শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

প্রোটিয়ারা লজ্জায় ডোবাল টাইগারদের

ক্রীড়া প্রতিবেদক

প্রোটিয়ারা লজ্জায় ডোবাল টাইগারদের

দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস তুলেছেন কেশব মহারাজ। সাব্বির রহমানকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলার পর প্রোটিয়া বাঁ-হাতি স্পিনারের উচ্ছ্বাস —এএফপি

টেস্টে বোলারদের জন্য আপ্তবাক্য—প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট নেওয়ার সামর্থ্য থাকতে হবে! ব্যাটসম্যানদের ক্ষেত্রে বিষয়টি ঠিক উল্টো—প্রতিপক্ষের বোলাররা যাতে কোনো ক্রমেই দুই ইনিংসে অলআউট করতে না পারে!

কিন্তু পচেফস্ট্রুম টেস্টে বাংলাদেশের বোলার-ব্যাটসম্যানরা একসঙ্গে ব্যর্থ। সে কারণেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে লজ্জার রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ। গতকাল পঞ্চম দিনে মাত্র ৯০ রানেই গুটিয়ে যায় মুশফিকদের ইনিংস। প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে টেস্টে এক ইনিংসে এটিই বাংলাদেশের সর্বনিম্ন রান। টেস্টে বাংলাদেশের পঞ্চম সর্বনিম্ন স্কোর এটি।

বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোর ৬২। টাইগাররা ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কায় গিয়ে এই লজ্জায় পড়েছিল। তবে ওই ২০০৭ সালের পর বাংলাদেশ আর কখনো ১০০ রানের নিচে অলআউট হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে অনেক বাজে খেললেও এর আগে কখনো ১০০ রানের নিচে অলআউট হয়নি বাংলাদেশ।

পচেফস্ট্রুম টেস্টে প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা যেখানে ৩ উইকেট ৪৯৬ রান সেখানে বাংলাদেশ কিনা অলআউট হয়ে যায় ৩২০ রানে। প্রথম ইনিংসেই যেন ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। মুশফিক বলেন, ‘আমি মনে করি, দ্বিতীয় ইনিংস ছিল ব্যাট করার জন্য সেরা সময়। অনায়াসে ৪০০-৫০০ রান করা যেত। কিন্তু আমরা পারিনি। এই উইকেটে ৫০০ রান করতে না পারলে সেটাকে আমি ভালো বলব না। তবে এটা ঠিক যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে আমরা ভালো করেছিলাম। কিন্তু আমাদের আরও রান দরকার ছিল।’

বাংলাদেশ হেরেছে ৩৩৩ রানে। দুই ইনিংস মিলে মুশফিকরা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসের সমান রানও করতে পারেননি। দুই ইনিংস মিলে ২০ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ করেছে ৪১০ রান। ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে, শেষ ১১৮ রান করতে মুশফিকদের হারাতে হয়েছে ১৫ উইকেট। অর্থাৎ প্রথম ইনিংসের শেষ ৫ উইকেট পড়েছিল ২৮ রানে, আর দ্বিতীয় ইনিংসে ৯০-এ অলআউট!

ক্যাপ্টেন মুশফিক মনে করেন, ব্যাটিংয়ের চেয়েও বেশি বাজে হয়েছে বাংলাদেশের বোলিং। বোলারদের নিয়েই তিনি হতাশা প্রকাশ করেছেন। মুশফিক বলেন, ‘ফ্লাট উইকেটে কিভাবে বল করতে হয় তা আমাদের বোলাররা জানতোই না। যদি উইকেট নাও পায়, তারপরেও সঠিক জায়গায় তো বল ফেলতে হবে! সেটাও করতে পারেনি বোলাররা। বোলারদের নিয়ে আমি সত্যিই হতাশ—প্রথম ইনিংসে তারা একদম ভালো করতে পারেনি।’

পচেফস্ট্রুমে বাংলাদেশের বোলাররা যখন বোলিং করছিলেন তখন মনে হচ্ছিল, এর চেয়ে ফ্লাট উইকেট আর হয় না। কিন্তু যখন দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা বোলিং করেন, তখন মাঝে মধ্যে মনে হচ্ছিল—এটা বুঝি অন্য কোনো উইকেট! মরনে মরকেল ও কাগিসো রাবাদার বোলিংয়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যেন রীতিমতো দিশাহারা হয়ে গিয়েছিল।

তবে এটা ঠিক যে, বাংলাদেশ যখন নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করছিল তখন উইকেটে বোলারদের জন্য কোনো রকম সহায়তা ছিল না। কিন্তু প্রোটিয়া বোলাররা তাদের মেধা খাটিয়ে তামিম-মুশফিকদের ফাঁদে ফেলে আউট করেছেন। তারা ব্যাটসম্যানদের বড় শট নেওয়ার কোনো সুযোগই দেননি। শুধু পেসাররা নয়, স্পিনার কেশব মহারাজও অসাধারণ বোলিং করেছেন। স্পিনে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। যাচ্ছেতাই বোলিং দেখে মুশফিক বলেন, ‘গত ৫ বছরে আমাদের ব্যাটিংয়ের যেভাবে উন্নতি হয়েছে সেভাবে বোলিংয়ের উন্নতি হয়নি এখনো। তাদেরকে ভালো কিছু করার জন্য আরও ক্ষুধার্ত হতে হবে। তাদেরকে অন্তত ঠিক জায়গায় বল ফেলতে হবে। আপনি যদি নিজেই নিজের উন্নতি না চান তাহলে তো কোচ দিয়ে কোনো লাভ হবে না। বোলিং ইউনিটকে আমাদের আরও অনেক কিছু শিখতে হবে।’

আক্ষেপের সুরে মুশফিক বলেন, ‘আমিও তো ছয়টা বলের মধ্যে দুইটা লাইনে ফেলতে পারতাম। প্রথম ইনিংসে বোলাররা আমাকে অনেক হতাশ করেছে। এক সেশনে উইকেট না পান, রানটা আটকে রাখতে পারেন, যেটা দলকে কাজে দেয়। ৫০০-৫৫০ রানের বোঝা নিয়ে খেলা আর ৩০০-৪০০ রানের বিপক্ষে খেলা দুই রকম ব্যাপার। শুধু বোলার নয়, ব্যাটসম্যানদেরও দায় আছে। প্রথম ইনিংসে আমরা অনেক পিছিয়ে গিয়েছি। পুরো  টেস্টে ব্যাটিং-বোলিংয়ে দুটিই খারাপ করেছি।’ তবে এই টেস্টের ফল যত খারাপই হোক না কেন পরের টেস্টে ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখছেন মুশফিক। টাইগার দলপতি বলেন, ‘শেষ কবে আমরা টেস্টে ১০০ রানের নিচে অলআউট হয়েছিলাম, আমার মনে নেই। সব কিছুর পরেও সামনের ম্যাচে আমাদেরকে ভালো খেলতে হবে। পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে এমন পরিস্থিতির পরও আমাদের মানসিকভাবে শক্ত থাকতে হবে।’

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

দক্ষিণ আফ্রিকা : প্রথম ইনিংস ৪৯৬/৩ (ডি.) ও দ্বিতীয় ইনিংস ২৪৭/৬ (ডি.)।

বাংলাদেশ : প্রথম ইনিংস ৩২০/১০ ও দ্বিতীয় ইনিংস ৯০/১০, ৩২.৪ ওভার (ইমরুল ৩২, মুশফিক ১৬, মেহেদি মিরাজ ১৫*। রাবাদা ৩/৩৩, মরকেল ২/১৯,  মহারাজ ৪/২৫)। ফল : দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৩৩ রানে জয়ী

 

সর্বশেষ খবর