শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
ফি রে দে খা ২ ০ ১ ৭

‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ মুশফিক

মেজবাহ্-উল-হক

‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ মুশফিক

‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ বাংলাদেশের ক্রিকেটে একজনই, তিনি মুশফিকুর রহিম। দলের বিপদের জন্য বাইশগজে গিয়ে মুশফিক হয়ে যান নির্ভরতার প্রতীক। ২০১৭ সালে দাপটের সঙ্গেই সময় কাটিয়েছেন তিনি। বাইশগজে ভুগিয়েছেন প্রতিপক্ষের বোলারদের। তবে মুশফিকের ক্যারিয়ারের এই বছরটা মাইলফলক হয়ে থাকবে অধিনায়ক হিসেবে দেশের শততম টেস্টে জয়ের জন্য। যে জয় মুশফিক নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।

২০১৭ সালটা ছিল বড়ই পয়মন্ত। মুশফিক শুরু করেছিলেন টেস্টে সেঞ্চুরি দিয়ে। সে সেঞ্চুরি আবার নিউজিল্যান্ডের মাটিতে। যেখানে উপমহাদেশের ব্যাটসম্যানরা গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেন বাতাসের শহর নিউজিল্যান্ডের সেই ওয়েলিংটনেই মুশফিক খেলেছেন ১৫৯ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে সেই ম্যাচে গড়ে ছিলেন ৩৫৯ রানের এক মহাকাব্যিক জুটি। বাংলাদেশের টেস্টের ইতিহাসে যেটি সবচেয়ে বড় জুটি নতুন রেকর্ড। সাকিব সেই ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। মুশফিকের সামনেও সুযোগ ছিল। কিন্তু পারেননি।  ওই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসেই ইনজুরিতে পড়ে যান মুশফিক। যে কারণে ১৩ রান করার পর রিটায়ার্ড হার্ড হতে বাধ্য হন।

বছরের দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে মুশফিক নামেন ভারতের বিরুদ্ধে। হায়দরাবাদে সেই ঐতিহাসিক টেস্ট। টেস্ট খেলতে বাংলাদেশের প্রথম ভারত সফর। কিন্তু প্রথম ইনিংসে ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলির ডাবল সেঞ্চুরি, মুরালি বিজয় ও ঋদ্ধিমান সাহার সেঞ্চুরিতে রানের পাহাড়ে চাপা পড়ে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু মুশফিক তো ছেড়ে কথা বলার পাত্র নন। ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি করে দিলেন পাল্টা জবাব। মুশফিককে দারুণভাবে সহায়তা করেন সাকিব ও মেহেদী মিরাজ। তারাও তুলে নিলেন হাফ সেঞ্চুরি। তবে মুশফিকুর ১২৭ রানের ইনিংসটি ছিল অসাধারণ।

দুয়ে দুই, অর্থাৎ বছরের প্রথম দুই টেস্টেই দুই সেঞ্চুরি আদায় করে নেন মুশফিক। দুরন্ত ফর্মে থাকা অবস্থায় চলে যান শ্রীলঙ্কা। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। দ্বিতীয়টি মহাগুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের শততম ম্যাচ। মুশফিককে ঘিরে ভক্তদের অনেক স্বপ্ন, অনেক প্রত্যাশা। কিন্তু গল টেস্টে লঙ্কানদের বিরুদ্ধে হেরে গেল বাংলাদেশ। তবে সে ম্যাচেও মুশফিকের ব্যাটে ছিল রানের ফোয়ারা। প্রথম ইনিংসে করেন অনবদ্য ৮৫ রান।

দ্বিতীয় টেস্ট অর্থাৎ বাংলাদেশের শততম টেস্টের প্রথম ইনিংসে আবারও হাফ সেঞ্চুরি মুশফিকের। আর দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি খুব বেশি সময় ব্যাটিং করার সুযোগই পাননি। ২২ রানে অপরাজিত থাকতেই ম্যাচ জিতে যায় বাংলাদেশ। শততম টেস্টে ঐতিহাসিক জয়। অধিনায়ক হিসেবে মাঠে থেকে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়ে বীরবেশে মাঠ ছাড়েন মুশি। অধিনায়ক হিসেবে তার ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় অর্জন হয়তো এটিই।

এরপর ঘরের মাঠে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়াকে বধ করে মুশফিকের অসাধারণ নেতৃত্বগুণেই। এটিও এই বছরে এদেশের ক্রিকেটাঙ্গনের বড় ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি। বাংলাদেশ দল ধীরে ধীরে টেস্টেও পরাক্রমশালী হয়ে উঠে মুশফিকের সুচারু নেতৃত্ব ও তার ক্ষুরধার ব্যাটিংয়ে।

 এই বছরে মুশফিকের টেস্ট রেকর্ড ঈর্ষণীয়। ৮ ম্যাচে তার দুই সেঞ্চুরি ও তিন হাফ সেঞ্চুরি। ৫৪.৭১ গড়ে করেছেন ৭৬৬ রান। ওয়ানডে ক্রিকেটেও এই বছরটা দারুণ কাটিয়েছেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। ১৪ ম্যাচে গড় ৪৫.৮০। একটি সেঞ্চুরির পাশাপাশি ৪টি হাফ সেঞ্চুরি। তবে এই সেঞ্চুরির কথা সবচেয়ে বেশি মনে থাকবে মুশির। কেন না সেঞ্চুরিটি তিনি করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার কিম্বার্লিতে। এটি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশি কোনো ক্রিকেটারের প্রথম সেঞ্চুরি।

টেস্ট ও ওয়ানডেতে ঈর্ষণীয় সাফল্যের পরও বছরের শেষটা হয়ে থাকল মুশফিকের কাছে বিষাদময়। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ‘রাজশাহী কিংস’ এর বড় কোনো সাফল্য পাননি। আবার জাতীয় টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব হারাতে হয়েছে।

উত্থান-পতন, সাফল্য-ব্যর্থতা সবার জীবনেই আসে। কিন্তু মুশফিক এমন এক সময় অধিনায়কত্ব হারিয়েছে যখন তিনি অধিনায়ক হিসেবে সফল এবং তার ব্যাটেও ছুটছিল রানের ফোয়ারা।  তাই বছরটা বিষাদময়ই হয়ে থাকলো মুশফিকের কাছে।

 

সর্বশেষ খবর