শুক্রবার, ১৬ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

মেসির ‘চেলসি’ শিকার

রাশেদুর রহমান

মেসির ‘চেলসি’ শিকার

আগের ম্যাচে তীক্ষ্নধার পায়ে চেলসির গোলবারটা খুঁচিয়েছিলেন মাত্র। স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে লিওনেল মেসির জাদুকরি একটা মুহূর্তে আহত হয়েছিল চেলসি। কিন্তু ন্যু ক্যাম্পে একেবারে পূর্ণ শিকারে পরিণত হবে, কে ভেবেছিল! মেসিভক্তরা হয়ত কিছুটা আন্দাজ করেছিলেন। একদিকে বেশ কয়েকদিনের বিশ্রাম। অন্যদিকে বাবা হিসেবে হ্যাটট্রিক করার আনন্দ। সবমিলিয়ে লিওনেল মেসি ছিলেন দুরন্ত। চেলসি এমন মেসিকে রুখবে, সে সাধ্য কোথায়! উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শেষ ষোলর দ্বিতীয় লেগে গত বুধবার ৩-০ গোলে চেলসিকে উড়িয়ে দিয়েই শেষ আট নিশ্চিত করল লা লিগার শিরোপা অনেকটাই নিশ্চিত করে নেওয়া বার্সেলোনা। ট্রেবল (লা লিগা, কোপা দেল রে ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ) জয়ের সুযোগটা আরও বেড়েই গেল। এ যেন বাজ পাখির চোখ। দূর থেকে সবচেয়ে সেরা সম্ভাবনাটা বুঝে নেওয়া। শিকারের দুর্বলতম স্থানটি খুঁজে নেওয়া। এরপর আচমকা চোখ বুঁজে শিকার লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়া। লিওনেল মেসিকে খেলতে দেখে ঠিক তাই মনে হয়েছে গতকাল। তিনি হঠাৎ করেই মাঝ মাঠ থেকে উঠে আসছেন। বল কখনো চালাচালি করছেন সুয়ারেজ অথবা ইনিয়েস্তার সঙ্গে। তারপরই সব শেষ। চেলসির সর্বনাশ ডেকে আনা। এক সময় অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে খেলে যাওয়া দুর্ভেধ্য গোলরক্ষক কর্টয়েসের ফাঁকফোকর গলে গোল। লিওনেল মেসি দুটি গোল করেছেন গতকাল। একটিতে এসিস্ট করেছেন সরাসরি। সবমিলিয়ে ম্যাচটা হয়ে রইল মেসিময়। প্রথম গোলটা এসেছে ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই। ডান দিক থেকে অনেকটা জিরো ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে কর্টয়েসের দুই হাত ও বুকের ফাঁক দিয়ে বল পুরে দিয়েছিলেন মেসি। চেলসি কোচ অ্যান্টোনিও কন্তের অবিশ্বাসভরা চোখ নিয়ে তাকিয়ে ছিলেন মেসির দিকে। আর ভালভার্দে নেচেকুদে একাকার। ম্যাচের ২০তম মিনিটে ওসমান ডেম্বলেকে দিয়ে একটি গোল করান মেসিই। এরপর ফ্যাব্রিগাসরা আর ম্যাচটা জিতবে বলে নিজেরাই বিশ্বাস করেননি। কয়েক মৌসুম আগেও ফ্যাব্রিগাস ছিলেন মেসির সতীর্থ। আর্জেন্টাইন জাদুকরকে বল এগিয়ে দেওয়ার কাজটা দারুণ করতেন তিনি। ছেলেবেলায় লা মাসিয়ায় দুজন বড় হয়েছেন একসঙ্গে। তিনি জানতেন, মেসির পায়ে কী ধরনের কারুকার্য আছে। কিন্তু সেই ফ্যাব্রিগাসও হতভম্ব গতকাল। ম্যাচের ৬৩তম মিনিটে কর্টয়েসের দুই পায়ের ফাঁক গলে মেসির নেওয়া জাদুকরি শটে বলের ঠাঁই হয় চেলসির জালে। এই গোলটা চেলসি শিবিরকে পুরোপুরিই স্তব্ধ করে দেয়। আর লিওনেল মেসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গোলের সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন (১২৩ ম্যাচে ১০০ গোল)।

 ১৪৮ ম্যাচে ১১৭ গোল নিয়ে শীর্ষে আছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। লিওনেল মেসিকে এভাবে খেলতে দেখে চেলসি কোচ কন্তে বলে দিলেন, ‘ও যেভাবে বার্সেলোনার জন্য নিজেকে উজাড় করে খেলে, মনে হয় না কখনো এই ক্লাব ছেড়ে যাবে।’

মূলত ম্যাচের প্রথমার্ধেই পরাজয় মেনে নিয়েছিলেন চেলসি কোচ। তারপরও উইলিয়ান, ফ্যাব্রিগাস আর কস্তারা চেষ্টার কোনো কমতি রাখেননি। কিন্তু পিকে-উমতিতি আর রবাতো-আলবাদের দুর্ভেধ্য প্রাচীর ভেদ করতে পারেননি তারা। যদিও বা দুয়েকবার পেরেছেন তা ফিরে এসেছে জার্মান গোলরক্ষক টার স্টেগান নামক দেয়ালে আঘাত খেয়ে। অবশ্য দুয়েকবার গোলবারেও আঘাত হেনেছে উইলিয়ানদের শট।

চেলসির বিপক্ষে বার্সেলোনা কী করবে, এই নিয়ে সংশয় ছিল অনেক। তবে সব সংশয়ের অবসান ঘটিয়ে দুর্দান্তভাবেই শেষ আটে টানা ১১তম বারের মতো কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করল কাতালানরা। ২০০৭-০৮ মৌসুমের পর আর কখনোই শেষ আটের আগে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বিদায় নেয়নি তারা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর