বৃহস্পতিবার, ৮ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিজয়ের পতাকা ওড়াচ্ছেন নারীরাও

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বিজয়ের পতাকা ওড়াচ্ছেন নারীরাও

বাংলাদেশের নারীরা ক্রীড়াঙ্গনে সাফল্য আনবে এক সময় ভাবাই যেত না। সেই ভাবনা অনেক আগেই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। শুধু ঘরোয়া নয় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাতেও শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়ে মেয়েরাও দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনছেন। ওড়াচ্ছেন বিজয়ের পতাকা। স্বাধীনতার পর অ্যাথলেটিকসে ট্র্যাক কাঁপিয়েছিলেন সুলতানা কামাল। অসাধারণ নৈপুণ্যের কারণে তাকে অ্যাথলেটিকসের রানী বলা হতো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালের সঙ্গে সুলতানা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্টে তিনিও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সঙ্গে ৩২ নম্বর বাসভবনে নিহত হন। অ্যাথলেটিকসে সুলতানার যে ক্যারিশমা ছিল তাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সাফল্য আনা সম্ভব ছিল। কিন্তু এই সাড়া জাগানো অ্যাথলেটকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। দেশ হারায় ক্রীড়াঙ্গনে বড় এক সম্পদকে। রাজিয়া সুলতানা অনু, সুফিয়া খাতুন, শর্মিলা রায়ও অ্যাথলেটিকসে নজর কাড়া পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেন। সত্তর দশকের শুরুতেই ক্রীড়াঙ্গনে রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি করেন রানী হামিদ। বাংলাদেশের দাবায় মহিলাদের সেভাবে আগমন ঘটত না। রানী হামিদই প্রথম মহিলা হিসেবে প্রমাণ রাখেন দাবার চাল দিতে নারীরা কম পারদর্শী নয়। ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক আসরে কত যে ট্রফি জিতেছেন তার হিসেব মেলানো মুশকিল। বাংলাদেশে প্রথম মহিলা দাবারু হিসেবে আন্তর্জাতিক মাস্টারের খ্যাতিও পান। এরপর বেশ কজন মহিলা দাবারু এসেছেন এবং সাফল্যও পাচ্ছেন কিন্তু রানী হামিদের মতো খ্যাতি বা জনপ্রিয়তা কেউ পাননি। ১৯৭৩ সালের শেষের দিকের কথা। বৃহত্তর রংপুর বিভাগ থেকে ঢাকায় খেলতে আসেন এক কিশোরী। নাম তার কামরুন নাহার ডানা। মূলত ব্যাডমিন্টনে পারদর্শী হলে টেবিল টেনিসেও দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন। এই ডানাই পরবর্তীতে হয়ে যান দেশ সেরা ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়। জাতীয় প্রতিযোগিতায় বেশ কবার শিরোপা জেতার রেকর্ড রয়েছে তার। একক ইভেন্টে তিন বার, ডাবলসে ও মিক্সড ডাবলসে মিলিয়ে ১২ বার চ্যাম্পিয়ন। ব্যাডমিন্টনে ডানার এই রেকর্ড এখনো কারও পক্ষে ভাঙা সম্ভব হয়নি। টেবিল টেনিসে এককে চ্যাম্পিয়ন না হলেও ডাবলসে তার চ্যাম্পিয়নের কৃতিত্ব রয়েছে। ব্যাডমিন্টন ও টেবিল টেনিসে একই সঙ্গে জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করেন ডানা। খেলোয়াড়ি জীবনে ইতি টানলেও খেলার মায়া ছাড়তে পারেননি। জড়িয়ে পড়েন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে। মহিলা ক্রীড়া সংস্থার পাশাপাশি ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। মেয়েদের ফুটবলে দল গড়ার পেছনে তার সাহসী ভূমিকা কখনো ভুলবার নয়। মুনিরা মোর্শেদ হেলেন। টেবিল টেনিসে নারীদের প্রথম চ্যাম্পিয়ন হন। ১৯৭৪ সালের দিকেই মূলত ঘরোয়া টিটি শুরু। একা খেলেননি, ছোট বোন জোবায়েরা রহমান লীনুর সেই সময় বয়স এত কম ছিল যে টেবিলের নাগাল পেত না। তবু কিশোরী বয়সে তার খেলা দেখে মুগ্ধ হয়ে যেতেন দর্শকরা। বড়  বোন হেলেনের অনুপ্রেরণায় ধীরে ধীরে এগুতে থাকেন। টানা ১৬ বার চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে গ্রিনিজ বুকে নাম লেখান লিনু। টেবিল টেনিস খেলেই সুপারস্টারের খ্যাতি পান তিনি। সাইক্লিংও তার পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতো। শুটিংয়ে সাবরিনা সুলতানা আলোড়ন তোলেন। কমনওয়েলথ গেমসে না পারলেও কমনওয়েলথ শুটিংয়ে সোনা জেতার কৃতিত্ব রয়েছে তার। শারমিন আকতারের পারফরম্যান্সও সাড়া ফেলেছিল। সাঁতারে মাহফুজা খাতুন শিলা, ভারোত্তোলনে মাবিয়া আক্তার সীমান্ত গত এস এ গেমসে সোনা জিতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেন। কুস্তিতেও নারীরা পিছিয়ে নেই। শিরীন সুলতানা ও রিনা আন্তর্জাতিক গেমসে পদক জিতেছেন। আরচারিতেও মেয়েরাও এগিয়ে আসছে। উল্লেখিত নামের মধ্যে অনেকে নজর কাড়া সাফল্যের জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। পুরুষদের চেয়ে কোনো খেলাতেই কম যাচ্ছেন না নারীরা। সাংগঠনিক দিক দিয়ে পিছিয়ে নেই নারীরা। বিশেষ করে মাহফুজা খাতুন কিরনের কথা না বললেই নয়। ২০১৭ সালে তিনি ফিফার কাউন্সিলর মেম্বার হন। আসা যাক দলীয় খেলায়। ফুটবলে এখন পুরুষদের চেয়ে নারীরাই সাফল্য আনছে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে পুরুষদের যেখানে সেমিতে খেলাটা স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। সেখানে নারীদের জাতীয় দল রানার্স আপ হয়ে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে। জুনিয়র সাফেও অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। খেলেছে অনূর্ধ্ব-১৮ এএফসি কাপে চূড়ান্ত পর্বেও। সাবিনা, মার্জিয়া, কৃষ্ণা, আখিদের নাম আজ সবার মুখে মুখে। ভালো পারফরম্যান্স শো করার কারণে নারী ফুটবলাররা বিদেশি লিগেও অফার পাচ্ছেন। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের নারীদের অবস্থাও মজবুত হচ্ছে। মাশরাফি, সাকিবদের মতো সাফল্য না পেলেও নারী ক্রিকেটাররা এগিয়ে চলেছেন। এশিয়ান গেমসে পদক জেতার রেকর্ডও রয়েছে। খেলছে ওয়ানডে ও টি-২০ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। সালমা খাতুন, জাহানারা আলম, লতা মণ্ডল, রুমানা আহমেদ, শুকতারারা এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটে তারা হয়ে জ্বলে উঠছেন। হ্যান্ডবল, কাবাডি, বাস্কেল বল, ভলিবল সব খেলাতেই নারীদের বিচরণ। যেভাবে এগুচ্ছে তাতে নারীরাই এনে দিতে পারে বিশ্বকাপের মতো বড় শিরোপাও।

সর্বশেষ খবর