সোমবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ছত্রিশে ফেদেরারের বিশ

রাশেদুর রহমান

ছত্রিশে ফেদেরারের বিশ

ক্যারিয়ারের ২০ নম্বর গ্র্যান্ডস্লাম ট্রফি। আবেগি চুমুটা তাই বুঝি এত গভীর। গতকাল অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ক্রোয়েশিয়ার ম্যারিন চিলিচকে হারানোর পর সুইস তারকা রজার ফেদেরার —এএফপি

তার একেকটি সার্ভ যেন শেন ওয়ার্নের জাদুকরী স্পিন। একেকটি ব্যাকহ্যান্ড যেন মুরালিধরনের ঘূর্ণিঝড়। ফোরহ্যান্ডগুলো বুলেটগতির। প্রতিপক্ষ ম্যারিন চিলিচ সাড়ে ছত্রিশের ফেদেরারের কাছে নাস্তানাবুদ। বুড়ো ফেদেরারের বাঁক নিয়ে তেড়ে আসার ব্যাকহ্যান্ড আর ফোরহ্যান্ডের আঘাতে জর্জরিত ২৯ বছরের তরুণ ম্যারিন চিলিচ। বার বার অস্ত্র বদলেও বুড়োকে কাবু করতে পারলেন না ক্রোয়েশিয়ান চিলিচ। র্যাকেটগুলো শত্রু হয়ে উঠেছিল! প্রতিটা পয়েন্ট হারানোর সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষেপে যাচ্ছিলেন এ ক্রোয়েশিয়ান। একদিকে ঘাম ঝরানো শ্রম, অপরদিকে ব্যর্থতা। সবমিলিয়ে লালচে হয়ে উঠেছিলেন চিলিচ। যেন জ্বলন্ত আগুনের টুকরো। নিজের উপর রাগের পাশাপাশি ফেদেরারের উপর হয়ত বাড়ছিল শ্রদ্ধাবোধও!

লড়াইটা যে বেশ জমজমাট হবে, এর ইঙ্গিত টেনিস বিশেষজ্ঞরা দিয়েছিলেন আগেই। পুরো টুর্নামেন্টে একটাও সেট হারেননি ফেদেরার। কিন্তু গতকাল হারলেন দুটি। ফেদেরারের এই হার তরুণ ম্যারিন চিলিচের যোগ্যতারই প্রমাণ। কিন্তু অভিজ্ঞতা, ধৈর্য্য আর প্রচণ্ড পরিশ্রমের কাছেই হার মানলেন চিলিচ। ২০ নম্বর গ্র্যান্ডস্লামজয়ী ফেদেরার পুরো ম্যাচে ছিলেন ধীর শান্ত প্রকৃতির। কোনো পয়েন্ট হারলে ক্ষোভ নেই। জিতলেও তেমন উচ্ছ্বাস নেই। উচ্ছ্বাস তিনি করলেন ঠিকই। একেবারে ম্যাচ উইনিং পয়েন্টটা জিতে। পঞ্চম সেটের শেষ পয়েন্টটা জিতে ফেদেরার কিছুক্ষণ ধাতস্ত হলেন মাথা নিচু করে। হয়ত ভাবছিলেন, আবার আমি পারলাম! নিজের উপরই হয়ত বিস্মিত হয়েছিলেন তিনি। তারপর মাথা তুলে যখন তাকালেন, চোখে আনন্দাশ্রু। গ্যালারিতে থাকা স্ত্রী মিরকা ফেদেরারের দিকে তাকিয়ে উচ্ছ্বাসে লাফিয়ে উঠলেন। ভক্তদের অভিনন্দন গ্রহণ করলেন বীরোচিত আচরণে। যা অবিশ্বাস্য বলে মনে হতো, অসম্ভব বলে মনে হতো, ফেদেরার তো তাই করে দেখালেন। পুরুষ এককে কঠিন লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ২০টি গ্র্যান্ডস্লাম জিতবেন কেউ, এটা ভাবা ছিল কঠিন। সেই কাজটাই করে দেখালেন ফেদেরার। রজার ফেদেরার রেকর্ড ষষ্ঠবারের মতো অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতলেন। ৬-২, ৬-৭ (৫/৭), ৬-৩, ৩-৬, ৬-১ গেমের ম্যাচটাই বলছে, কতটা কঠিন ছিল লড়াই। পরাজিত চিলিচ তো স্বীকার করলেন বিষয়টা খোলাখুলিই। ‘ম্যাচটা খুবই কঠিন ছিল। তবে আমি ফেদেরারের বিপক্ষে ফাইনাল খেলেই রোমাঞ্চিত।’ আর ট্রফি ও ৪০ লাখ মার্কিন ডলারের প্রাইজমানি নিতে এসে ফেদেরার বললেন, ‘আমি সত্যিই আনন্দিত। তবে আপনাদের ধন্যবাদ জানাই আমাকে সমর্থন করার জন্য।’ এরপর আর বক্তব্যটা ঠিকভাবে শেষ করতে পারেননি ফেদেরার। আবেগের অশ্রু এসে সুইস এই তারকার কণ্ঠরোধ করে দেয়। তবে এর মধ্যেও প্রতিপক্ষ চিলিচের প্রশংসা করতে ভুললেন না তিনি।

 সেই সঙ্গে জানালেন, ক্যারিয়ারের এই শ্রেষ্ঠ সময়ে নিজেকে আরও অনেক সুযোগ দিতে চান ফেদেরার। আর সুইস তারকাকে কোর্টে খেলতে দেখে রড লেভার বললেন, ‘সে ১০ বছর আগে যেমন দারুণ খেলত এখনো তেমনটাই খেলে চলেছে।’

 

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর