শনিবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

পেসাররাই পাল্টে দেবে চিত্র!

ক্রীড়া প্রতিবেদক

পেসাররাই পাল্টে দেবে চিত্র!

মুস্তাফিজুর রহমান---আবুল হাসান রাজু

ভালো ছাত্র যে ভালো শিক্ষক হবেন এমন কোনো গ্যারান্টি নেই! সে কারণেই হয়তো কোর্টনি ওয়ালশের মতো কিংবদন্তি পেসারকে বোলিং কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পরও বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ে আহামরি পরিবর্তন আসেনি।

টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম পাঁচ শতাধিক উইকেটের মালিক কি তাহলে ভালো শিক্ষক হতে পারেননি? নাকি বাংলাদেশের পেসাররাই ওয়ালশের মতো কিংবদন্তির ছাত্র হওয়ার যোগ্য নন! —বিষয় দুটি নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, তবে এটা তো ঠিক যে ওয়ালশের সময়ে পেস বোলিংয়ে আহামরি উন্নয়ন হয়নি!

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেই দেখা গেছে, বাংলাদেশের পেসাররা কোথায় পড়ে আছেন! পেস সহায়ক কন্ডিশন পেয়েও তারা নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। ঘরের মাঠে সিরিজেও কিনা তাসকিনের মতো পেসাররা দলেই জায়গা পান না। অথচ এই তাসকিনকে ভাবা হচ্ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় পেসার। ওয়ালশের সান্নিধ্যে কোথায় তাসকিনের বোলিংয়ে নতুন মাত্রা যোগ হবে, উল্টো অফ-ফর্মের কারণে তাকে দল থেকে বাদ দিতে বাধ্য হয়েছেন নির্বাচকরা।

মুস্তাফিজুর রহমান অভিষেকেই ক্রিকেট বিশ্বে হৈচৈ ফেলে দেন। ওয়ালশের মতো কোচের ছোঁয়ায় কোথায় তিনি আরও শানিত হবেন, কিন্তু কাটার মাস্টার এখন উল্টো পথে হাঁটছেন। ২০১৭ সালে মুস্তাফিজের ওয়ানডে পরিসংখ্যানেই তার রুগ্ন চিত্র বেরিয়ে আসে! ১১ ম্যাচে নিয়েছেন মাত্র ১৪ উইকেট। দলের সেরা পেসারেরই যখন এই অবস্থা তখন দলের অন্য পেসার কতটা ভালো করবেন? গত বছরে মাশরাফি ১৩ ম্যাচে নিয়েছেন ১৩ উইকেট। আরেক পেসার রুবেল হোসেন খেলেছেন মাত্র দুই ম্যাচ। উইকেট পেয়েছেন মাত্র একটি। এ ছাড়া ত্রিদেশীয় সিরিজের দলে বাকি দুই পেসার সাইফ উদ্দিন ও আবুল হাসান রাজু তো ওয়ালশের নিয়মিত ছাত্রই নন।

সাইফ উদ্দিনের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে মাত্র এক ম্যাচ। সেটাতেও উইকেট পাননি। আর আবুল হাসান রাজু জাতীয় দলে ফিরেছেন দীর্ঘ আড়াই বছর পর। এই প্রথমবারের মতো ওয়ালশের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। ওয়ালশ কোথায় বাংলাদেশ দলকে ‘শক্তিশালী পেস-আক্রমণ’ উপহার দেবেন তা না উল্টো দলে এখন পেসার সংকট! এমন এক পেস আক্রমণ নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে কতটা আশাবাদী হতে পারে বাংলাদেশ?

একদিন পরই শুরু হচ্ছে ত্রিদেশীয় সিরিজ। সারা দেশের মতো রাজধানী ঢাকায়ও প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। এমন পরিবেশ পেস বোলারদের জন্য আদর্শ। সিরিজে পেসারদেরই ম্যাচের ভাগ্যত্রাতা হওয়ার কথা। কিন্তু বাংলাদেশের পেসাররা কি পারবেন ক্যারিশম্যাটিক কিছু করে দেখাতে?

ত্রিদেশীয় সিরিজটা পেসারদের জন্য যেমন চ্যালেঞ্জিং তেমনি অনেক বড় একটা সুযোগও। কেননা ওয়ালশের মতো কোচকে কাছে পেয়েও যদি তারা কিছু আদায় করে নিতে না পারেন সেটা তাদেরই ব্যর্থতা। ক্যারিবীয় তারকা তো আর মাঠে গিয়ে তাদের হয়ে খেলতে পারবেন না!

ওয়ালশ কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর যে বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ে কোনো উন্নতি হয়নি এটা ঠিক নয়। উইকেট কম পেলেও মাশরাফির বোলিংয়ের ধার বেড়ে গেছে। নড়াইল এক্সপ্রেস দুর্দান্ত ‘ইনকাট’ করাতে পারেন। ক্যারিবীয় কিংবদন্তি মাশরাফির গ্রীব ঠিক করে দিয়েছেন। যে কারণে মাশরাফির বল আগের চেয়েও কার্যকর হয়েছে।

মুস্তাফিজের বোলিংয়ের সুইং বেড়ে গেছে। শুরুতে বল দুর্দান্ত কাট করলেও সুইং ততটা ভালো ছিল না। কিন্তু এখন দারুণ সুইং বল করতে পারেন। রুবেল হোসেনকেও খানিকটা বদলে দিয়েছেন ওয়ালশ। তবে দুঃসংবাদ হচ্ছে, হয়তো সিরিজের প্রথম ম্যাচটি খেলা হচ্ছে না তার। অনুশীলনের সময় বাম হাতের কনিষ্ঠায় আঘাত পেয়েছেন।

আশার কথা হচ্ছে, রুবেল খেলতে না পারলেও মাশরাফি ও মুস্তাফিজ নতুন বছরে ক্যারিশম্যাটিক কিছু করে দেখানোর জন্য কঠোর অনুশীলন করছেন। সাইফ উদ্দিন ও আবুল হাসানও ওয়ালশের কাছ থেকে নতুন কিছু শিখছেন। হয়তো সামনের সিরিজে তার প্রতিফলনও দেখা যেতে পারে।

বাংলাদেশের সিমিং কন্ডিশনের কথা চিন্তা করে শ্রীলঙ্কা তাদের দলে ৭ জন পেসার রেখেছে। জিম্বাবুয়েও পেস সহায়ক দল গঠন করেছে। বসে নেই টাইগাররাও। যদিও বাংলাদেশ দলে এই মুহূর্তে প্রধান কোচ নেই। কিন্তু পেস বোলিং কোচ তিন-তিনজন। ওয়ালশের সঙ্গে রয়েছেন খালেদ মাহমুদ সুজন ও হাইপারফরম্যান্স দলের কোচ চম্পাকা রামানায়েকে।

খালেদ মাহমুদ এখন টেকনিক্যাল ডিরেক্টর। কোচের দায়িত্বও তার কাঁধে। আর মাহমুদের প্রধান দক্ষতা তো পেস বোলিংয়েই। তা ছাড়া পেসারদের সঙ্গে সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক মাহমুদেরই। কেননা ভাষাগত জটিলতার কারণে ইচ্ছা থাকলেও কেউ কেউ ওয়ালশের খুব কাছাকাছি যেতে চান না। কী বলতে গিয়ে কী বলে ফেলবেন তা নিয়ে একটা অজানা আতঙ্ক কাজ করে মনে। চম্পাকার ক্ষেত্রেও তাই। এক্ষেত্রে খালেদ মাহমুদই বেশি কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন। তবে এটাও তো ঠিক যে মুখের ভাষা বুঝতে সমস্যা হলেও ক্রিকেটীয় ভাষা বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা নয় ক্রিকেটারদের।

তিন কোচের কোচিংয়ে এবার বদলে যেতে পারে বাংলাদেশের পেস আক্রমণ। তাই কন্ডিশনের সদ্ব্যবহার করে এই পেসাররাই পাল্টে দিতে পারেন চিত্র।

সর্বশেষ খবর