তি সহায়তা দিতে পারে। নাথালের পাঁচটি উইকেটের মধ্যে লো বাউন্সের কারণেই এসেছে চারটি উইকেট। সেই যাই হোক, প্রথম ইনিংসের প্রথম সেশনই যদি এমন ভয়ঙ্কর হয় (৭০/৩) তবে এই উইকেটে চতুর্থ ইনিংস খেলা কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে!

সর্বশেষ খবর