সোমবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

লড়াই এবার টেস্টের

ক্রীড়া প্রতিবেদক

লড়াই এবার টেস্টের

ফের আলোচনায় উইকেট। ফের ঘরের মাঠে ব্যর্থ বাংলাদেশ। নিঃশ্বাস সমান দূরত্বে থেকেও শিরোপা জিততে পারেনি। তীরে এসে তরী ডোবার মতো ফাইনালে হোঁচট খেলেন মাশরাফিরা। দারুণ ক্রিকেট খেলতে থাকা মাশরাফি বাহিনী ব্যর্থ হলো কেন? প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছে ক্রিকেট পাড়ায়। ফাইনালে হারের কাটাছেঁড়া করতে বসে নানাজনের নানামত। কারও মতে, সাকিব আল হাসান ব্যাটিং করতে না পারায় ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়েছে টাইগাররা। অনেকের মতে চন্ডিকা হাতুরাসিংহের পরিকল্পিত ক্রিকেটের কাছে হেরেছে খালেদ মাহমুদ সুজনের দল। সমীকরণ যেমনই হউক, এটা স্পষ্ট ব্যাটসম্যানদের অপরিকল্পিত ব্যাটিংয়েই শিরোপা জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ফাইনালের এই ব্যাটিং ব্যর্থতাকে সঙ্গী করেই ৩১ জানুয়ারি চট্টগ্রামে দুই টেস্ট সিরিজের প্রথমটি খেলতে নামছে বাংলাদেশ। ক্রিকেটপ্রেমীদের সবার নজর এখন টেস্টে। প্রস্তুত টাইগাররাও। কিন্তু সবার মনে অজানা আশঙ্কা, কি হবে টেস্টের ফল?

ফাইনালে ফিল্ডিংয়ের সময় হাতের আঙ্গুলে ব্যথা পান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। বাঁ হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুলের গোড়ায় ৯টি সেলাই পড়েছে। এতে করে ব্যাটিং করতে পারেননি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। শুধু তাই নয়, ইনজুরিতে পড়ে ছিটকে পড়েছেন চট্টগ্রাম টেস্ট থেকেও। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের ছিটকে পড়ায় শক্তি হারিয়েছে টাইগাররা। সাকিবের জায়গা পূরণ করতে টিম ম্যানেজমেন্ট দুই ধাপে দলভুক্ত করেছে তিন স্পিনারকে। প্রথম ধাপে নিয়েছে লেগ স্পিনার অলরাউন্ডার তানভীর হায়দার ও বাঁ হাতি স্পিনার সানজামুল ইসলামকে। গতকাল কোনো নোটিস ছাড়াই নিয়েছে বর্ষিয়ান বাঁ হাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক রাজকে। সাকিব যেহেতু খেলতে পারছেন না, তাই দলকে ব্যালান্সড করতে স্পিনারদের আধিক্যই বেশি স্কোয়াডে। চট্টগ্রামের সর্বশেষ ফলই উৎসাহিত করেছে টিম ম্যানেজমেন্টকে স্পিন আধিক্য দল বানাতে। ঘরের মাটিতে বাংলাদেশ সর্বশেষ টেস্ট খেলেছে চট্টগ্রামে। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া জিতেছিল ৭ উইকেটে। ওই ম্যাচে ব্যবধান গড়ে দিয়েছিলেন অফ স্পিনার নাথান লিওন ১৩ উইকেট নিয়ে। চট্টগ্রামের উইকেটে যে স্পিনাররা সুবিধা পাবেন, সেটা পরিষ্কার। সেজন্যই সাকিববিহীন দলে স্পিনার ছয়জন। মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাইম হাসান দুই অফ স্পিনার। বাঁ হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম, সানজামুল ইসলাম ও আব্দুর রাজ্জাক রাজ এবং লেগ স্পিনার তানভীর হায়দার। দলে ছয় ছয়জন স্পেশালিস্ট স্পিনার দেখে স্পষ্ট, টিম ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনায় স্পিনিং উইকেট। অথচ, ত্রি-দেশীয় টুর্নামেন্টের ফাইনালে ধীরলয়ের উইকেটে মাত্র ১৪২ রানে গুটিয়ে যায় মাশরাফি বাহিনী।

টেস্ট পরিসংখ্যানে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ব্যবধান যোজন যোজন। ১৮ টেস্টের মুখোমুখিতে একটি মাত্র জয় বাংলাদেশের। সেটা আবার নিজেদের ১০০ নম্বর টেস্টে এবং দুই দলের মুখোমুখির সবশেষ টেস্ট। কলম্বোর প্রেমদাসা স্টেডিয়ামে প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ছিল ৩৩৮। মিরাজ, সাকিব ও তাইজুলের সম্মিলিত সংগ্রহ ছিল ৬ উইকেট। সাকিবের সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৪৬৭। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে স্বাগতিকরা করেছিল ৩১৯ রান। সাকিব নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। তামিমের আগ্রাসী ৮২ রানে ভর করে ৪ উইকেট হাতে রেখে ঐতিহাসিক জয় তুলে নেয়। বুধবার চট্টগ্রামে শুরু হতে যাওয়া টেস্টে আত্মবিশ্বাস জোগাবে কলম্বোর ঐতিহাসিক জয়টি।

টেস্টে দুই দলের সর্বশেষ মুখোমুখিতে জয়ের উচ্ছ্বাসে আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছে টাইগাররা। কিন্তু এটাও সত্যি, সাকিবের অভাব পূরণ হওয়ার নয়। ঐতিহাসিক ওই জয়ের নায়ক ছিলেন সাকিব। দুই ইনিংসে উইকেট নিয়েছিলেন ৬টি এবং ব্যাট হাতেও ছিলেন তুখোর। প্রথম ইনিংসে তার ১১৬ রানই ব্যবধান গড়ে দেয়। চট্টগ্রামে সাকিবের অভাব পূরণ করতেই স্পিনারদের আধিক্য।

ম্যাচে প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। কিন্তু তার চেয়েও বড় প্রতিপক্ষ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিনি কোচিং করিয়েছেন সাকিবদের। বাংলাদেশের শক্তি ও সামর্থ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রয়েছে তার। ত্রি-দেশীয় সিরিজেই সেটা প্রমাণ করেছেন হাতুরাসিংহে। টুর্নামেন্টের প্রথম দুই ম্যাচ হারলেও শেষ পর্যন্ত শিরোপা জিতেই মাঠ ছেড়েছেন হাতুরাসিংহে। তার পরিকল্পিনার কাছে ফাইনালে ধরাশায়ী হয়েছে সাকিব বাহিনী। সুতরাং টেস্টে রঙ্গনা হেরাথ, দিনেশ চন্ডিমলদের সামলানোর পাশাপাশি সামলাতে হবে হাতুরাসিংহের পরিকল্পনাকেও। এই লড়াইয়ে কতটা প্রস্তুত সাকিববিহীন বাংলাদেশ?

সর্বশেষ খবর