বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বড় তিন খেলাতেই ফ্লাডলাইট

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বড় তিন খেলাতেই ফ্লাডলাইট

ফুটবল ও ক্রিকেটের পর এবার হকিতেও ফ্লাডলাইট। এশিয়া কাপের মাধ্যমে বাংলাদেশের হকি রাতে অনুষ্ঠিত হবে — বাংলাদেশ প্রতিদিন

বড় দুই খেলা ফুটবল ও ক্রিকেটে আগেই ফ্লাডলাইট জ্বলে উঠেছিল। বাকি ছিল শুধু হকিতে। সেই স্বপ্নও পূরণ হয়ে গেল। এতদিন দিনের বেলায় প্রিমিয়ার লিগ বা হকির বিভিন্ন আসর হতো। এবার ফুটবল ও ক্রিকেটের পাশাপাশি ফ্লাডলাইটে হকিও অনুষ্ঠিত হবে। অন্য খেলাগুলোও বিভিন্ন ইনডোর স্টেডিয়ামে রাতেই হচ্ছে। হকি জনপ্রিয় খেলা হলেও ফ্লাডলাইটের চিন্তা করেননি কেউ। অথচ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ফ্লাডলাইট অপরিহার্য ছিল। অর্থের কথা চিন্তা করে কর্মকর্তারা উদ্যোগ নেওয়ার সাহস পাননি। অবশ্য ফেডারেশনের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক দেশের হকির উজ্জ্বল নক্ষত্র আবদুস সাদেক অনেক আগেই থেকেই হকির ফ্লাডলাইটের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরছিলেন। বাংলাদেশ ছাড়া প্রায় প্রতিটি দেশে হকি ফ্লাডলাইটে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। খেলোয়াড়রা যেহেতু দেশে দিনের বেলাতেই খেলছেন। সেখানে বিদেশে ফ্লাডলাইটে খেলতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় খাজা রহমতউল্লাহ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর বলেছিলেন, তার বড় দায়িত্ব হকিতে ফ্লাডলাইটের ব্যবস্থা করা। তাছাড়া হকিকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। তিনি বেশ কবার ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। বিষয়টি তারা গুরুত্বসহকারে দেখবেন বলেই খালাস। হকিতে যে ফ্লাডলাইট কতটা গুরুত্ব তা তারা বুঝেও ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। উদ্যোগ নিলে অনেক আগেই মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইট বসানো যেত। ১৯৮২ দিল্লি এশিয়ান গেমসে হকির ফাইনালে প্রথমে গোল করেও ভারত চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের কাছে শোচনীয় হার মেনেছিল। ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী মাঠে বসেই সেই ফাইনাল ম্যাচটি দেখেন। জানতে পারেন ভারতের যে সব প্রদেশ থেকে হকি খেলোয়াড় সৃষ্টি হয় সেখানে ফ্লাডলাইট নেই। এ জন্য ভারত পিছিয়ে যাচ্ছে। এ কথা শুনে ইন্দিরাগান্ধী তাত্ক্ষণিকভাবে নির্দেশ দেন হকির গুরুত্বপূর্ণ ভেন্যুগুলোয় তিনি ছয় মাসের মধ্যে ফ্লাডলাইট দেখতে চান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ তা কি আর উপেক্ষা করা যায়। সেই থেকে ভারতের অধিকাংশ হকি ভেন্যুতে ফ্লাডলাইট বসানো হয়। আন্তর্জাতিক আসরতো বটেই ভারতে এখন স্কুল টুর্নামেন্টও ফ্লাডলাইটে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ হকি ফেডারেশনের অনুরোধ উপেক্ষা করেই চলেছিল। শেষ পর্যন্ত টনক নড়ে সরকারের উচ্চমহলের নির্দেশেই। ২০১৭ অক্টোবরে ঢাকায় এশিয়া কাপ হবে তা অনেক আগেই এশিয়ান হকি ফেডারেশন ঘোষণা দেয়। এর আগে ১৯৮৫ সালেও এশিয়া কাপের আয়োজক হয় বাংলাদেশ। সেবার তত্কালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে ঘাসের মাঠে আসর বসেছিল। হকি ফেডারেশন বার বার তাগাদা দিচ্ছিল ফ্লাডলাইট ছাড়া এশিয়ান হকি ফেডারেশন আয়োজনের অনুমতি দেবে না। ক্রীড়া পরিষদ ভেবেছিল টার্ফ যখন আছে তখন সমস্যা কি? এশিয়ান হকি ফেডারেশন যখন লিখিতভাবে জানিয়ে দেয় ফ্লাড লাইট ছাড়া কোনো অবস্থাতেই এশিয়া কাপ হবে না। তখনি টনক নড়ে ক্রীড়া পরিষদের। ফ্লাডলাইট ছাড়া এত বড় আয়োজনের সুযোগ হারাবে বাংলাদেশ। তা মানতে পারেনি সরকারের উচ্চমহল। হকি ফেডারেশনের সভাপতি বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল আবু এসরার ও সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাদেকদের প্রচেষ্টা সফল হয়। সরকারের নির্দেশেই উঠে পড়ে লাগে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। দরপত্র আহ্বান করে ফ্লাডলাইটের কাজ শুরু করে দেয়। শেষও হয়ে গেছে কাজ। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রীতিম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশের হকিও ফ্লাডলাইটে পা দিয়েছে। এশিয়া কাপের মতো বড় আসর দিয়েই হকির ফ্লাডলাইটের যাত্রা হচ্ছে। যা এতদিন স্বপ্ন, তা এখন বাস্তবে রূপ দিয়েছে। বাংলাদেশের ফুটবলে ফ্লাডলাইট চালু হয়েছে আরেক অভিজ্ঞতা দিয়ে। ১৯৭৬ সালে কিংস কাপে বাংলাদেশ শোচনীয় হারায় দেশে সমালোচনার ঢেউ বয়ে যায়। বাফুফে উপলব্ধি করে আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলতে হলে ফ্লাডলাইট খুবই জরুরি। সরকার অনুমতি দেওয়ায় ১৯৭৭ সালে মার্চের দিকে ঢাকা স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইট বসানোর কাজ শুরু হয়। মাঠের ভিতর ৯টি টাওয়ার বসিয়ে ফ্লাডলাইট লাগানো হয়। কিন্তু মাঠের ভিতরে টাওয়ার বসিয়ে খেলা সম্ভব নয় বলে সেই পরিকল্পনা বাতিল হয়ে যায়। পরে স্টেডিয়ামের বাইরে টাওয়ার বসানোর কাজ শুরু হয়। বাংলাদেশের ফুটবলে ফ্লাডলাইটের যাত্রা হয় ১৯৭৭ সালে আগাখান গোল্ডকাপ দিয়ে। ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেটেও ফুটবল ম্যাচ এখন ফ্লাডলাইটে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ক্রিকেটে এক সময়ে বাংলাদেশের কোনো অবস্থানই ছিল না। নেদারল্যান্ড, আরব আমিরাত ও কেনিয়াও বাংলাদেশের আগে বিশ্বকাপ খেলে। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের ক্রিকেটের চেহারা পাল্টে যায়। ১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। বিশ্বক্রিকেটে বাংলাদেশ এখন মর্যাদাশীন আসনে বসে গেছে। ক্রিকেটে বাংলাদেশে ফ্লাডলাইটে যাত্রা ১৯৯৮ সালে। এখন যেটা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ১৯৯৮ সালে তা শুরু হয়েছিল। নক আউট মিনি বিশ্বকাপ নামকরণেই। প্রথম আসরটি হয় ঢাকা বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই। এই আসর থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটে ফ্লাডলাইটের সূচনা হয়।

সর্বশেষ খবর