মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

কোর্টনি ওয়ালশের কাজটা কী!

মেজবাহ্-উল-হক

কোর্টনি ওয়ালশের কাজটা কী!

টেস্টে বাজে বোলিংয়ের জন্য মুশফিকুর রহিম বোলারদের ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছেন। প্রথম ওয়ানডেতে ১০ উইকেটে হারার পর হতাশা প্রকাশ করেছেন মাশরাফি বিন মর্তুজাও। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতেও ব্যর্থ বাংলাদেশের পেসাররা! প্রথম ওয়ানডেতে যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার তরুণ পেসার কাগিসো রাবাদা একাই ৪ উইকেট নেন সেখানে বাংলাদেশের চার পেসার মিলে একটা উইকেটও নিতে পারেননি।

ইনজুরির কারণে কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান এই ম্যাচে ছিলেন না। সাম্প্রতিক যে পারফরম্যান্স মুস্তাফিজ থাকলেও যে ম্যাচের ফল অন্য রকম হতো তা বলা কঠিন। তাসকিন আহমেদ ৮ ওভার বোলিং করেছেন দিয়েছেন ৬১ রান। ওভার প্রতি ৭.৬২। বাংলাদেশের এই গতি তারকা ৪৮ বলের মধ্যে ১৬টি ডট বল করেছেন। পাশাপাশি একটি ছক্কা ও ৬টি বাউন্ডারিও হজম করতে হয়েছে তাসকিনকে।

রুবেল হোসেন ৬ ওভার বোলিং করে রান দিয়েছেন ৩৭। ওভার প্রতি ৬.১৬। বাংলাদেশের তারকা এই বোলার তার ৩৬টি ডেলিভারির মধ্যে ১৫টি ডট করেছেন। তার বলে বাউন্ডারি হয়েছে ৫টি।

এই ওয়ানডেতে অভিষেক হয়েছে তরুণ পেস অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের। কোথায় আগুনে বোলিং করবেন তা না উল্টো ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে এই তরুণ তুর্কিকে। মাত্র ৫ ওভারেই তিনি দিয়েছেন ৪৬ রান। ওভার প্রতি ৯.২০। সাইফুদ্দিন ৩০ বলের মধ্যে মাত্র ৮টি ডট করেছেন। তবে ৮টি বাউন্ডারীও হজম করতে হয়েছে তাকে। দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনারের ব্যাটিং ঝড়টা সবচেয়ে বেশি তার ওপর দিয়েই গেছে।

চার পেসারের মধ্যে তুলনামূলক কিছুটা ভালো করেছেন অধিনায়ক মাশরাফি। ৮.৫ ওভার বোলিং করে দিয়েছেন ৫০ রান। সবচেয়ে বেশি ডট বলও করেছেন তিনি। ৫৩ বল করে ২১টি ডট দিয়েছেন। কিন্তু তিনিও কোনো উইকেট শিকার করতে পারেননি।

বাংলাদেশের উইকেট পেস সহায়ক নয়। তাই পেসাররা দেশের মাটিতে ভালো করতে না পারলেও কিছু যায় আসে না— পেসারদের ভাবনাটা এমনই! তাই বলে দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটেও পেসারদের এমন নাকাল অবস্থা। বাংলাদেশের দেওয়া ২৭৯ রানের বিশাল টার্গেটে কিনা কোনো উইকেট না হারিয়েই পৌঁছে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা! এবার ব্যাটসম্যানদের খুবই বেশি দোষ দেওয়ার উপায় নেই। এটা ঠিক যে, বাংলাদেশের স্কোরটা খুব বেশি ছিল না। তারপরেও ২৭৮ রান দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর। প্রথমবারের মতো প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু বোলারদের ব্যর্থতায় অর্জনের অধ্যায়টা ঢেকে গেল।

দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার অপরাজিত ২৮২ রানের অপরাজিত পার্টনারশিপ গড়লেন, বাংলাদেশের পেসাররা কিছুই করতে পারলেন না! আচ্ছা, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে যদি পেসাররা ভালো করতে না পারেন তাহলে তারা কোথায় গিয়ে ভালো করবেন?

‘বিশ্বসেরা’ পেস বোলিং কোচ বাংলাদেশ দলে! ক্যারিবীয় কিংবদন্তি কোর্টনি ওয়ালশকে নিয়ে এসেও কোনো কাজ হচ্ছে না! কোথায় বাংলাদেশ দলের পেসাররা উজ্জীবিত হবেন, তা না ওয়ালশকে পেয়ে পেসারদের পারফরম্যান্সের গ্রাফটা যেন আরও নিচের দিকে যাচ্ছে?

কোর্টনি ওয়ালশ ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ দলের বোলিং কোচের দায়িত্ব নিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ মোট ১৯টি (পরিত্যক্ত দুই ওয়ানডেসহ ২১টি) ওয়ানডে খেলেছে। তার মধ্যে ১০টি ম্যাচই খেলেছে উপমহাদেশের বাইরে। ওয়ালশের অধীনে পেস কন্ডিশনে বেশি ম্যাচ খেলার পরও বাংলাদেশের পেসারদের পারফরম্যান্সের গ্রাফটা নিম্নমুখী।

অথচ ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পেছনে বড় অবদান ছিল পেসারদের। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে রুবেলের সেই ভয়ঙ্কর শেষ স্পেলের কথা বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমিকদের ভোলার কথা নয়। বাকি দুই পেসার তাসকিন ও মাশরাফিও দুর্দান্ত বোলিং করেছেন।

এখনো দলে সেই মাশরাফি, তাসকিন, রুবেলই রয়েছেন কিন্তু পারফরম্যান্স হতাশাজনক। কোথায় কিংবদন্তি পেসারকে কাছে পেয়ে বাংলাদেশের পেসাররা আরও উজ্জীবিত হবেন, তা না যেন বাংলাদেশের পেস আক্রমণ উল্টো পথে হাঁটছে?

শুধু ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল কেন, ঘরের মাঠে বাংলাদেশ যে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথমবারের মতো সিরিজ জিতেছে সেখানেও বড় অবদান ছিল পেসাররা। ভারতকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন এক মুস্তাফিজই। তাসকিনের বলে সে কী ধার? কিন্তু এখন সেই পেসারদের বোলিংয়ের এমন অবস্থা কেন?

তাসকিন লাইন খুঁজে পান না। মুস্তাফিজের বলে আর আতঙ্ক ছড়ায় না। রুবেলও কেমন যেন গড়পড়তা বোলিং করছেন। বাংলাদেশ দলের পাইপলাইনেও আতঙ্ক ছড়ানোর মতো কোনো পেসার নেই। তাহলে কোর্টনি ওয়ালশকে নিয়ে এসেছে আমাদের পেস বোলিংয়ে দৃশ্যমান কী উন্নতি হয়েছে?

ক্যারিবীয় কিংবদন্তিকে কি শুধু শো-পিস হিসেবে দলে রাখা হয়েছে? দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে পেসারদের যাচ্ছেতাই বোলিংয়ের পরও প্রশ্ন উঠতেই পারে—দলে কোর্টনি ওয়ালশের কাজটা কী?

সর্বশেষ খবর