বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

এত ত্যাগ এত অবদান তবু নিঃস্ব তিনি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

এত ত্যাগ এত অবদান তবু নিঃস্ব তিনি

ফুটবলার ওয়াজেদ গাজী

ওয়াজেদ গাজী বাংলাদেশের ফুটবলে পরিচিত নাম। খেলোয়াড় হিসেবে যেমন মাঠ কাঁপিয়েছেন। তেমনিভাবে প্রশিক্ষণেও নজর কেড়েছেন। এত ত্যাগ, ফুটবলে অনেক অবদান রাখার পরও গাজী আজ নিঃস্ব। গুরুতর অসুস্থ হয়ে অসহায়ভাবে দিন কাটাচ্ছেন। কেউ সহযোগিতা করা দূরের কথা খোঁজ খবর রাখার প্রয়োজনই মনে করছেন না। কলকাতা ফুটবলে যখন ঐতিহ্যবাহী মোহামেডানের দাপট তুঙ্গে সেই সময়ে এই ঐতিহ্যবাহী দলে নিয়মিত খেলেছেন। এরপর যশোরে আসেন। পাকিস্তান আমলে ইপিআইডিসি (পরবর্তীতে বিজেআইসি ও বিজেএমসি), ওয়ান্ডারার্সে দাপটের সঙ্গে খেলেছেন। স্বাধীনতার পর বিজেআইসিতেই থেকে যান। ১৯৭৩ সালে দলটির লিগ জয়ের পেছনে বড় ভূমিকা রাখেন গাজী।

রাইট আউট পজিশনে তার নৈপুণ্য দেখে দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে যেতেন। গতি ও টেকনিকের কারণে গাজীর টাইটেল দেওয়া হয় রকেট। ৬০ দশকে ইপিআইডিসিতে পশ্চিম পাকিস্তানি ফুটবলারদের প্রাধান্য থাকলেও গাজী থাকতেন নিয়মিত একাদশে। ১৯৭৪ সালে তিনি যোগ দেন ঢাকা মোহামেডানে। ১৯৭৫ সালে আবাহনীকে ৪-০ গোলে হারানোর পেছনে গাজীর সেই মনোমুগ্ধকর পারফরম্যান্স ভোলবার নয়। বার বার আবাহনীর শক্ত রক্ষণভাগ ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিলেন। নিজে একটি অসাধারণ গোল করেন। বাকি ৩ গোল হয়েছে গাজীর নিখুঁত পাশে। আগের বার লিগে নবম হলেও সেবার মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ১৯৭৬ সালে যোগ দেন ওয়ান্ডারার্সে। ১৯৭৭ সালে খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারে ইতি টানেন এই ক্লাব থেকেই। যার রক্তে ফুটবল মিশে গেছে তিনি কি মায়া ছাড়তে পারেন। রহমতগঞ্জ থেকে শুরু হয় গাজীর কোচিং ক্যারিয়ার। আরামবাগের দায়িত্ব নিয়ে গাজী যেন চমকে দেন ফুটবলপ্রেমীদের। ১৯৮৫ সালে সুপার লিগে তার যোগ্য প্রশিক্ষণে আরামবাগ ২-১ গোলে পরাজিত করে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডানকে। সেই থেকেই মূলত তারকা কোচের খ্যাতিটা পেয়ে যান গাজী। আরামবাগ ছেড়ে যোগ দেন মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদে। এই ক্লাবের কর্মকর্তা আরশাদ আলী মঙ্গল বলেছিলেন গাজী ভাইকে কোচের দায়িত্ব দিয়ে আমরা গর্বিত। সেই প্রতিদানও দেন গাজী। ১৯৮৮-৮৯ সালে দুর্বল দল মুক্তিযোদ্ধা লিগে চতুর্থ হয়ে চমক সৃষ্টি করে। সুপার লিগে দুরন্ত আবাহনীকে ২-০ গোলে হারানোর স্মৃতিটা এখনো জ্বল জ্বল করছে।

১৯৭৫ সালে প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে অভিষেক হয় গোপীবাগ ব্রাদার্স ইউনিয়নের। শিরোপা জিততে জনপ্রিয় দলটিকে অপেক্ষা করতে হয় প্রায় তিন দশক। ২০০৪ সালে আলফাজের নেতৃত্বে ব্রাদার্স লিগ চ্যাম্পিয়নের স্বপ্ন পূরণ করে। কোচ ছিলেন আবু নোমান নান্নু। পরের বছরই ব্রাদার্স থেকে বের হয়ে যান বেশ কজন তারকা ফুটবলার। এতে ভেঙে পড়েননি কর্মকর্তারা। তৎকালীন মেয়র সাদেক হোসেন খোকা জন্ম লগ্ন থেকে ব্রাদার্সের সঙ্গে জড়িত। তিনিই বলেন, গাজী ভাইকে আনলে এই সমস্যা কেটে যাবে। হয়েছিলও তাই। পরবর্তী মৌসুমে মোহামেডানকে শেষ ম্যাচে হারিয়ে শিরোপা ধরে রেখেছিল ব্রাদার্স। একবার জাতীয় দলের প্রশিক্ষক ছিলেন। তার প্রশিক্ষণে কায়দে আজম ট্রফিতে ভালোই খেলেছিল বাংলাদেশ। কোচ ও খেলোয়াড়ি জীবন মিলিয়ে গাজী ফুটবলে জড়িয়ে ছিলেন প্রায় ৬০ বছর ধরে। ২০১২ সালের তাকে আর দেখা যায়নি। বাংলাদেশের ফুটবলে এতদিন ধরে কেউ আর ছিলেন না। ফুটবলে গাজী ইতিহাস তৈরি করেছেন। কত তারকা খেলোয়াড় তার হাত ধরে সৃষ্টি হয়েছে হিসাব মেলানো মুশকিল। ফুটবলের পেছনে যিনি এত ত্যাগ স্বীকার করলেন সেই গাজীর দুঃসময়ে কেউ পাশে নেই। অর্থ সমস্যায় জটিল রোগের চিকিৎসাও করাতে পারছেন না। বাফুফে ও বিভিন্ন ক্লাব থেকে সহযোগিতা চাইলেও কেউ এগিয়ে আসছেন না। দুস্থ ক্রীড়াবিদদের জন্য ফান্ড রয়েছে। তাহলে গাজীর মতো ফুটবলার কেন বঞ্চিত হবেন। বাফুফে বা নীরব কেন? মৃত্যুর পথযাত্রী। সবকিছু হারিয়ে গাজীর শেষ আশ্রয় হয়েছে যশোরে মেয়ের বাড়িতে। ফুটবলে যে লোকটির এত অবদান তার চিকিৎসার ব্যাপারে সামান্য সহযোগিতা করাটা কি বড় কিছু। প্রশ্ন উঠেছে তাহলে ক্রীড়াঙ্গনে দুস্থ ফ্যান্ড কাদের জন্য।

সর্বশেষ খবর