রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

শেষ ভালোর অপেক্ষা

মেজবাহ্-উল-হক

শেষ ভালোর অপেক্ষা

বাংলাদেশের তরুণ অলরাউন্ডার সাইফুদ্দিনের সেলফিতে বন্দী দক্ষিণ আফ্রিকার মারকুটে ব্যাটসম্যান এ বি ডি ভিলিয়ার্স

টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে জয় তো দূরের কথা আফসোস করার মতোও পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকা এক তরফাভাবে জিতেছে। টাইগারদের কোনো সুযোগই ছিল না। কিন্তু প্রথম টি-২০তে ছিল ভিন্ন চিত্র। হারলেও বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছে। প্রোটিয়াদের রানের পাহাড় তাড়া করে জয়ের খুব কাছে চলে গিয়েছিলেন সাকিবরা। এমন ম্যাচে হেরে যাওয়ায় সবার মাঝে তৈরি হয়েছে আফসোস—আর একটুখানি ভালো খেললেই ম্যাচের চিত্রনাট্য পাল্টে যেত!

এমন হারে একটা বড় সান্ত্বনাও আছে—আগের ম্যাচের মতো গো হারা হয়নি বাংলাদেশের। দক্ষিণ আফ্রিকাকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। এমন হারে কোনো লজ্জা নেই। সমান তালে লড়াই করায় তৃপ্তি আছে।

ব্লুমফন্টেইনে ২০ রানে হারলেও ম্যাচটি ছিল আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার ম্যাচ। টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে টাইগারদের পারফরম্যান্স ছিল যাচ্ছেতাই। ক্রিকেটার কেমন যেন হতাশায় ভুগছিলেন। কিন্তু টি-২০তে তারা ভীষণ উজ্জীবিত। বাংলাদেশ দেখিয়ে দিয়েছে তাদের সামর্থ্য আছে। টাইগাররা যে জিততে পারে বা পারবে সেই ইঙ্গিত ছিল ওই ম্যাচেই। ব্লুমফন্টেইনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগতে পারে আজ পচেফট্রুমে। এই ভেন্যুতেই টেস্ট সিরিজ দিয়ে সফর শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের। সেই ভেন্যুতেই আজ সফরের শেষ ম্যাচ খেলতে নামছে টাইগাররা।

দুই টেস্ট, তিন ওয়ানডে এবং প্রথম টি-২০ ম্যাচটিও হেরেছে বাংলাদেশ। আজকের ম্যাচে টাইগারদের আর হারানোর কিছু নেই। বরং পাওয়ার আছে অনেক কিছু। জিততে পারলে টি-২০ সিরিজটি ড্র হবে। আবার জয় দিয়েই বিদায় নিতে পারবে বাংলাদেশ। দেশে ফেরার আগে অন্তত টাইগারদের রেকর্ডবুকে কিছু প্রাপ্তি যোগ হবে।

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাংলাদেশ দলের বেশ কিছু দুর্বলতা ফুটে উঠেছে। পেস আক্রমণে ধার নেই বললেই চলে। প্রথম টি-২০তে যেখানে পেস আক্রমণ দিয়েই সাফল্য পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা সেখানে অসহায় ছিলেন বাংলাদেশের পেসাররা। দক্ষিণ আফ্রিকার পতন ঘটা ৪ উইকেটের মধ্যে মাত্র একটি উইকেট শিকার করতে পেরেছিলেন পেসাররা। অথচ দলে ছিল চারজন পেসার। সাইফুদ্দিন দুর্দান্ত ব্যাটিং করলেও বোলিংয়ে ছিলেন নিষ্প্রভ। তাসকিন আহমেদ ও শফিউলের পারফরম্যান্স ছিল যাচ্ছেতাই। তবে ভালো বোলিং করেছেন রুবেল হোসেন। একটি উইকেটও তিনিই শিকার করেছিলেন। বাকি তিন উইকেট পেয়েছিলেন স্পিনাররা। তাই আজ শেষ টি-২০তেও ভরসা স্পিনেই।

মেহেদী হাসান মিরাজ চার ওভারে ৩১ রান দিয়ে নিয়েছেন দুই উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকার ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান হাশিম আমলাকে উইকেটে থীতুই হতে দেননি। মাত্র তিন রানেই তাকে বোকা বানিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন সাজঘরে। এবি ডি ভিলিয়ার্সকে ৪৯ রানে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমলা উইকেটে সেট হয়ে গেলে কিংবা ডি ভিলিয়ার্সের হাফ সেঞ্চুরি পূরণ হয়ে হলে প্রোটিয়াদের স্কোর আরও বড় হতে পারতো। কিন্তু মিরাজ তাদের থামিয়ে দিয়েছেন। এ ম্যাচেও মিরাজের ওপর থাকবে গুরু দায়িত্ব।

প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের আটকে রাখতে পারেননি সাকিবও। তিনিও ৩ ওভারে দিয়েছেন ২৮ রান। তবে প্রোটিয়া দলপতিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।  উইকেট না পেলেও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৩ ওভারে দিয়েছেন ২৩ রান। প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের আটকাতে হলে স্পিনে ভালো করার বিকল্প নেই। দায়িত্ব সাকিব-মিরাজ-মাহমুদুল্লাহকেই নিতে হবে।

বাংলাদেশ দলে বড় স্বস্তি হচ্ছে স্বরূপে ফিরেছেন সৌম্য সরকার। আগের ম্যাচে অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন। তামিমের অভাব বুঝতেই দেননি এই ড্যাসিং ওপেনার। লোয়ার অর্ডারে তরুণ সাইফুদ্দিনের ব্যাটিং ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু তিন সিনিয়র মুশফিক, সাকিব ও মাহমুল্লাহ রান করতে পারেননি। এ ম্যাচে যদি তরুণদের সঙ্গে সিনিয়ররাও জ্বলে ওঠে তবে অন্য চিত্র দেখা যেতে পারে।

শক্তিমত্তায় বাংলাদেশের চেয়ে খুব বেশি এগিয়ে নেই দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে কন্ডিশনের কারণে তারা বাড়তি সুবিধা পাবেন। কিন্তু টাইগাররা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারলে জয় অসম্ভব নয়।

আগের ম্যাচে টাইগারদের শরীরীভাষা দেখেই মনে হয়ে বেশ উজ্জীবিত। আজকের ম্যাচেও যদি নতুন অধিনায়ক সাকিব ক্রিকেটারদের একইভাবে অনুপ্রাণিত করতে পারেন, সেসঙ্গে ছোট ছোট ভুলগুলো শোধরানো যায় তাহলে সফরের শেষটা ‘ভালো’ হতে বাধ্য! এই শেষ ভালোর অপেক্ষাতেই এখন বাংলাদেশ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর