রবিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

শুরুতেই ধরাশায়ী চ্যাম্পিয়নরা

ক্রীড়া প্রতিবেদক, সিলেট থেকে

শুরুতেই ধরাশায়ী চ্যাম্পিয়নরা

অপরাজিত ৬৯ রান করেছেন সিক্সার্সের ব্যাটসম্যান উপুল থারাঙ্গা। ৪৮ বলের ইনিংসে ২ ছক্কা ও ৫ বাউন্ডারি। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচের ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ পুরস্কারও জিতেছেন এই লঙ্কান ওপেনার — রোহেত রাজীব

বিপিএলে প্রথম খেলছে সিলেট সিক্সার্স। খেলতে নেমেই বাজিমাত! ইতিহাসের সোনালি পাতায় চিরস্থায়ীভাবে নিজেদের নাম লিখে নিয়েছে অবিশ্বাস্য ও দুরন্ত ক্রিকেট খেলে। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে ‘আন্ডারডগ’ দলটি ৯ উইকেটের আকাশসম ব্যবধানে হারিয়েছে গত আসরের চ্যাম্পিয়ন ঢাকা ডায়নামাইটসকে। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের আকাশ থেকে মাটিতে নামিয়ে আনতে ব্যাট হাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন সিলেটের দুই বিদেশি উপুল থারাঙ্গা ও আন্দে  ফ্লেচার।   ইতিহাসের সাক্ষী হতে গতকাল সিলেটের সব রাস্তা হয়ে উঠেছিল একমুখী। ছোট-বড় সবার গন্তব্য ছিল লাক্কাতুরা চা বাগান আর সবুজে ঘেরা সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। প্রিয় দলের প্রিয় ক্রিকেটারদের সমোস্বরে উৎসাহ দিতে গোটা সিলেট যেন ভেঙে পড়েছিল শহরের বাইরে পাহাড় কেটে বানানো স্টেডিয়ামে। ভাগ্যবানরা টিকিট কেটে ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছেন। টিকিট না পেয়ে হতাশায় ভেঙে পড়া বাকি ক্রিকেটপ্রেমীরা প্রকৃতির সৌন্দর্য্য উপভোগ করে প্রিয় সিলেট সিক্সার্সের জয়কে বুকে নিয়ে ফিরে গেছেন নিজ নিজ আবাসে।

সিলেট সিক্সার্স-ঢাকা ডায়নামাইটস ম্যাচ দিয়েই বর্ণাঢ্য উদ্বোধন হয়েছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের। বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য ভিআইপি গ্যালারি। ‘আসাম-বাংলো’ প্যাটার্নের ভিআইপি গ্যালারি দূর থেকে মনে করে দেয় সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের কথা! ভিআইপি গ্যালারির ডান পাশে টিলা কেটে বানানো গ্যালারি এবং বা পাশে দ্বিতল গ্যালারি- স্টেডিয়ামের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে হাজারগুণ। এমন নয়ন জুড়ানো, মনভোলানো স্টেডিয়ামে বসে গতকাল ইতিহাসের সাক্ষী হতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোরাশ গেয়েছেন সিলেটের জয়গান গেয়ে।

ম্যাচ শুরুর আগে তারকাদ্যুতি, সামর্থ্য এবং পরিসংখ্যানের বিচারে স্বাগতিক সিলেটের চেয়ে ঢেল এগিয়েছিল ঢাকা। দলে কুমার সাঙ্গাকারা, সাকিব আর হাসান, ইভিন রুইস, কিয়েরন পোলার্ডদের মতো বারুদ ক্রিকেটারে ঠাঁসা। বিপরীতে সিলেটের পরিচিত ক্রিকেটার উপল থারাঙ্গা, নাসির হোসেন, সাব্বির রহমান। এমন বৈপরীত্য শক্তির ম্যাচটি দিনশেষে একপেষেই হয়েই সমাপ্তি রেখা স্পর্শ করেছে। সিলেটের পরিকল্পিত ক্রিকেটের কাছে হেরেছে তারকা খ্যাতিতে উড়তে থাকা ঢাকা। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের ২০ ওভারে ১৩৬ রানে বেঁধে ফেলতে বল হাতে ‘ভীম’ হয়ে উঠেছিলেন নাসির, আবুল হাসান রাজু, লিয়াম প্লাঙ্কেটরা। ধীরগতির উইকেটের আচরণকে কাজে লাগাতে শুরুতেই বোলিংয়ে আসেন অধিনায়ক নাসির। ম্যাচের প্রথম ওভারেই স্পিনের ঘূর্ণিতে সাঝঘরে ফেরান মেহেদি মারুফকে। এরপর অবশ্য দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে লুইস ও সাঙ্গাকারা ৫৪ রান যোগ করে ঢাকাকে একটি শক্ত ভিত দেন। কিন্তু পরবর্তীতে আর কোনো জুটি গড়ে না উঠায় ২০ ওভারে ডায়নামাইটসের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৩৬। টি-২০ ক্রিকেটে যা বড্ড মামুলি স্কোর। ঢাকার পক্ষে সর্বোচ্চ ৩২ রান করেন সাঙ্গাকারা। ২৮ বলের ইনিংসটিতে ছিল ৩টি চার ও  একটি ছক্কা। লুইস ২৬ রান করেন ২৪ বলে এবং অধিনায়ক সাকিব ২৩ রানের ইনিংস খেলেন ২১ বলে ১ চারে। শেষ দিকে ডেলপোর্ট ১৩ বলে ২০ রান করলে ঢাকা ডায়নামাইটসের স্কোর সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছায়। সিলেটের বোলাররা এতটাই নিয়ন্ত্রিত ছিলেন যে, ঢাকার ইনিংসে চার ছিল মাত্র ৮টি ও ছক্কা ছিল ৩টি! টার্গেট ওভার প্রতি প্রায় ৭! সিলেটের দুই ওপেনার থারাঙ্গা ও ফ্লেচার ৬ ওভারের পাওয়ার প্লেতে ৫১ রান তুলে ম্যাচ থেকে ঢাকাকে ছিটকে দেন। অবশ্য ব্যক্তিগত ২১ রানে থারাঙ্গা রান আউটের সুযোগ দিয়েছিলেন। জীবন পেয়ে ৬৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন লঙ্কান ক্রিকেটার। থারাঙ্গার ৪৮ বলের ম্যাচ সেরা ইনিংসটি সাজানো ছিল ৫ চার ও ২ ছক্কায়। লঙ্কান ক্রিকেটার এতটাই আক্রমণাত্মক মেজাজে ব্যাটিং করেছেন যে, তার ব্যাটিং আগ্রাসনে ঢাকার অধিনায়ক সাকিব সাত বোলার ব্যবহার করেন। ম্যাচে যখন ১০ উইকেটের জয় তুলে নেওয়া সময়ের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল, তখনই ইংলিশ লেগ স্পিনার আদিল রশিদকে লং অন দিয়ে সীমানার বাইরে আছরে ফেলতে যেয়ে সাজঘরে ফিরেন সিলেটের ক্যারিবীয় ওপেনার ফ্লেচার। ৬৩ রানের ইনিংসটিতে ছিল ৫টি চার ও ২ ছক্কা। সিলেটের দুই ওপেনারের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে অভিষেক ম্যাচটিকে রাঙিয়ে মাঠ ছাড়ে সিলেট সিক্সার্স ১৯ বল হাতে রেখে।

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ডায়নামাইটস : ১৩৬/৭, ২০ ওভার। সিক্সার্স : ১৩৭/১, ১৬.৫ ওভার।

রাজশাহী : ১৫৪/৮, ২০ ওভার। রংপুর : ১৫৫/৪, ১৮.৫ ওভার।

সর্বশেষ খবর