মঙ্গলবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

এত অর্থ এত আয়োজন তবুও থামছে না বিতর্ক

ক্রীড়া প্রতিবেদক

এত অর্থ এত আয়োজন তবুও থামছে না বিতর্ক

খেলায় জয়-পরাজয় হবেই। একদল জিতবে বা হারবে এটাই স্বাভাবিক। এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠার সুযোগ নেই। কিন্তু বিতর্ক হচ্ছে বলে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। অবশ্য বিষয়টি নতুন নয়। আগেও ক্রিকেটে পক্ষপাতিত্ব অ্যাম্পায়ারিং বা ফুটবলে বাজে রেফারিং নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে যা ঘটছে তা ক্রীড়াঙ্গনের জন্য লজ্জা বা অশনি সংকেত বলা যায়।

ক্রিকেটে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। পৃথিবীর বিখ্যাত বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে বিশ্বকাপ জয়ের সামর্থ্য রাখে। সাকিব, মাশরাফি, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ এমনকি মুস্তাফিজ ও মিরাজ বিশ্ব ক্রিকেটে পরিচিত মুখ। সাকিবতো বেশ কবার বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হয়েছেন। যেকোনো সময় আবারও সেই খ্যাতি পেয়ে যাবেন।

ক্রিকেটের এই অগ্রগতির পেছনে খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের প্রশংসা করতে হয়। মাঠে খেলোয়াড়রা যেমন পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে দেশকে সাফল্য উপহার দিচ্ছেন। তেমনি কর্মকর্তারা পরিশ্রম করে এই খেলাকে সম্মানজনক স্থানে নিয়ে গেছেন। ওয়ানডে, টেস্ট ও টি-২০ তে লাল-সবুজের বিজয়ের পতাকা উড়ছে। অথচ এক সময়ে বার বার ব্যর্থতার কারণে ক্রিকেট অন্ধকারে হারিয়ে যেতে বসেছিল।

ক্রিকেটে সাফল্যের কারণে বিশ্ব বাংলাদেশকে চিনেছে নতুনভাবে। ফুটবলে যেমন ব্রাজিল আর্জেন্টিনা বিশ্ব দরবারে আলাদা মর্যাদা লাভ করেছে। তেমনিভাবে ক্রিকেটে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এত সাফল্যের পরও কষ্ট লাগে যখন ঘরোয়া আসরকে ঘিরে বিতর্ক হয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটে অগ্রগতি হঠাৎ করে হয়নি। এর পেছনে বড় অবদান আগের প্রথম বিভাগ বা বর্তমানে প্রিমিয়ার লিগ। রকিবুল, লিপু, নান্নু, আকরাম, বুলবুল, দুর্জয়, সুজন, ফারুক, রফিক, পাইলটদের মতো ক্রিকেটাররা তারকার খ্যাতি পেয়েছেন এই লিগ থেকেই। তারা পথ তৈরি করে দিয়েছিলেন বলে উত্তরসূরিরা দেশকে সম্মানজনক স্থানে নিয়ে গেছেন।

অথচ প্রিমিয়ার ক্রিকেট ঘিরেই যত বিতর্ক। আগেও হয়েছে কিন্তু এখনকার মতো লজ্জাকর নয়। লিগে সাফল্য পেতে ক্লাবগুলো কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে। এরপর যখন কোনো দল শিরোপার মুখ দেখে এর চেয়ে গৌরব বা আনন্দ কী হতে পারে। কথা উঠেছে পক্ষপাতিত্ব নিয়ে। মাঠে অ্যাম্পায়ারদের ভূমিকা ও ভেন্যু নির্ধারণ নিয়ে এতটা সমালোচনা হচ্ছে যেন শিরোপার নির্ধারণটা টেবিলেই নিষ্পত্তি ছিল। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে আর কষ্ট করে ক্রিকেটাররা খেলবে কেন? আগেই চ্যাম্পিয়নের ঘোষণা দিলেইতো চলে। এত অর্থ এত আয়োজন তবু বিতর্ক থামছে না।

এনিয়ে কথা হচ্ছিল একজন সংগঠকের সঙ্গে। ক্রিকেটে নিবেদিত প্রাণ বলা হয় তাকে। ক্রিকেটের সুখ-দুঃখের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন তিনি। এই সংগঠকই আক্ষেপ করে বললেন, ‘আগে টেনশনে থাকতাম দলের শিরোপা নিয়ে। ম্যাচ হারলে সেদিনের দিনটাই মাটি হয়ে যেত। অথচ ক্রিকেটের সোনালি সময়েও টেনশন নয়, বেদনায় কাঁদতে ইচ্ছা হয়। কারণ লিগে যা ঘটছে তাকে ক্রিকেট বলা যায় না। এতে হয়তো কেউ কেউ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন কিন্তু ক্রিকেটের কতটা যে ক্ষতি করে দিচ্ছেন তা ভাবছেন না। তাদের একটাই চিন্তা যেভাবে হোক নিজেদের দলকে চ্যাম্পিয়ন করাতে হবে। জানি না এতে লাভ কি? তারা কি একবারও ভাবছেন না ক্রিকেটের কত বড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে? সবই দেখছি কিন্তু কিছু করার নেই। অসহায়ভাবে সহ্য করতে হচ্ছে।’

এই সংগঠক যেমন নিজের নাম উল্লেখ করতে নিষেধ করেছেন। তেমনি তিনি কোনো দল বা ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেননি। কিন্তু সাম্প্রতিককালে ঘরোয়া ক্রিকেটে যা ঘটছে তাতে নিশ্চয় অনেকে বুঝতে পারবেন তার কষ্টের কথা। উইকেট নিয়ে প্রশ্ন তোলার যে কোনো ক্রিকেটারের অধিকার আছে। কারণ তারা মাঠে খেলেন। এখন তাও নিরাপদ নয়। মুখ খুললেও হয় বড় অঙ্কের জরিমানা না হয় নিষিদ্ধ হওয়ার ভয় আছে। কয়েক বছর আগে তৃতীয় বিভাগের এক ম্যাচকে কেন্দ্র করে কি ঘটনাটা না ঘটল। প্রিমিয়ারে রেলিগেশন ম্যাচেও অ্যাম্পায়ারদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। অ্যাম্পায়ারতো নিজ থেকে পক্ষ নেওয়ার পথ বেছে নেন না। এর পেছনে নিশ্চয়ই ওপরের নির্দেশনা থাকে। এখন এই যদি হয় অবস্থা তাহলে কি একে ক্রিকেট বলা যায়।

আসা যাক ফুটবল প্রসঙ্গে। এখানে বিতর্ক কম হচ্ছে না। তবে ফুটবলে আগের সেই উন্মাদনা নেই বলে আলোচনাটা সেভাবে হচ্ছে না। অফসাইডে থাকার পরও গোলের বাঁশি বাজানো হচ্ছে। নিশ্চিত পেনাল্টি অথচ রেফারি তা এড়িয়ে যাচ্ছেন। গোল লাইন ক্রস তবু বাঁশি বাজছে না। ফুটবলের দুর্দিনেও ক্লাবগুলো খেলোয়াড়দের পেছনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে। এখন যদি কোনো দলের পক্ষ নেওয়া হয় তাহলে ঢাকঢোল পিটিয়ে এতসব আয়োজন কেন? ক্রিকেট বা ফুটবল যে লিগ হোক এখানে বিতর্ক উঠবে কেন? দর্শকরা চায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা ম্যাচ। যা ৭০ বা ৮০ দশকে হতো। সাজানো নাটকে কোনো দল হয়তো লাভবান হচ্ছে। কিন্তু খেলাধুলার বারোটা যে বেজে যাচ্ছে সেই ভাবনা দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের আছে কি?

সর্বশেষ খবর