সোমবার, ২৬ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

তবু বঞ্চিত আলী ইমাম

স্বাধীন বাংলা দল গঠনে বড় অবদান

ক্রীড়া প্রতিবেদক

তবু বঞ্চিত আলী ইমাম

আলী ইমাম, নওশের, সালাউদ্দিন ও পিন্টু (বাঁ থেকে)

আলী ইমাম। বাংলাদেশের ফুটবলের সু-পরিচিত নাম। ওয়ান্ডারার্স, আবাহনী, ইস্টএন্ডসহ বেশ কটি ক্লাবে সুনামের সঙ্গে খেলেছেন। খেলোয়াড়ি জীবনের ইতিটানার পর প্রশিক্ষক হিসেবেও তিনি সুনাম কুড়িয়েছেন। আলী ইমামই দেশের একমাত্র প্রশিক্ষক যার অনুশীলনে ফুটবলে দুই প্রধান আবাহনী ও মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ১৯৮৪ সালে আবাহনী ও ১৯৮৬ সালে মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হয় তার প্রশিক্ষণে। আরেক জনপ্রিয় দল ব্রাদার্স ইউনিয়নের প্রশিক্ষক ছিলেন আলী ইমাম। শিরোপার কাছে এসেও শেষ মুহূর্তে দলটি রানার্স আপ হয়।

তবে আলী ইমামের নামটি স্মরণীয় হয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার জন্য। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠনের পেছনে তিনি অন্যতম ভূমিকা রাখেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি আর্মিরা ঢাকা প্রথম বিভাগ লিগ চালু করতে চেয়েছিল। পাকিস্তান সমর্থিত সংগঠকদের নিয়ে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। আলী ইমাম তা ভালোভাবে টের পেয়েছিলেন। বুঝতে পেরেছিলেন ঢাকায় থাকলে জোর করে মাঠে নামানো হবে। সিদ্ধান্ত এমন ছিল যদি কোনো ক্লাব খেলতে রাজি না হয় তারপরও শুধু অফিস দল নিয়ে লিগ চলবে। তখন লিগে অফিস দলের সংখ্যা একেবারে কমও ছিল না। কিন্তু ফুটবলার খুঁজে না পাওয়ায় লিগ আর মাঠে গড়ায়নি। পাকিস্তানের আর্মিরা যেখানে পাখির মতো মানুষ হত্যা করেছে। জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে ঘর-বাড়ি। সেখানে বাঙালি হয়েও লিগ খেলবে তা কোনোভাবে মেনে নিতে পারেননি আলী ইমাম। চলে যান ভারতে। ফুটবলার বন্ধুদের ভারতে এসে স্বাধীন বাংলা দল গঠনের আহ্বান জানান। আলী ইমামই প্রথম ফুটবলার যার নাম তখন স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রে বলা হয়। অনেক ফুটবলারই বন্ধু ইমামের ডাকে সাড়া দিয়ে বিপদের ঝুঁকি নিয়েও ভারতে যান। স্বাধীন বাংলা দলও গঠন হয়। স্বাধীন বাংলা দল গঠন নিয়ে অনেকে কৃতিত্ব নিতে চান। দুঃখজনক হলেও এনিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি কম হচ্ছে না। কিন্তু একটা ব্যাপার লক্ষণীয় যে আলী ইমামের অবদানের কথা সবাই শ্রদ্ধা সহকারে স্মরণ করছেন। বলছেন স্বাধীন বাংলা দল গঠনের পেছনে ইমামের সাহসিকতার কথা কখনো ভোলবার নয়। তারপরও এত বড় ফুটবলার ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আলী ইমাম এখনো জাতীয় পুরস্কার পাননি। ১৯৮৯ সালে চিরকুমার এই ফুটবল ব্যক্তিত্ব মৃত্যু বরণ করেন। অনেকে মরণোত্তর পুরস্কারও পাচ্ছেন। কিন্তু আলী ইমামের নামটি থেকে যাচ্ছে আড়ালে।

দেখা যাচ্ছে অনেক ফুটবলার অবসর নেওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। বিস্ময় হলেও সত্যি যে জীবিত বা মৃত আলী ইমাম যোগ্যতার স্বীকৃতি এখনো পাননি। কথা হচ্ছে কেন, স্বাধীন বাংলা দল গঠনের পেছনে বড় ভূমিকা ও ফুটবলার এবং কোচ হিসেবে সফল হওয়ার পরও জাতীয় পুরস্কার থেকে তিনি বঞ্চিত থাকবেন কেন? এ কথা ঠিক স্বাধীন বাংলা দলের অনেক ফুটবলারই জাতীয় পুরস্কার পাননি। কিন্তু আলী ইমামের নামটিই তো বার বার আলোচনায় আসছে। সেখানে যোগ্য ব্যক্তিকে যোগ্যতার স্বীকৃতি দিতে সমস্যা কোথায়? অনেকে বলেন, জাতীয় পুরস্কারে যোগ্যতার পাশাপাশি বড় লবিংও লাগে। ইমামের পক্ষে লবিংটা হচ্ছে না বলেই তার নামটা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। জানি না এ সত্যতার কোনো ভীত আছে কি না। যদি থেকেও থাকে এর চেয়ে বড় ট্র্যাজেডি আর কি হতে পারে?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর