শিরোনাম
শনিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

অপ্রতিদ্বন্দ্বী মুশফিক

মেজবাহ্-উল-হক

অপ্রতিদ্বন্দ্বী মুশফিক

কাভার ড্রাইভ, অফ-ড্রাইভ, অন-ড্রাইভ, স্কোয়ার কাট, ফ্লিক, পুল, হুক— ক্রিকেটের সব শটেই সমান পারদর্শী মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশ দলের টেকনিক্যালি সেরা ব্যাটসম্যান। সবচেয়ে সাহসী ব্যাটসম্যানও। আকারে ছোট হলেও বিশ্বের বাঘা বাঘা সব বোলারকে কাঁদাতে তার জুড়ি নেই।

মুশফিকের মধ্যে রয়েছে ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটিং জিনিয়াস সুনীল গাভাস্কারের ছায়া! যেসব পেসার দেখলে ব্যাটসম্যানদের বুক কাঁপত, সেই মাইকেল হোল্ডিং, জুয়েল গার্নার, এন্ডি রবার্টস, কলিন ক্রফট, ডেনিস লিলি, জিওফ থমসনের মতো দীর্ঘদেহী গতিতারকাকে অনায়াসে সামলেছেন সুনীল। বাংলাদেশের মুশফিকও কম নন, যে কোনো বোলারের বিরুদ্ধে তিনি স্বচ্ছন্দে ব্যাটিং করার সাহস রাখেন। বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে পরিশ্রমী ক্রিকেটারও মুশফিক! অন্য ক্রিকেটাররা যেখানে একটুখানি সুযোগ পেলেই অনুশীলন না করে বিশ্রাম নেওয়ার কথা ভাবেন, সেখানে ঐচ্ছিক অনুশীলনের দিনও একান্তচিত্তে অনুশীলন করেন মুশফিক। সে কারণে সাফল্যও তার পায়ের কাছে এসে গড়াগড়ি খায়। বাংলাদেশ দল যখনই বিপদে পড়ে, তখনই হেসে ওঠে মুশফিকের ব্যাট। খাদের কিনারা থেকে দলকে যে কতটা টেনে তুলেছেন তার ইয়ত্তা নেই। এজন্যই মুশফিককে বলা হয় বাংলাদেশ দলের ‘ব্যাটিং মেরুদণ্ড’। কেউ কেউ ‘ব্যাটিং নিউক্লিয়াস’ও বলেন। তবে অসাধারণ ধারাবাহিকতার জন্য তাকে ডাকা হয় ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ নামেও। গাভাস্কার এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘কেউ যদি ভালো ব্যাটসম্যান হতে চায় সে যেন গাভাস্কার কিংবা টেন্ডুলকারের ব্যাটিং ফলো না করে রাহুল দ্রাবিড়ের ব্যাটিংয়ের প্রতিটি ভিডিও দেখে নেয়। সেটা ১০ রানের ইনিংস হোক বা সেঞ্চুরি হোক। দ্রাবিড় যে কটা বল ফেস করেন প্রতিটি শট এতটাই নিখুঁত যে, সেখানে শেখার আছে অনেক কিছু।’ বাংলাদেশের ক্রিকেটে এমন নিখুঁত ব্যাটসম্যান হচ্ছেন মুশফিক। না ব্যাটসম্যান নন, মুশি তো ক্রিকেট-শিল্পী। মাঠের বাইশগজ যেন তার ক্যানভাস আর ব্যাট হচ্ছে তুলি। যেদিন মেজাজে থাকেন সেদিন এঁকে ফেলেন একেকটি বিখ্যাত চিত্রকর্ম! মুশফিকের ছোট ছোট ইনিংসগুলোও দেখার মতো। তার প্রতিটি ইনিংস হতে পারে উঠতি ক্রিকেটারদের ‘পাঠ্যসূচি’র অংশ! বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাফল্যের অন্যতম রূপকারও মুশফিক। টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিও এসেছিল তার ব্যাট থেকেই। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার গলেতে খেলা মুশফিকের সেই ২০০ রানের ইনিংসটি যেন এখনো ক্রিকেটামোদীদের দৃষ্টিপটে ভাসছে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে খেলা ১৫৯ রানের ইনিংসটিই বা কম কিসে! ‘বাতাসের শহর’ ওয়েলিংটনে সেই টেস্টে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে গড়েছিলেন ৩৫৯ রানের জুটি। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত রেকর্ড জুটি।

টেস্টে মুশফিকের সেঞ্চুরি মাত্র ৫টি। তবে এর মধ্যে ৪টিই করেছেন দেশের বাইরে। ওয়ানডেতেও মুশফিকের সেঞ্চুরি ৫টি। সর্বোচ্চ ১১৭ রান করেছিলেন ভারতের বিরুদ্ধে। তবে মুশি তার ওয়ানডের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসটি খেলেছেন গত বছর কিম্বার্লিতে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ হেরে গেলেও ১১০ রানে অপরাজিত ছিলেন। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০— তিন ফরম্যাটের ক্রিকেট মিলে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের একমাত্র সেঞ্চুরি। টি-২০-তে মুশফিক কতটা ‘ভয়ঙ্কর’ তা দেখিয়ে দিয়েছেন চলতি বছর শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত নিদহাস ট্রফিতে। মাত্র ৩৫ বলে খেলেছেন ৭২ রানের হার না মানা ইনিংস। স্ট্রাইকরেট ২০৫.৭১, ছক্কা ৪টি ও বাউন্ডারি ৫টি। মুশফিকের মারকাটারি ইনিংসে ভর করেই বাংলাদেশ স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২১৫ রানের পাহাড়সম টার্গেট টপকে যায়। বাংলাদেশের রেকর্ড জয়। টি-২০-এর ইতিহাসেই রান তাড়া করে জয়ের তালিকায় চতুর্থ স্থানে টাইগারদের জয়টি। মুশফিক ছিলেন বলেই এমন একটি রেকর্ডে নাম লেখাতে পেরেছে বাংলাদেশ! প্রতিনিয়ত পারফর্ম করে মুশফিক নিজেই নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। জাতীয় দলে তার পজিশনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। পাইপলাইনেও মুশফিকের ব্যাকআপ কোনো ব্যাটসম্যান নেই। তাই এই তারকা ইনজুরিতে পড়লে বা কোনো সমস্যার কারণে খেলতে না পারলে তার অভাব পূরণ করাই কঠিন হয়ে যায়। অথচ টপ লেবেলের দলগুলোতে প্রতিটি পজিশনের জন্য ব্যাক ক্রিকেটার থাকে! রিজার্ভ বেঞ্চ শক্তিশালী থাকে। কোনো কারণে একাদশের নিয়মিত ক্রিকেটার দু-এক ম্যাচে খেলতে না পারলে পরে দলে সুযোগ পাওয়াই তার জন্য কঠিন হয়ে যায়। এমন কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতাই তো হওয়ার কথা! এ ক্ষেত্রে মনে হয়, বাংলাদেশই একটুখানি ব্যতিক্রম!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর