শিরোনাম
রবিবার, ১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ব্যাটেই জবাব মুমিনুলের

মেজবাহ্-উল-হক

ব্যাটেই জবাব মুমিনুলের

পচেফস্ট্রুমে দক্ষিণ আফ্রিকান পেস অ্যাটাকের বিপক্ষে প্রত্যয়ী ব্যাটিং করেন মুমিনুল হক। নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দেওয়ার ইনিংসে ড্রাইভ খেলছেন এই বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান —এএফপি

দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজের জন্য বাংলাদেশ দল ঘোষণার সময় সবার শেষে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু উচ্চারণ করেন—‘মুমিনুল হক’!

দলের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যানের নাম কেন তালিকায় সবার শেষে? —এক মিডিয়াকর্মীর এমন প্রশ্নে কিছু অপ্রস্তুত হয়ে যান প্রধান নির্বাচক! ‘এটা কোনো বিষয় নয়, দলে নাম আছে তো’ —এই টাইপের কিছু একটা বলে পরিস্থিতি সামাল দেন প্রধান নির্বাচক!

একই সংবাদ সম্মেলনে মিনহাজুল আবেদিন সাকিব আল হাসান প্রসঙ্গে খানিকটা হতাশার সুরে বলেছিলেন, ‘দল নির্বাচনের সময় আমরা সবার আগে লিখি সাকিবের নাম!’ অর্থাৎ দলে সুযোগ পাওয়া নিয়ে যে ক্রিকেটারের কোনো সংশয় নেই সেই ক্রিকেটারের নামই আগে তালিকায় লেখা হয়। —একথা আর বুঝতে বাকি থাকে না যে মুমিনুলকে দলে নেওয়া হবে কি হবে না তা নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল!

আগের সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তো দলেই ছিলেন না মুমিনুল। তারপর মিডিয়ার চাপে মোসাদ্দেক হোসেনকে বসিয়ে রেখে নেওয়া হয় সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যানকে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের দলে তবু শুরু থেকেই নাম ছিল—সেটাই তো বড় স্বস্তি!

দলে নাম রয়েছে— কিন্তু একাদশে মুমিনুলকে দেখা যাবে তো! আবারও সেই সংশয়! তবে এবার একাদশে জায়গা করে দিতে টিম ম্যানেজমেন্টকে বাধ্য করলেন মুমিনুল। দক্ষিণ আফ্রিকার আমন্ত্রণ একাদশের সঙ্গে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে ৬৮ ও ৩৩ রান করেন। আর গতকাল ব্যাট হাতে সব কিছুর জবাব দিলেন মুমিনুল। দলের সর্বোচ্চ রানের স্কোর আসে তার ব্যাট থেকেই।

৭৭ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। ১২ বাউন্ডারিতে সাজানো এক ইনিংস। গতকাল টেস্ট ক্যারিয়ারের ১২তম হাফ সেঞ্চুরি করেছেন মুমিনুল। 

২৪ টেস্টের ক্যারিয়ার মুমিনুলের। সেঞ্চুরি রয়েছে ৪টি। এক সময় বিশ্বের বর্তমান টেস্ট ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গড় ছিল তার। আশ্চার্য ধারাবাহিকতা দেখে তাকে ডাকা হয় ‘বাংলাদেশের ব্যাডম্যান’ বলে।

মুমিনুল জাতীয় দলের জার্সি এখন ওয়ানডে ও টি-২০ খেলার সুযোগ পান না। এদিকে বাংলাদেশ টেস্টও খেলে কালেভাদ্রে। তাই হঠাৎ করে এসে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা তার জন্য কঠিন হয়ে যায়। সে কারণেই ইদানীং তার মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটে। তারপরেও টেস্টে মুমিনুলের বর্তমান গড় রান ৪৬.৭৯। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গড়। টেস্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গড় সাকিব আল হাসানের—৪০.৩৮। তৃতীয় সর্বোচ্চ গড় ড্যাসিং ওপেনার তামিম ইকবালের —৩৯.৬৫ এবং ‘মি. ডিপেন্ডেবল’ মুশফিকুর রহিমের গড় ৩৫.৩৮।

তারপরেও কেন বার বার মুমিনুলকে দলের বাইরে রাখার চিন্তা করা হয়? কক্সবাজারের এই তারকা ব্যাটসম্যানের সঙ্গে কোচের সম্পর্কটা মধুর নয় বলে! নাকি অন্য কিছু! নেপথ্যে যে ঘটনাই থাকুক না কেন মুমিনুলের কাছে তা বিবেচ্য নয়। তিনি জাত ক্রিকেটার— নিজের জাত চেনাতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

মুমিনুল নিজে হাফ সেঞ্চুরি করার সঙ্গে সঙ্গে তিন তিনটি হাফ সেঞ্চুরি জুটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তৃতীয় উইকেট জুটিতে মুশফিকের সঙ্গে ৬৭ রান, চতুর্থ উইকেটে তামিমের সঙ্গে ৫৫ এবং ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে গড়েছিলেন ৬৯ রানের আরেকটি জুটি। দ্বিতীয় উইকেটে লিটন দাসের সঙ্গেও তার ২০ রানের ছোট একটি জুটি গড়ে উঠেছিল।

মুমিনুলকে বাইশগজে যেতে হয়েছিল ইনিংসের শুরুতেই। ষষ্ঠ ওভারে ওপেনার ইমরুল কায়েস আউট হওয়ার পর উইকেটে যান তিনি। তারপর একপ্রান্ত আগলে রেখে ৬৪তম ওভার পর্যন্ত উইকেটে ছিলেন।

মুমিনুলের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের জন্যই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েও শেষ পর্যন্ত ৩২০ রান করতে পেরেছে বাংলাদেশ। এর আগে প্রোটিয়াদের মাটিতে খেলা চার টেস্টের কোনোটিতে দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নামতে হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকাকে। কিন্তু এ ম্যাচে ঠিকই দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে হচ্ছে প্রোটিয়াদের।

ম্যাচের ফল যাই হোক না কেন এবার যে আর ইনিংস পরাজয় হচ্ছে না এটা ঠিক। সেটাই বা কম কিসে!

তবে টেস্ট বৈচিত্র্যময় এক খেলা। কোন সেশনে কখন যে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে তা কে জানে? প্রথম ইনিংসে ১৭৬ রানে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে যে ব্যতিক্রম কিছু ঘটবে না তা তো বলা যায়! প্রথম ইনিংসের মতো পরের ইনিংসেও যদি মুমিনুলের ব্যাট হাসতে থাকে তাহলে অবিশ্বাস্য কিছু একটা যে ঘটেও যেতে পারে।  অবশ্য এটা খুব প্রত্যাশিতও। কেন না দ্বিতীয় ইনিংসে মুমিনুলকে তো আর পাহাড়সম চাপ নিয়ে ব্যাট করতে হবে না।  প্রথম ইনিংসে রান পাওয়ায় ‘অন্তত’ দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সময় অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে খেলতে পারবেন। আর ফুরফুরে মেজাজে থাকলে মুমিনুলের মতো ব্যাটসম্যানদের পক্ষে ‘মহাকাব্য’ রচনা করা কঠিন কিছু নয়!

সংক্ষিপ্ত স্কোর

দক্ষিণ আফ্রিকা : প্রথম ইনিংস ৪৯৬/৩ (ডি.) ও দ্বিতীয় ইনিংস ৫৪/২ (মুস্তাফিজ ১/৭, শফিউল ১/১৮)।

বাংলাদেশ : প্রথম ইনিংস

৩২০/১০, ৮৯.১ ওভার (লিটন ২৫, মুমিনুল ৭৭, মুশফিক ৪৪, তামিম ৩৯, মাহমুদুল্লাহ ৬৬, সাব্বির ৩০। মহারাজ ৩/৯২)।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর