শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

স্পিনারদের নীল দংশনের সিরিজ

আসিফ ইকবাল

স্পিনারদের নীল দংশনের সিরিজ

চট্টগ্রাম টেস্টের নায়ক লিয়ন - ঢাকা টেস্টের নায়ক সাকিব

আগুয়ান তামিম ইকবালকে টার্নে যেভাবে বোকা বানান নাথান লিয়ন, সেটা শুধু কল্পনার রংয়েই আঁকা সম্ভব! তামিমের স্ট্যাম্পিংয়ের দৃশ্যটি একবার রিভাইস করুন, তাহলে বুঝতে পারবেন কতটা শিল্প ও সৌন্দর্য্য লুকিয়ে আছে ওই মায়াবী বলে। অসামান্য দক্ষতায় বলটিকে শূন্যে ভাসিয়ে নিখুঁত জায়গায় ফেলেন লিয়ন। সীমানা ছাড়া করতে তেরেফুরে আসেন তামিম। কিন্তু কোথায় কি? মিস করেন বলের লাইন। টার্নে বোকা বনে স্ট্যাম্পিং হলেন। অসাধারণ! নাথান লিয়ন; চট্টগ্রাম টেস্টে আঙ্গুলের কারুকাজে বিষবাণ ছুড়ে যেভাবে একের পর এক দংশন করেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের, তাতে ফের আলোচনায় উঠে এসেছে অফ স্পিন। আলোচনায় উঠে এসেছে অফ স্পিনের মায়াবী কুহক ও শৈল্পিক বিশ্লেষণ।

মিরপুরে সফরকারী অস্ট্রেলিয়াকে ২০ রানের হার উপহার দিয়েছিলেন সাকিব, মেহেদী ও তাইজুলরা ঘূর্ণি জাদুতে। তিন টাইগার স্পিনারের মায়াবী বিভ্রমে আড়াল পড়েছিলেন লিয়ন। এবার সাকিবদের ঢেকে দিলেন স্পিন জাদুর পর্দায়। চট্টগ্রামে সিরিজে সমতা আনার ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ৭ উইকেটের স্বপ্নের জয় উপহার দেওয়ার মহানায়ক লিয়ন উইকেট নিয়েছেন ১৩টি। ১৩০ বছরের রেকর্ড ভেঙে গড়েছেন নতুন এক রেকর্ড। লিয়নের রেকর্ড ভাঙা সিরিজটি ব্যক্তিগতভাবে সাকিব আল হাসান, ডেভিড ওয়ার্নারদের যেমন। তেমনই সিরিজটি স্পিনারদেরও। দুই টেস্টের চার ইনিংসে আধিপত্য শুধুই স্পিনারদের। বাংলাদেশের ৪০ উইকেটের ৩২টিই চার অসি স্পিনার লিয়ন (২২), অ্যাস্টন আগার(৭), ও’কিফে(২) ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের(১) এবং সফরকারীদের ৩৩ উইকেটের ২৬টি তিন টাইগার স্পিনার সাকিব (১২), মেহেদী হাসান মিরাজ (৮) ও তাইজুল ইসলামের (৬)।      

মুত্তিয়া মুরলিধরন, শেন ওয়ার্ন, অনিল কুম্বলে, হরভজন সিং, রঙ্গনা হেরাথ, ড্যানিয়েল ভেট্টরি, ল্যান্স গিবস, ডেরেক আন্ডারওড, ক্যারি গ্রিমেট- এক একজন গ্রেট স্পিনার। পরিসংখ্যান কিংবা সাফল্যে তাদের সমতুল্য এখনো হতে পারেননি লিয়ন। কিন্তু মিরপুরের পর চট্টগ্রামে চাপের মুখে যে বিভ্রম জাগানো বোলিং করেছেন, তাতে তাকে সর্বকালের সেরা অফ স্পিনারদের কাতারে ফেলা এখন সময় সাপেক্ষ। প্রথম ইনিংসে নিয়েছিলেন ৭ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে নিলেন ৬ উইকেট। সব মিলিয়ে ১৩ উইকেট। দুই টেস্ট মিলিয়ে উইকেট ২২টি। একজন অসি স্পিনারের এটা রেকর্ড। ১৮৮৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেক সিরিজেই জে জে ফেরিস নিয়েছিলেন ১৮ উইকেট। এতকাল স্মৃতির খাতায় জ্বলজ্বল করতে থাকা ফেরিসকে এখন শুধুই স্মৃতি করে দিলেন লিয়ন। বাংলাদেশের বিপক্ষে কোনো অস্ট্রেলিয়ানের এক সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডও এখন তার। ২০০৩ সালে লেগ স্পিনার স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল নিয়েছিলেন ১৭ উইকেট। অবশ্য ১৪০ বছরের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে দুই টেস্ট ম্যাচ সিরিজে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ড শ্রীলঙ্কান বাঁহাতি স্পিনার রঙ্গনা হেরাথের। ২০১৪ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিয়েছিলেন ২৩ উইকেট। চট্টগ্রামে ১৫৪ রানে ১৩ উইকেট নিয়ে অফ স্পিনকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া লিয়ন অবশ্য ভাগ বসিয়েছেন ইংলিশ ফাস্ট বোলার স্যার ইয়ান বোথামের সঙ্গে। এশিয়ায় যে কোনো দেশের বিপক্ষে কোনো টেস্টে ১৩ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড রয়েছে বোথামের। ৬৯ টেস্টে ২৬৯ উইকেট নেওয়া লিয়ন দুইবার টেস্টে ১০ বা ততোধিক উইকেট নিয়ে আরেক অসি অফ স্পিনার হিউ ট্রাম্বলের পাশে নাম লিখেছেন। গত অক্টেবারে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ যে টেস্টটি জিতেছিল, সেখানে বাংলাদেশের সাকিব-মিরাজ-তাইজুল স্পিনারত্রয়ী নিয়েছিলেন দুই ইনিংসে ২০ উইকেট। এবারও মিরপুরের সাফল্যের কারিগর ছিলেন তিন স্পিনার। মিরপুরে বাংলাদেশ জিতে ২০ রানে এবং চট্টগ্রামে অস্ট্রেলিয়া জয় পায় ৭ উইকেটে। দুই দলের স্পিনাররা মিলে উইকেট নিয়েছেন ৫৮টি। তাহলে বলাই যায় যে, সিরিজটি স্পিনারদের।

সর্বশেষ খবর