রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ফুটবলার সৃষ্টির পথ কোথায়

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ফুটবলার সৃষ্টির পথ কোথায়

অনূর্ধ্ব-১৮ সাফ ফুটবলে মাঠ কাঁপালেও প্রিমিয়ার লিগে অধিকাংশ ম্যাচে জাফর ইকবাল বসে ছিলেন সাইডবেঞ্চে

পেশাদার লিগে বিদেশি ফুটবলারের সংখ্যা কমানো হয়েছে। আগে যেখানে চারজন করে খেলত, এবার সেখানে প্রতিটি দলে দুজন করে বিদেশি খেলছেন। ক্লাবগুলোর অনুরোধ ছিল এবার অন্তত তিনজন করে বিদেশি খেলানোর। বাফুফে তা শোনেনি, লিগ কমিটির চেয়ারম্যান সালাম মুর্শেদীর বক্তব্য ছিল দেশের ফুটবলের স্বার্থের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চারজন করে বিদেশি খেলায় স্থানীয় ফুটবলাররা মাঠে নামতে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে ক্ষতি হচ্ছে দেশের ফুটবল। বিদেশি কমানোয় লোকাল ফুটবলাররা মাঠে নামার সুযোগ পাবে। এতে করে নতুন প্রতিভার সন্ধান মিলবে। নতুন ফুটবলার সৃষ্টি জরুরি হয়ে পড়েছে।

সালামের কথায় অনেক যুক্তি রয়েছে। ফুটবলে এতটা সংকটাপন্ন অবস্থা যে নতুন ফুটবলারের সন্ধানই মিলছে না। জাতীয় দল গড়তে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। ভালো মানের খেলোয়াড় নেই বলে ফলও হচ্ছে নাজুক। আসলে নতুন ফুটবলার সৃষ্টি না হওয়ার পেছনে বড় কারণ হচ্ছে অধিকাংশ জেলাতেই ফুটবলের দেখা নেই। বাদল রায়, সালাম মুর্শেদী, শেখ মো. আসলাম, মোনেম মুন্না, রুমি, ইলিয়াস, মামুন জোয়ারদার, জোসিদের মতো তারকা ফুটবলারের দেখা মিলেছিল ঢাকার বাইরে থেকে। এক সময়ে কর্মকর্তাদের কাজ ছিল জেলায় জেলায় লিগ পর্যবেক্ষণ করা। পছন্দ হলেই ঢাকা আনা হতো খেলোয়াড়দের। আসলামরা তারকার খ্যাতি পেয়েছিলেন এভাবেই।

বিদেশি ফুটবলারের সংখ্যা কমেছে। কিন্তু প্রথম পর্বে এমন কোনো উদাহরণ কি দেওয়া যাবে—ওই স্থানীয় ফুটবলারের পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতো। এটা ঠিক আগের চেয়ে স্থানীয় খেলোয়াড়দের গোলের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু আস্থা কি পাওয়া যাচ্ছে? পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে থাকা চার ক্লাবের কথা বলা যাক। শিরোপা রেসে তারা আছে বিদেশিদের কারণেই। এতে করে হয়তো স্থানীয় ফুটবলাররা মনোক্ষুণ্ন হতে পারেন। কিন্তু মাঠ কাঁপানো বা ভরসা পাওয়া যায় এমন স্থানীয় খেলোয়াড় খুঁজে পাওয়া যাবে কি? স্থানীয় ফুটবলাররা যদি সেভাবে জ্বলে উঠতে না পারে তাহলে পেশাদার লিগে বিদেশি কমিয়ে লাভ হলো কি? এটাও ঠিক এই ফল এক মৌসুমে পাওয়া যাবে না। ফুটবলার বের হতে সময় নেবে। কথা হচ্ছে এক পেশাদার লিগ থেকেই কি প্রতিভার সন্ধান মিলবে। আগে জেলায় জেলায় লিগ। হতো শেরেবাংলা জাতীয় ও সোহরাওয়ার্দী যুব চ্যাম্পিয়নশিপ । নতুন খেলোয়াড়ের ছড়াছড়ি ছিল। ১৯৭৭ সালে মোহামেডানের ছিল সংকটাপন্ন অবস্থা। শক্তিশালী দল গড়েও সুবিধা করতে পারছিল না। লিগে আবাহনী অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। মোহামেডান হয় সপ্তম।

আগাখান গোল্ড কাপে দলের অনেক খেলোয়াড়ই খেলতে চাচ্ছিলেন না। খেলোয়াড় সংকটে পড়ে যায় মোহামেডান। উপায় না দেখে রংপুর থেকে আনা হয় মোসাব্বের নামে তরুণ এক ফুটবলারকে। একই টুর্নামেন্টে যোগ দেন কুমিল্লার বাদল রায়। ঢাকার বাইরে থেকে এসে দুজনায় চমৎকার পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেন। জাতীয় দলের খেলোয়াড় নিয়ে গড়া অল ইন্ডিয়া দলকে ২-১ গোলে পরাজিত করে মোহামেডান। ওই ম্যাচে ৩২ গজ দূর থেকে মোসাব্বের অসাধারণ এক গোল করেন। যা এখনো দেশের ফুটবল ইতিহাসে সেরা গোলের একটি।

উদাহারণ দেওয়ার বড় কারণ হচ্ছে আগে ফুটবলার খোঁজার পথ উন্মুক্ত ছিল। এখন কি সেই অবস্থা আছে। আশির দশকে লিগে চারজন বিদেশি খেলতেন। তারপরও নতুন নতুন ফুটবলারের সন্ধান মিলত। নালজেগার, বিজন তাহেরী, এমেকা, ঝুকভ, পলিনকভদের মতো বিদেশি থাকার পরও যোগ্যতা দিয়ে নিজেদের চেনাতে পেরেছেন জুয়েল রানা, বরুন, আয়াজরা। সুতরাং বিদেশিরা কখনো স্থানীয় খেলোয়াড় বের হওয়ার পেছনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।

এখানে ফুটবলে অচলাবস্থায় বড় ফ্যাক্টর। জেলার জেলার ফুটবলে স্থবিরতা। খেলোয়াড় সৃষ্টি হবে কীভাবে? পেশাদার লিগের প্রথম পর্ব শেষ। দ্বিতীয় দফায় দলবদলের পর দ্বিতীয় পর্ব মাঠে গড়াবে। নতুন খেলোয়াড় টানতে এখন সবাই ব্যস্ত।  শেখ জামাল, ঢাকা আবাহনী, চট্টগ্রাম আবাহনী, সাইফ স্পোর্টিং, শেখ রাসেল ও মোহামেডানের চোখ নতুনদের দিকে। চোখ বলতে তারা নতুন বিদেশিদের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। স্থানীয় খেলোয়াড়দের চিন্তা মাথায় আনছে না। এটাই স্বাভাবিক যাদের ওপর ভরসা করা যায় তাদেরইতো গুরুত্ব দেবে। আর লোকালদের পাবেই বা কীভাবে? সেই মানের খেলোয়াড় কি আছে? সালামরা বিদেশির সংখ্যা কমিয়েছে। এভাবে কি প্রতিভার সন্ধান মিলবে। যতদিন না ঢাকার বাইরে ফুটবল সচল হবে তত দিন এই দুর্দশা কাটবে না।  

 

সর্বশেষ খবর