বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

নতুন বছর নতুন চ্যালেঞ্জে ফুটবল

ক্যালেন্ডারের হিসাবে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের আরও ১০ মাস বাকি রয়েছে। হাতে সময় অনেকই বলা যায়। কিন্তু তাই বলেতো বাফুফের কর্মকর্তারা নাকে তেল দিয়ে ঘুমাতে পারেন না। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন মানে দেশের ফুটবল হারানো প্রাণ ফিরে পাবে

ক্রীড়া প্রতিবেদক

নতুন বছর নতুন চ্যালেঞ্জে ফুটবল

বাংলাদেশের ফুটবলে এখন মেয়েরাই ভরসা। কথাটা এখন দৃঢ় কণ্ঠে উচ্চারণ হচ্ছে। বাস্তবতার কথা চিন্তা করে ফুটবলে এই অবস্থা বলা যায়। মূল অর্থাৎ জাতীয় দলই একটা দেশের মূল শক্তি। জাতীয় দল ছাড়া ফুটবল সত্যিই বেমানান। অতীতেও পুরুষরা যে দেশকে বড় সাফল্য এনে দিয়েছিল তাও বলা যাবে না। লাল দলের প্রেসিডেন্ট কাপ, সাফ গেমস, মিয়ানমার চার জাতি টুর্নামেন্ট ও সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপাই ছিল বড় প্রাপ্তি। বাংলাদেশের বয়স দাঁড়িয়েছে সাতচল্লিশে। অথচ জাতীয় দল ট্রফি জিতেছে মাত্র ছয় আসরে। তাও আবার পাঁচটিই ছিল দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ।

জাতীয় দল শেষবার ট্রফি জিতেছিল ২০০৩ সালে। সেবার ঢাকায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয় রজনীর নেতৃত্বে। ২০১০ সালে ঢাকায় বাংলাদেশ এসএ গেমসে সোনা জিতেছিল। কিন্তু এই কৃতিত্ব আবার জাতীয় দলের না। কেননা জাতীয় দলের চারজন ছাড়া বাকিরা অনূর্ধ্ব-২৩ দলেরই। সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন এসএ গেমস ফুটবল ইভেন্টে এই নিয়ম চালু করে দিয়েছে। এর মধ্যে অবশ্য দুবার রানার্স আপ হয়েছে কিন্তু এক যুগ পেরিয়ে গেলে শিরোপার মুখ দেখছে না জাতীয় দল। আগেও বড় ধরনের সাফল্য না এলেই ফুটবলে একটা প্রাণ ছিল। ভারততো বটেই নেপাল ও পাকিস্তান সাফ গেমসে বাংলাদেশের আগে সোনা জিতেছিল। তাই বলেতো ফুটবল এতটা সংকটাপন্ন অবস্থায় ছিল না।

গত কয়েক বছরে মান নামতে নামতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের সেমিফাইনাল খেলাটা এখন স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। গ্রুপ পর্বের গণ্ডি পেরুতে পারছে না জাতীয় দল। এমন ভরাডুবিতে ফুটবলকে ঘিরে ক্রীড়ামোদীরা আশার আলোয় দেখছিল না। কেউ কেউ বলছিলেন বাংলাদেশের ফুটবলে মৃত্যু ঘটেছে। এই সংকটাপন্ন অবস্থায় মেয়েরা একের পর এক বিজয় নিশানা উড়াচ্ছে। এএফসি কাপ বাছাই পর্বে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ দল যেন ম্যাজিক প্রদর্শন করেছিল। প্রতিপক্ষদের গোলের বন্যায় ভাসিয়ে মেয়েরা চূড়ান্ত পর্বেও জায়গা করে নিয়েছে। মূল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে কৃষ্ণা,সাবরিনারা অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করলেও দুর্ভাগ্যক্রমে শিরোপা জিততে পারেনি। রানার্স আপ হয়েছে। তারপর আবার সাফ-অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবলে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন। ফুটবলকে ঘিরে মেয়েরাই নতুন স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে।

তাহলে কি পুরুষ জাতীয় দল আর কখনো কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। ফুটবল বাঙালি প্রাণের ও মনের খেলা। জাতীয় দলের যদি এই অসহায় অবস্থা হয় তাহলে আর দেশের ফুটবলে থাকলটা কি। সত্যি কথা বলতে হতাশার মধ্যেও আশার আলো জেগে উঠেছে। এখন বাফুফে যদি চোখ খুলে তাকায় তাহলে পুরুষ জাতীয় দলের এই দৈন্যদশা কেটে যাবে। মামুনুলরা পারছেন না ঠিকই, ভুটানের মতো দুর্বল দলের কাছে পারছে না। কিন্তু ছোটরাতো প্রমাণ দিয়েছে পুরুষরাও ফুটবলে বিজয়ের পতাকা উড়াতে পারে।

২০১৭ সালে ফুটবলে বড় প্রাপ্তিটা হচ্ছে অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে মারিয়া, আঁখিদের শিরোপা জয়। ব্যর্থতা তো দূরের কথা, জাতীয় দল কোনো টুর্নামেন্টেই অংশ নিতে পারেনি। তাতে কি কিশোররাতো ঠিকই ঝলক দেখিয়েছে। অনূর্ধ্ব-১৮ সাফ ফুটবলে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। কিন্তু কি অসাধারণ পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছে। লিগ পর্বে ফেবারিট ভারতের বিপক্ষে প্রথমার্ধে ৩ গোলে পিছিয়ে থেকেও জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। পুরুষ দলের এমন পারফরম্যান্স দেখে ক্রীড়ামোদীরা অভিভূত হয়ে পড়ে। ফুটবলারদের নাম ভুলতেই বসেছিল সবাই। কিন্তু জাফর ইকবালরা প্রমাণ করেছেন কায়সার হামিদ, আসলাম হওয়ার যোগ্যতা তাদের রয়েছে।

এএফসি কাপ বাছাই পর্বেও প্রশংসিত হয়েছে অনূর্ধ্ব-১৯ দল। কাতারের মাটিতে কাতারের মতো শক্তিশালী দলকে পরাজিত করেছে। ফুটবল সংকটাপন্ন অবস্থায় কিশোররা অন্তত এতটুকু প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের ফুটবল মরে যায়নি। এই বছর জাতীয় দলের মাঠে দেখা না মিললেও সামনে নতুন বছরটা হবে তাদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জের। ২০১৮ সালে ফুটবলে বড় আকর্ষণ হবে রাশিয়া বিশ্বকাপই। এই আসরে বাংলাদেশ জীবনেও খেলতে পারবে কিনা সংশয় রয়েছে। কিন্তু যে আসরকে দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ বলা হয়। সেই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী। সব ঠিক থাকলে সামনেই সেপ্টেম্বরে ঢাকায় সাফ ফুটবল অনুষ্ঠিত হবে। ঘরের মাঠে খেলবে জাতীয় দল। সেখানে ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেদিকে কি নজর দিচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন।

ক্যালেন্ডারের হিসাবে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের আরও ১০ মাস বাকি রয়েছে। হাতে সময় অনেকই বলা যায়। কিন্তু তাই বলেতো বাফুফের কর্মকর্তারা নাকে তেল দিয়ে ঘুমাতে পারেন না। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন মানে দেশের ফুটবল হারানো প্রাণ ফিরে পাবে। কিন্তু স্বল্প প্রস্তুতিতে মাঠে নামলে লাভ হবে কি? প্রস্তুতি নিয়েতো এখনই ঝাঁপিয়ে পড়া উচিত। বয়সের কারণে অনেকে জাতীয় দলে সুবিধা করতে পারছেন না। কিন্তু যে কিশোররা এখন মাঠ কাঁপাচ্ছে তাদের টেনে দীর্ঘ মেয়াদির প্রস্তুতিটা কি জরুরি না।

হ্যাঁ, নতুন বছরে সাফের আরও বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট আছে। এগুলোতেও নজর দিতে হবে। কিন্তু ফুটবলে মূল শক্তিতো পুরুষ জাতীয় দলই। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ব্যর্থতার কারণেইতো মূলত ফুটবলে দৈন্যদশা নেমে এসেছে। এবার ঘরের মাঠে যখন খেলা। তখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টাতো করতে হবে। নাকি এক মাসের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি ঘটবে?

সর্বশেষ খবর