বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
ফিরে দেখা ২০১৭

নেতৃত্বে ম্যাশের ক্যারিশমা

মেজবাহ্-উল-হক

নেতৃত্বে ম্যাশের ক্যারিশমা

বিপিএল (বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ) না হয়ে বিএমএল (বাংলাদেশ মাশরাফি লিগ) হলে কেমন হয়?

রংপুর রাইডার্সকে শিরোপা এনে দেওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি বিন মর্তুজাকে শুনতে হয়েছে এই প্রশ্ন! কোনো উত্তর দিতে পারেননি তিনি। মাশরাফি কেবল স্মিত হেসেছেন। বিপিএলের পঞ্চম আসরে চতুর্থবারের মতো শিরোপা জিতেছেন মাশরাফি। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম দুইবার শিরোপা জিতিয়ে দিয়েছেন ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সকে। তৃতীয়বার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হয়ে শিরোপা জিতেছে। চতুর্থ আসরে পারেননি মাশরাফি। আর এবার রংপুর রাইডার্সকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন।

অধিনায়ক মাশরাফি যেন এক পরশ পাথর। হাতে মাটি তুলে নিলেও তা হীরা জহরত হয়ে যায়! ২০১৭ সাল মাশরাফির জন্য দারুণ পয়মন্ত। বছরের সব শেষের দিকে জিতেছেন বিপিএলের শিরোপা। তবে এই বছরে মাশরাফির সবচেয়ে বড় অর্জন বাংলাদেশকে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে নিয়ে যাওয়া।

সত্যিই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বিষয়টি অন্যরকম! ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে বাংলাদেশ এমনিতেই পিছিয়ে থাকার কথা। সেখানে গ্রুপে ছিল স্বাগতিক ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মতো ভয়ঙ্কর দল। বলে রাখা ভালো, আমরা যে নিউজিল্যান্ডকে দুই দুবার হোয়াইটওয়াশ করেছি এবং ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছি সেটা ছিল আমাদের স্পিনিং উইকেটে।  পেস উইকেটের হিসাব নিকাশ সম্পূর্ণ আলাদা। সেখানে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড অপ্রতিরোধ্য দল। এমন এক গ্রুপ থেকে দল নিয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছে দেওয়া সোজা কথা নয়।

মাশরাফির নেতৃত্বেই বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টের শেষ চারে উঠেছিল। ২০১৭ সালে তো বটেই, হয়তো বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় অর্জন এটি।

মাশরাফির নেতৃত্বেই প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার মাটিতে ওয়ানডে ও টি-২০ সিরিজে ড্র করেছে বাংলাদেশ। যদিও জাতীয় দলের হয়ে সব শেষ দক্ষিণ আফ্রিকায় ওয়ানডে সিরিজে ভরাডুবি হয়েছে বাংলাদেশের। তবে প্রোটিয়াদের মাটিতে এশিয়ার কোনো দলই তো সুবিধা করতে পারেন না।

দলীয় সাফল্যে বরাবরের মতো ২০১৭ সালেও মাশরাফি দেখিয়েছেন ক্যারিশমা।

এ বছর মোট ১৩টি ওয়ানডে খেলেছেন মাশরাফি। উইকেট শিকার করেছেন ১৩টি। সব মিলে বোলিং করেছেন মোট ১১১.৫ ওভার। তার গড় ৪৯.৫৪। টি-২০তে মাশরাফির ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের অবস্থা আরও করুণ। ৫ ম্যাচে নিয়েছেন মাত্র ৪ উইকেট। ওভার প্রতি রান দিয়েছেন ৮.৯৫ করে। মোট বোলিং করেছেন ১৮.২ ওভার। আর ব্যাট হাতে ১৩ ওয়ানডেতে তার মোট রান ৬৪ এবং ৫ টি-২০তে করেছেন মাত্র ৯ রান।

মাশরাফি সেই ২০০৯ সালের পর আর সাদা পোশাকে খেলতে নামেননি। এ বছর আন্তর্জাতিক টি-২০কেও গুডবাই জানিয়েছেন। তবে ওয়ানডে চালিয়ে যাচ্ছেন।

প্রতিটি দলে সাধারণত সেরা পারফরমারই অধিনায়ক হয়ে থাকেন। যেমন অস্ট্রেলিয়ার ‘স্টিভেন স্মিথ’, ভারতের ‘বিরাট কোহলি’, কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার ‘ফাফ ডু প্লেসিস’ —সবাই নিজ নিজ দলে সেরা পারফরমার। এক্ষেত্রে মাশরাফি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।

তবে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে মাশরাফি যেমনই হোক না কেন অধিনায়ক মাশরাফি অনন্য। সম্প্রতি মাশরাফির আরেকটি গুণ ভক্তদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করেছে—মানবিকতা। সব শেষ রংপুর রাইডার্সের কাছ থেকে পাওয়া ‘শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্স’ দিয়েছেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ ফাউন্ডেশনে! প্রতিষ্ঠানটি তার নিজের হলেও এই অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করবেন সাধারণ মানুষ। সত্যিই মাশরাফি অসাধারণ।

সর্বশেষ খবর