দ্বিপক্ষীয় সিরিজ সব সময়ই স্বাগতিক দল নিজেদের মতো করে উইকেট তৈরি করে বাড়তি সুবিধা নেয়। বাংলাদেশ দল দক্ষিণ আফ্রিকায় গেছে সে ভাবনা মাথায় রেখেই। কিন্তু পচেফস্ট্রুমে প্রোটিয়ারা উল্টো ‘উপমহাদেশের মতো’ উইকেট তৈরি করে বাংলাদেশকে বিভ্রান্ত করেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার কৌশল বুঝতে না পেরে বাংলাদেশও বোকা বনে গেছে। নিজেদের মতো উইকেট পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি মুশফিকরা। তবে পচেফস্ট্রুমের মতো ব্লুমফন্টেইনেও যে প্রোটিয়ারা একই কাজ করতে পারে তা কিন্তু নয়। সেখানে ঠিকই তাদের নিজেদের মতো বাউন্সি উইকেটই তৈরি করে রেখেছে!
এমন টেস্টে বাংলাদেশের জন্য ভালো করাটা কঠিন। এমনিতেই সাকিব আল হাসান নেই। প্রথম টেস্টে পরতে পরতে অনুভূত হয়েছে তার অভাব। এই টেস্টে ইনজুরির কারণে খেলতে পারবেন না আরেক তারকা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। এ যেন ঠিক ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’!আজ শুরু হচ্ছে ব্লুমফন্টেইন টেস্টে। এই ম্যাচে অনেক সতর্ক মুশফিকুর রহিম। পচেফস্ট্রুমের মতো এখানেও যাতে ছোট ছোট ভুল আর না হয় সেদিকে দৃষ্টি তার। মুশফিক বলেন, ‘ভুল অনেক সময়ই হয়। হয়তো প্রথম টেস্টে আমরা ছোট ছোট কিছু ভুলের কারণে খুবই খারাপ করেছি। আমাদের সামনে এখনো একটা সুযোগ আছে। আর এখানে টাফ কন্ডিশন হলেও এখানে আমরা খেলেছি, যদিও সেটা আট বছর আগে। তখন দলও অন্যরকম ছিল। তবে আমাদের চেষ্টা থাকবে যাতে দ্রুত ভুলগুলো শুধরে নিতে পারি। যেন একটা ভালো টেস্ট ম্যাচ উপহার দিতে পারি।’
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে খেলাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তাই যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ দল। প্রথম টেস্টের ভুল ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে এ টেস্টে ভালো করার ব্যাপারে প্রত্যয়ী মুশফিক। খেলা কোথায় হচ্ছে, উইকেট কেমন —এ নিয়ে বাড়তি টেনশন করছেন না টাইগার দলপতি। দক্ষিণ আফ্রিকার দেওয়া চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে প্রস্তুত মুশফিক, ‘যখন আপনি দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলতে আসবেন সেটা অবশ্যই একটা চ্যালেঞ্জ। এই উইকেটটা ওদের হোম কন্ডিশনে যেমন উইকেট থাকে তেমনই। আমরাও তেমনটাই ভেবেছিলাম। হয়তো প্রথম টেস্টের উইকেটটা আমাদের মতো হলেও আমরা নিজেকে মেলে ধরতে পারিনি। তার মানে এই নয়, ওদের হোম কন্ডিশনের কঠিন উইকেটে আমরা খেলতে পারব না। সবাই ভেবেছিল আমরা প্রথম টেস্টে অনেক ভালো করব। কিন্তু সেটা আমরা করতে পারিনি।’
দলে সেরা দুই ব্যাটসম্যান না থাকায় বাকিদের নিতে হবে বাড়তি দায়িত্ব। পার্টনারশিপ বড় করতে হবে। উইকেট বিলিয়ে দেওয়া যাবে না। সতীর্থদের জানিয়ে দিয়েছেন নিজের পরিকল্পনা। তারপরেও তামিমকে এ ম্যাচে মিস করবেন মুশফিক, ‘দলে যখন অনেক বড় খেলোয়াড় থাকছেন না সেটা অবশ্যই দুঃখজনক। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় একটা বিপত্তি। এখানে তামিমকে খুবই দরকার ছিল। প্রথম টেস্টে আমরা বাজেভাবে হেরেছি। তারপরেও এটা তো ঠিক সময় কারও জন্য থেমে থাকে না। ইনজুরির ওপর তো আর কারও হাত নেই। চেষ্টা এটাই থাকবে যে, দলে অন্য যারা আছে তারা যদি সুযোগগুলো কাজে লাগায় তবে ভালো কিছু হবে আশা করি। ব্যাটসম্যানদের বড় পার্টনারশিপ করতে হবে।’ ব্লুমফন্টেইনে বাংলাদেশ সবশেষ খেলেছে ২০০৮ সালে। যে ম্যাচে প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে ন্যূনতম প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলে পারেনি বাংলাদেশ। বড় পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছিল ব্যাটসম্যানদের। ওই ম্যাচে দুই ইনিংস মিলে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যান হাফ সেঞ্চুরিও করতে পারেননি। দলীয় রান কোনো রকমে দেড়শ (প্রথম ইনিংসে-১৫৩, দ্বিতীয় ইনিংসে- ১৫৯) হয়েছে! সেই মাঠে এই টেস্টে সেরা দুই ব্যাটসম্যানকে ছাড়া মাঠে নেমে কতটা ভালো করতে পারবে বাংলাদেশ?
তবে ব্যাটসম্যানদের জন্য একটুখানি স্বস্তি এখানেই যে, দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা তিন বোলার ডেল স্টেইন, ভারনন ফিলান্ডার ও মরনে মরকেল ইনজুরিতে। স্টেইন-ফিলান্ডার আগের টেস্টটি খেলতে পারেননি। কিন্তু মরনে পচেফস্ট্রুমেই ইনজুরিতে পড়েছেন।
তাতে কি? দলের নামটা যে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সিতে যেই নামুক সেই তো সিংহ বনে যায়! তাই সিংহদের সামনে দাঁড়াতে হলে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদেরও বাঘ হতে হবে! তা না হলে লড়াই আর জমবে না! সেই একই চিত্রনাট্য আবার নতুন করে মঞ্চস্থ হবে। এখন দেখা যাক, মুশফিকরা নতুন কিছু করে দেখাতে পারেন কিনা!