বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
বিশ্বকাপের গ্রুপ বিশ্লেষণ

জার্মানির গ্রুপে শক্তিশালী সুইডেন

জার্মানির গ্রুপে শক্তিশালী সুইডেন

বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানি আছে এই গ্রুপে। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়েরও সেরা দল তারা। নকআউট পর্ব তো বটেই, এবারেই জার্মানরা বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট। এফ গ্রুপ থেকে জার্মানি কতদূর যাবে তাই দেখার বিষয়। তবে বাকি তিন দলকে নিয়েই রয়েছে সংশয়। নকআউট পর্বে জার্মানির সঙ্গী হবে কারা! মেক্সিকো, সুইডেন নাকি দক্ষিণ কোরিয়া! দক্ষিণ কোরিয়া (৫৯) র‌্যাঙ্কিংয়ে মেক্সিকো (১৬) ও সুইডেনের (১৮) চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও বিশ্বকাপে জ্বলে উঠতে পারে তারা। বিদায় করে দিতে পারে মেক্সিকো আর সুইডেনের মতো দলকেও। গ্রুপ এফের সম্ভাবনা নিয়ে লিখেছেন রাশেদুর রহমান—

 

 

 জার্মানি

ব্রাজিলের মাটিতে আর্জেন্টাইন ভক্ত আর লিওনেল মেসিকে কাঁদিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছিল জার্মানি। তরুণ একটা দল নিয়ে শিরোপা ঘরে তুলেছিলেন জোয়াকিম লো। আর বর্তমান দলটা তো অনেক পরিপক্বই। এই দলে প্রতিপক্ষের জন্য প্রবল বাধা হয়ে দাঁড়াবেন যেমন গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নিউয়ার, তেমনি প্রতিপক্ষের ডিফেন্স লাইন তছনছ করে দিতে পারেন মুলার, মারিও গোটশে, মেসুট অজিল, টনি ক্রুজরা। ডিফেন্স সামলাতে ম্যাটও হুমেল আর জশুয়া কিমিচরা তো আছেনই। সবমিলিয়েই দুরন্ত এক দল জার্মানি। বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বলেই নয়, বিশ্বকাপের ইতিহাসও জার্মানদের পক্ষেই কথা বলে। ব্রাজিলের পর সবচেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপ খেলার রেকর্ডটা জার্মানিরই। আগের ১৮টি বিশ্বকাপে জার্মানরা কেবল একবারই গ্রুপ পর্ব খেলে বিদায় নিয়েছে (১৯৩৮)। এরপর থেকে নকআউট পর্ব তো বটেই, বেশিরভাগ সময়ই খেলেছে সেমিফাইনাল। চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মুকুট জয় করা ছাড়াও সেমিফাইনাল খেলেছে ৯ বার! অতীত আর বর্তমান নিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত জার্মানি। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ১০ ম্যাচের সবকটি দারুণভাবে জিতে সেই কথাই যেন জানান দিল জার্মানরা।

ফিফা র‌্যাঙ্কিং : ১

কোচ : জোয়াকিম লো

তারকা : ম্যানুয়েল নিউয়ার

ফরমেশন : ৪-৩-৩

বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ : ১৯তম

বিশ্বকাপে সেরা ফল : চ্যাম্পিয়ন (১৯৫৪, ১৯৭৪, ১৯৯০ ও ২০১৪)

 

 

 

 

মেক্সিকো

প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলার গৌরব আছে মেক্সিকানদের। তবে বিশ্বকাপে দারুণ কিছু করে দেখাতে পারেনি তারা। তারপরও মেক্সিকো ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম দল। কোনো দলই তাদেরকে অবহেলার চোখে দেখার সাহস করতে পারে না। ১৯৭০ ও ১৯৮৬ বিশ্বকাপের আয়োজকরা নিজেদের মাটিতে দুবারই কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে। তবে এর বেশি যেতে পারেনি কখনোই। ১৯৯৪ সাল থেকে নিয়মিত নকআউট পর্ব খেলা মেক্সিকানরা এবারের বিশ্বকাপেও নকআউট পর্ব খেলার দাবিদার। আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে এরই মধ্যে নাম কুড়িয়েছে মেক্সিকো। তাছাড়া দলে আছে বিশ্ব সেরাদের সারিতে থাকা বেশ কয়েকজন তারকা। মেক্সিকোর সর্বোচ্চ গোলদাতা (৪৯টি) হার্নান্দেজ তো আছেনই দলে। এছাড়াও অভিজ্ঞ রাফায়েল মারকুয়েজ, জিওভানি সান্তোসরা আছেন। তরুণদের মধ্যে দারুণ খেলছেন রাউল জিমেনিজ আর লোজানোরা। অধিনায়ক আন্দ্রেস গুয়ার্ডাডো তো আছেনই। সবমিলিয়েই দুর্দান্ত এক দল মেক্সিকো। বিশ্বকাপে ১৬তমবারের মতো অংশ নিতে যাচ্ছে মেক্সিকানরা। এর আগে কোয়ার্টার ফাইনালের বেশি যেতে পারেনি।

ফিফা র‌্যাঙ্কিং : ১৬

কোচ : হুয়ান কার্লোস

তারকা : হাভিয়ের হার্নান্দেজ

ফরমেশন : ৪-৩-৩

বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ : ১৬তম

বিশ্বকাপে সেরা ফল : কোয়ার্টার ফাইনাল (১৯৭০ ও ১৯৮৬)

 

 

 

 

সুইডেন

সোলনার র‌্যাসুন্ডা স্টেডিয়ামে ১৯৫৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে দুর্দান্ত লড়াই করেছিল সুইডেন। কিন্তু সেই ম্যাচে ছিলেন পেলে, ভাভা, জাগালো আর গ্যারিঞ্চাদের মতো ইতিহাসখ্যাত তারকারা। ম্যাচের প্রথমে এগিয়ে গেলেও সুইডিশরা হেরে যায় ৫-২ গোলে। দুটি করে গোল করেছিলেন পেলে ও ভাভা। জাগালো করেছিলেন একটি গোল। সুইডেন এর আগেও বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলেছে দুবার (১৯৩৮ ও ১৯৫০)। সেমিফাইনাল খেলেছে ১৯৯৪ সালেও। তবে ফাইনাল ওই একবারই খেলেছে তারা। সুইডিশরা বিশ্বকাপে নিয়মিত না হলেও ফুটবল দুনিয়ায় অন্যতম দল। ইউরোপিয়ান অঞ্চলের কঠিনতম বাছাই পর্ব পাড়ি দিয়ে চূড়ান্ত পর্বে এসেছে সুইডেন। ২০০৬ সালের পর প্রথম বিশ্বকাপ এটা সুইডিশদের। দলের প্রধান তারকা জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ ইনজুরিতে আক্রান্ত। তারপরও দলটাকে দুরন্ত রূপ দিয়েছেন মারকোস বার্গ আর ওলা টোভেনেনরা। বাছাই পর্বের প্লে-অফ রাউন্ডে ইব্রাহিমোভিচকে ছাড়াই ইতালিকে হারিয়েছে সুইডেন। বিশ্বকাপে এবার দারুণ কিছু করতে মরিয়া সুইডিশরা গ্রুপ পর্ব পাড়ি দিতে পারে। নকআউট পর্বেও যেতে পারে বহুদূর।

ফিফা র‌্যাঙ্কিং : ১৮

কোচ : জেইন অ্যান্ডারসন

তারকা : জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ

ফরমেশন : ৪-৩-১-২

বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ : ১২তম

বিশ্বকাপে সেরা ফল : রানার্সআপ (১৯৫৮)

 

 

 

 

দক্ষিণ কোরিয়া

এশিয়ার মাটিতে প্রথম বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল দক্ষিণ কোরিয়া। অবশ্য আয়োজক দেশ ছিল জাপানও। তবে দক্ষিণ কোরিয়াই এশিয়ার প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলার গৌরব অর্জন করে। ২০০২ বিশ্বকাপে নিজেদের মাঠে সেমিফাইনাল খেলার পথে দক্ষিণ কোরিয়া হারিয়েছে ইতালি আর স্পেনকে। গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় করেছিল পর্তুগাল আর পোল্যান্ডের মতো দলকে। সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে গেলেও কোরিয়ানরা অসাধারণ ফুটবল উপহার দিয়েছিল নিজেদের মাঠে। সেই দক্ষিণ কোরিয়া এরপর ২০১০ বিশ্বকাপে শেষ ষোলতে খেলেছিল। ১৯৮৬ সাল থেকে নিয়মিত বিশ্বকাপ খেলা দক্ষিণ কোরিয়া এবারের বিশ্বকাপে খুব একটা শক্তিশালী দল নিয়ে যেতে পারবে না। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের ৫৯ নম্বরে থাকা কোরিয়ানদের সেরা তারকাদের অনেকেই বিদায় নিয়েছেন। অবশ্য দলে এখনো টিকে আছেন ৩৮ বছরের লি ডঙ (১০৫ ম্যাচে ৩৩ গোল) এবং ৩৬ বছরের কোয়াক তায়ে। তরুণদের মধ্যে নাম কুড়িয়েছেন অগসবার্গের জী ডঙ উন এবং টটেনহ্যামের সন হিয়াঙ মিনরা। বেশ কয়েকজন তারকা থাকার পরও জার্মানি, সুইডেন আর মেক্সিকো বাধা পাড়ি দেওয়া কঠিনই হবে দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য।

ফিফা র‌্যাঙ্কিং : ৫৯

কোচ : শিন তায়ে ইয়ঙ

তারকা : সন হিয়াঙ মিন

ফরমেশন : ৩-৪-৩

বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ : ১০ম

বিশ্বকাপে সেরা ফল : চতুর্থ (২০০২)

 

সর্বশেষ খবর