শুক্রবার, ৩০ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

টানেলের শেষ প্রান্তে আলোর দেখা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

টানেলের শেষ প্রান্তে আলোর দেখা

থাইল্যান্ড ও লাওস সফর শেষে অ্যান্ডু ওডের প্রশিক্ষণরত বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল দেশে ফিরেছে। তিন প্রস্তুতি ম্যাচে দুই জয় ও একটিতে হেরেছেন জামালরা —বাফুফে

ফুটবলে দীর্ঘদিন ধরে সু-খবর নেই। ট্রফি জেতাটা যেন স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। গেল তিন আসরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও জাতীয় দল সেমিফাইনালে খেলতে পারেনি। গ্রুপপর্ব খেলেই বিদায় নিয়েছে। এত হতাশার মধ্যেও অবশেষে টানেলের শেষ প্রান্তে আলোর দেখা মিলেছে। অন্ধকার থেকে বের হওয়ার আভাস পাওয়া গেছে। সেপ্টেম্বরে ঢাকায় সাফ ফুটবল। অতীত ঝেড়ে ফেলে ঘরের মাঠে ঘুরে দাঁড়াতে চায়। বাফুফে সেদিকে লক্ষ্য রাখছে ভালোভাবেই। অনুশীলন বা প্রস্তুতি এখুনি শুরু হয়ে গেছে। দেশ ছাড়াও কাতার ও থাইল্যান্ডে কন্ডিশনিং ক্যাম্পও করছে ফুটবলাররা। হাতে যখন সময় আছে বাফুফে নিশ্চয় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ঘিরে আরও কর্মসূচি নেবে। এবারের মতো প্রস্তুতি আগে কখনো দেখা যায়নি।

জাতীয় দলের কোচ অ্যান্ড্রু ওড বলেছেন, ভালো প্রস্তুতি নিলে অবশ্যই মাঠে জ্বলে ওঠা সম্ভব। কিন্তু প্রীতিম্যাচে বেহাল দশা দেখে শঙ্কিত হয়ে পড়েন ফুটবলপ্রেমীরা। কাতারে যাওয়ার আগে বিকেএসপিতে প্রীতিম্যাচে ঢাকা আবাহনীর কাছে ৪-০ গোলে হারে জাতীয় দল। থাইল্যান্ডে প্রথম প্রীতিম্যাচে অখ্যাত দল রাচাবুচির কাছে ১-০ গোলে হারে। এরপরই সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে। কেউ কেউ আক্ষেপের সুরে বলেও ফেললেন যতই প্রস্তুতি নেওয়া হোক না কেন ফুটবলের দুর্দশা কাটবে না। আসলে রাচাবুচির কাছে হারটা সত্যিই লজ্জাকর। দলে কোনো নাম করা খেলোয়াড় ছিল না। অথচ এমনি এক দলের কাছে হারল শেষ মিনিটে। হতাশা জেগে ওঠা স্বাভাবিক। ৭০ দশকে যেখানে থাইল্যান্ডের বিখ্যাত দল রাজবিথী ও ব্যাংকক ক্লাবকে হারাত বাংলাদেশের দুই জায়ান্ট মোহামেডান ও আবাহনী। সেখানে থাই লিগে নিম্নসারির দলের কাছে হারবে তা-কি ভাবা যায়। পরের ম্যাচটি ছিল গ্লাস এএফসি বিপক্ষে। থাইল্যান্ডে ফুটবলে তারা মোটামুটি শক্তিশালী দল। ধারণা ছিল এই ম্যাচে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হবে অ্যান্ড্রুর শিষ্যরা। না, গ্লাস এফসির বিপক্ষে দেখা গেল অন্য এক বাংলাদেশকে। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলা খেলে প্রতিপক্ষদের দিশাহারা করে রাখে। প্রথমার্ধেই ৩-০ গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। ৪-৩ গোলে শেষ পর্যন্ত জয়লাভ করে। সঙ্গে তৌহিদুল আলম সবুজের অনবদ্য হ্যাটট্রিক। অনেক দিন পর কোনো ম্যাচে জাতীয় দলের কেউ হ্যাটট্রিকের গৌরব পেলেন।

এই ম্যাচের পরই বাংলাদেশ আত্মবিশ্বাস ফিরে পায়। ২০১৬ অক্টোবরে ভুটানের কাছে হারের পর বাংলাদেশ ছিল আন্তর্জাতিক ফুটবলের বাইরে। প্রায় দেড় বছর পর মঙ্গলবার প্রস্তুতি ম্যাচের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ ছিল লাওস। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে তারা ১৪ ধাপ এগিয়েছিল। আগে একটি ম্যাচে মুখোমুখিতে লাওস ২-১ গোলে হারায় বাংলাদেশকে।

সেই বিচারে লাওসই ছিল ফেবারিট। প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ায় অনেকে ধরে নিয়েছিলেন বড় ব্যবধানে জিতে মাঠ ছাড়বে স্বাগতিক লাওস। কারণ এখন যে পারফরম্যান্স তাতে ২ গোলে পিছিয়ে জাতীয় দল ম্যাচে ফিরবে তা ভাবাই যায় না। যাক সব শঙ্কাকে দূরে ঠেলে দিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ যেন ম্যাজিক প্রদর্শন করে। ভিডিও দেখে মনে হচ্ছিল মাঠে যেন ৭০-৮০ দশকের ফুটবলাররা খেলছেন।

বিশেষ করে শেষ ১০ মিনিটে লাওস পাত্তাই পায়নি। শেষের দিকে এসে বাংলাদেশের গোল খাওয়ার রেকর্ড রয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার দেখা গেল নতুন এক বাংলাদেশকে। শেষ ১০ মিনিটেই ২ গোল পরিশোধ করে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফেরাটা স্মরণীয় করে রাখলেন জাফর ইকবাল-সুফিলরা।

বাংলাদেশ যেখানে গোল করতে ভুলেই গিয়েছিল। সেখানে এবার দুই প্রস্তুতি ম্যাচে পাঁচ গোল করেছে এক হ্যাটট্রিকসহ। ফুটবলাররা গোলে ফিরেছে এর চেয়ে বড় সু-খবর আর কি হতে পারে। তবে এমন পারফরম্যান্সের পরও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সময় আসেনি। টানেলের শেষ প্রান্তে সবে মাত্র আলো দেখা মিলছে। একে ভালোভাবে জ্বালাতে হলে কঠিন পরিশ্রম করতে হবে ফুটবলারদের। সাফ শুরু হতে এখনো প্রায় ছয় মাস সময় আছে। সামনে অনুশীলন ও আরও প্রস্তুতি ম্যাচ হবে। নিজেদের সেভাবে তৈরি হতে হবে। তা না হলে টানেলের শেষ প্রান্তে যে আলোর দেখা মিলেছে তা নিভে যেতেও সময় নেবে না।

সর্বশেষ খবর