রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ফুটবলে নতুনত্ব আনতে চায় বসুন্ধরা কিংস

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ফুটবলে নতুনত্ব আনতে চায় বসুন্ধরা কিংস

চ্যাম্পিয়নের ট্রফি হাতে নিয়ে উৎসবে মেতে উঠেছেন বসুন্ধরা কিংসের ফুটবলাররা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে দলবদলের দিনই বসুন্ধরা কিংসের খেলোয়াড়রা জোর গলায় বলেছিলেন, ‘লক্ষ্য আমাদের একটাই শিরোপা’। কথা রেখেছেন তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েই আগামী মৌসুমে পেশাদার লিগে খেলবে। এবারই প্রথম চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে অংশ নিয়েছিল বসুন্ধরা কিংস। নতুন দল হিসেবে লিগে শিরোপা জিতে ফুটবলপ্রেমীদের দৃষ্টি কাড়ে। ১৮ ম্যাচে সর্বোচ্চ ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে বসুন্ধরা কিংস চ্যাম্পিয়ন হয়। লিগের শুরুতে চার পয়েন্ট নষ্ট করলে কিংস কিছুটা পিছিয়ে পড়ে। কিন্তু মনে জেদ ও কমিটমেন্ট থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব না তা প্রমাণ দিয়েছে দলের ফুটবলাররা।

প্রতিটি ম্যাচেই উজাড় করে খেলেছেন ফুটবলাররা। দলকে সাফল্য এনে দিতে তারা ছিল প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সবাইকে পেছনে ফেলে বিজয়ের নিশানা উড়িয়েছে বসুন্ধরা কিংস। কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের খেলোয়াড়দের হাতে গতকাল ট্রফি ও ৩ লাখ টাকা তুলে দেন বাফুফে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও লিগ কমিটির চেয়ারম্যান সালাম মুর্শেদী। এ সময়ে মঞ্চে বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান, সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম মিনহাজ ও অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

তারুণ্যদের প্রাধান্য দিয়ে বসুন্ধরা কিংস দল গড়ে। তরুণদের ঝলকে দিশাহারা হয়ে পড়ে প্রতিপক্ষরা। তবে অধিনায়ক রোকনুজ্জামান কাঞ্চনের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। বয়স চল্লিশ ছুই ছুই করছে। এক সময়ে দেশের সাড়া জাগানো স্ট্রাইকার ছিলেন। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনে কাঞ্চনই বড় ভূমিকা রাখেন। সেমি ও ফাইনালে গোল করেন তিনি। বড় তিন দল আবাহনী, মোহামেডান ও মুক্তিযোদ্ধায় খেলে মাঠ কাঁপান।

৩৭ বছরে তার ফর্ম ছিল পড়তির দিকে। তাই পেশাদার লিগে তিনি ছিলেন উপেক্ষিত। নতুন দল বসুন্ধরা কিংসের যোগ দিয়ে প্রমাণ করলেন তিনি ফুরিয়ে যাননি। বয়স হলেও কাঞ্চন প্রতিপক্ষদের কাঁপিয়ে দিয়েছেন। পেশাদার লিগে স্থানীয়রা গোল ক্ষুধায় ভুগলেও চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে কাঞ্চন রীতিমতো ম্যাজিক প্রদর্শন করলেন। ১৮ ম্যাচে ১১ গোল দিয়ে তিনি হয়েছেন সর্বোচ্চ গোলদাতা।

বসুন্ধরা গ্রুপের দল বসুন্ধরা কিংস। সামনে পেশাদার লিগে শক্তিশালী দল গড়বে এ নিয়ে সংশয় নেই। ক্লাব সভাপতি ইমরুল হাসান বলেছেন, একটা দলের প্রধান লক্ষ্যই থাকে সাফল্য বা ট্রফি জয়। বসুন্ধরা কিংস এ ক্ষেত্রে নতুনত্ব আনতে চায়। শুধু ট্রফিই নয় ফুটবলকে পাল্টে দিতে আমরা বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নেব। তৃণমূল পর্যায়ে খেলোয়াড় বের করতে বসুন্ধরা কিংস জুনিয়র দল গড়বে। এমনভাবে খেলোয়াড়দের তৈরি করা হবে পরবর্তীতে যেন জাতীয় দলে ভূমিকা রাখতে পারে। নিজস্ব ভেন্যু তৈরিও চিন্তা ভাবনা রয়েছে। একাডেমির ব্যাপারটিও মাথায় রয়েছে। ফুটবলকে জাগিয়ে তুলতে বসুন্ধরা কিংস কাজ করবে।

বসুন্ধরা কিংসের ওপর আস্থা রেখেছেন বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাম মুর্শেদী। ট্রফি বিতরণ অনুষ্ঠানে চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের খেলোয়াড়, কোচ ও কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, নতুন দল হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বসুন্ধরা কিংস শুধু চমকই দেখায়নি ফুটবলে প্রাণের সঞ্চায় করেছে। যার প্রমাণ মিলেছে তাদের প্রতিটি ম্যাচে হাজার হাজার সমর্থকের উপস্থিতি। আমার বিশ্বাস দেশের ফুটবল উন্নয়নেও বড় ভূমিকা রাখবে বসুন্ধরা কিংস।

মিনহাজুল ইসলাম মিরাজ। বয়সে তরুণ হলেও সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। খেলোয়াড়দের সঙ্গে একেবারে মিশে গিয়েছিলেন। এতে অনুপ্রাণিত হয়েছে পুরো দল। ট্রফি হাতে নেওয়ার পর আবেগে কেঁদেই ফেললেন তিনি। বললেন, মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি ব্যক্তি। পরিশ্রম আমাদের স্বার্থক হয়েছে। আশা করি পেশাদার লিগেও আমরা ভালো খেলব। চ্যাম্পিয়নের ট্রফি পেয়ে খুশিতে আত্মহারা খেলোয়াড়রা। উল্লাস করতে করতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ক্লাব ভবনে পৌঁছায় তারা। রাত পর্যন্ত চলেছে বিজয় উৎসব।

সর্বশেষ খবর