বুধবার, ২১ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

আফসোস ও হতাশার দুই ফাইনাল

ক্রীড়া প্রতিবেদক

আফসোস ও হতাশার দুই ফাইনাল

ক্রিকেট ও হকির দুই ফাইনালে বাংলাদেশের হার। নিদাহাস ট্রফিতে বাংলাদেশ ফাইনালে হেরেছে ভারতের কাছে। ট্রফি প্রায় সাকিবদের হাতে এসেই গিয়েছিল। ক্রিকেটে প্রথম শিরোপা জেতার উৎসবের প্রস্তুতি নিচ্ছিল দেশবাসী। কিন্তু এমনভাবে ট্রফি ফসকে যাবে তা কেউ ভাবতেও পারেনি। শেষ বলে জিততে হলে ভারতকে ছক্কা হাঁকাতে হবে। বাউন্ডারি হলে খেলা টাই হয়ে যাবে। না, চোখের পলকে সৌম্যের বলে দীনেশ কার্তিক ছক্কা হাঁকালেন। ট্রফি জিতে নিল ভারত। বেদনায় সৌম্যের চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে। বিমর্য চেহারায় সাকিব মাটিতে বসে পড়লেন। শুধু সাকিব কেন পুরো দেশেরই তখন একই চেহারা। ক্রিকেটে বাংলাদেশ টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০তে সিরিজ জিতলেও এখন পর্যন্ত কোনো ট্রফি জিততে পারেনি। দুবার এশিয়া কাপে ফাইনালে খেলেছে। একবার পাকিস্তানের কাছে জেতা ম্যাচ হেরে সাকিবদের সেকি কান্না। আরেক ফাইনালে অবশ্য ভারতের কাছে বড় ব্যবধানে হার মেনেছিল। ঢাকায় কিছুদিন  আগে ত্রিদেশীয় ফাইনালে শ্রীলঙ্কার কাছেও হেরে যায়। শ্রীলঙ্কার ৭০তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে নিদাহাস ট্রফির আয়োজন করা হয়। ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশকে নিয়ে আয়োজিত এই টুর্নামেন্টে ঢাকা ছাড়ার আগে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বলে গিয়েছিলেন শিরোপার লক্ষ্য নিয়ে আমরা মাঠে নামব। তার কথা কেউ ততটা গুরুত্ব দেননি। না দেওয়ার কারণও ছিল ঘরের মাঠে লঙ্কানদের কাছে নাকানি-চুবানি খেয়েছে। তারপর আবার নিদাহাস ট্রফিতে ভারত অংশ নিচ্ছে। কিছুদিন আগে তারা দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রোটিয়াদের বিধ্বস্ত করেছে। যদিও বিরাট কোহলি, মহেন্দ্র সিং ধোনিসহ বেশ কজন খেলোয়াড় দলে ছিলেন না। তারপরও কি তাদের ফেলে দেওয়া যায়। দর্শকদের ধারণা ছিল নিদাহাস ট্রফিতে ভারত ও শ্রীলঙ্কা ফাইনাল খেলবে। উদ্বোধনী ম্যাচে শ্রীলঙ্কা হারায় ভারতকে। পরের ম্যাচে ভারতের সামনে আবার বাংলাদেশ দাঁড়াতে পারেনি। ব্যাটিং ও বোলিং দুটো ক্ষেত্রেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে টাইগাররা। এতে করেই অনেকে নিশ্চিত হয়ে পড়েন ফাইনালে দেখা মিলবে না টাইগারদের।

এই হারের পরই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ায়। টাইগাররা সত্যিকারে টাইগার রূপ ধারণ করে। পরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কা যেন রানের বন্যায় ভাসিয়ে দেয় বাংলাদেশকে। নির্ধারিত ২০ ওভারে লঙ্কানরা টার্গেট দেন ২১৫ রানের। টি-২০ ২০০ অতিক্রম করে জয় পাওয়াটা এখন কঠিন কিছু নয়। কিন্তু বাংলাদেশ ২১৪ টপকিয়ে জয় পাবে অবিশ্বাসই মনে হচ্ছিল। সেই অবিশ্বাসকে বিশ্বাসে রূপ দেয় বাংলাদেশ। মুশফিকের যাদুকরি ব্যাটিং, লিটন ও তামিমের দৃঢ়তার বাংলাদেশ ইতিহাসের পাতায় লিখিয়ে ফেলে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে। এই অবিস্মরণীয় জয় কখনো ভোলবার নয়। পরের ম্যাচে ভারতের কাছে হারলেও ম্যাচটি রিয়াদদের হাতেই ছিল। শ্রীলঙ্কাকে পরে ম্যাচে হারায় আরও নাটকীয়ভাবে। শেষ ২ বলে জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ছিল ৬ রানের। রিয়াদ অবিশ্বাস্যভাবে এক বল আগেই ছক্কা মেরে অবিস্মরণীয় জয় এনে দেন। অলিখিত সেমিফাইনালে ফাইনালে চলে যায় বাংলাদেশ।

ফাইনালে বাংলাদেশ দুঃখজনকভাবে হারলেও টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের প্রাপ্তি একেবারে কম নয়। বিশেষ করে টি-২০ ঘিরে বাংলাদেশকে নিয়ে যে সমালোচনাটা হতো তা সব কেটে গেছে নিদাহাস ট্রফিতে। ট্রফি না জেতায় আফসোস রয়েছে। কিন্তু হতাশা নেই। বরং বিশ্বজুড়েই প্রশংসায় ভাসছে রিয়াদ, মুশফিক, তামিমরা।

আসা যাক হকির ফাইনাল প্রসঙ্গে। এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেতে বাংলাদেশ বাছাইপর্ব খেলতে গিয়েছিল ওমানে। ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এশিয়ান গেমসে রাসেল মাহমুদ জিমিরা খেলবেন এনিয়ে কারও সংশয় ছিল না। কেননা বাছাইপর্ব থেকে সেরা পাঁচ দল এশিয়ান গেমসে খেলবে। কিন্তু বাংলাদেশের টার্গেট ছিল চ্যাম্পিয়ন হয়েই এশিয়ান গেমসে যাওয়া। আগেই ধারণা করা গিয়েছিল বাংলাদেশ-ওমান ফাইনালে মুখোমুখি হবে। হয়েছেও তাই, কিন্তু চ্যাম্পিয়নের বদলে রানার্সআপ হয়েই বাংলাদেশকে এশিয়ান গেমস খেলতে হবে। ওমানের কাছে ২-০ গোলে হেরে গেছেন জিমিরা।

কথা হচ্ছে, ওমানের কাছে হারবে কেন? তারা কি হকির কোনো পরাশক্তি? শুধু এবার নয়, ওমানের বিপক্ষে খেলা মানেই বাংলাদেশ চাপে থাকে। ওমানের কাছে বার বার যখন এই দশা তাহলে হকিতে আর বাংলাদেশ এগুলো কই? পেছনেই পড়ে থাকল। ক্রিকেট ফাইনালে হার নিয়ে আফসোস আছে কিন্তু হকিকে ঘিরে হতাশাটা আরও বেড়ে গেল। প্রশ্ন উঠেছে কোন পথে যাচ্ছে হকি? ফাইনাল কেন, বাংলাদেশতো সেমিফাইনালে জিতেছে ভাগ্যের জোরে। অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল শ্রীলঙ্কা দুবার এগিয়ে গিয়েছিল। শেষ দিকে নাটকীয়ভাবে জয় পেয়ে গেছেন জিমিরা। ক্রিকেটে না হয় শ্রীলঙ্কা অনেক শক্তিশালী। হকিতে তো নাম-ডাক নেই। তারপরও শ্রীলঙ্কাকে হারাতেই ঘাম ঝরাতে হয়।

আফগানিস্তানকে ২৫-০ গোলে হারিয়ে জাতীয় দল রেকর্ড গড়েছে। এই রেকর্ডে গৌরব করার কিছু আছে কি? আফগানরা তো থাইল্যান্ড ও হংকংয়ের কাছে গোলের বন্যায় ভেসে গেছে। যে দল ঠিকমতো স্ট্রিক ধরতে পারে না তাদের ২৫ গোলে হারানোটা কি বড় কিছু। বাংলাদেশ কি হকি খেলে শুধু থাইল্যান্ড, হংকং, আফগানিস্তান বা চাইনিজ তাইপেকে হারাতে? এই জন্য কি কর্মকর্তার পরিশ্রম করে যাচ্ছেন? আসলে হকিকে ঘিরে ভাববার সময় এসেছে। তা না হলে পরিণতি আরও করুণ হতে পারে।

সর্বশেষ খবর