শুক্রবার, ৪ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

তরুণরাও অনেক মেধাবী

মেজবাহ্-উল-হক

তরুণরাও অনেক মেধাবী

এক সময় এদেশে ক্রিকেট ছিল ফুটবলের আড়ালে! আর ক্রিকেট বোর্ড বলতে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের দ্বিতীয় তলার দুটি কামরা। ধীরে ধীরে মাঠের ক্রিকেট যত আলো ছড়িয়েছে সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে গেছে ক্রিকেট বোর্ডের পরিধিও।

১৯৯৭ সালে মালয়েশিয়ায় আইসিসি ট্রফি জিতে প্রথমবারের মতো আইসিসি বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়ার মধ্য দিয়ে ক্রিকেট ফোকাসে আসে। তারপর একই বছর ‘ওয়ানডে মর্যাদা’ লাভ করে। ২০০০ সালে ‘টেস্ট মর্যাদা’ও পেয়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর ক্রিকেটকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মাঠের ক্রিকেটে অভূতপূর্ব সাফল্যের কারণে ক্রিকেট বোর্ডও এখন দেশের সবচেয়ে ধনী ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান।

‘মিসকিন থেকে মহারাজা’—দুই অবস্থাতেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে খুব কাছে থেকে যিনি দেখেছেন তিনি হচ্ছে আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি। এদেশের ক্রিকেটকে তিনি ‘নবজাতক’ থেকে ‘যৌবন’-এ পৌঁছা পর্যন্ত পাশে ছিলেন এবং আছেন।

ক্রিকেটের ‘পাইপলাইন’ শক্ত নয়—কিন্তু মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের মতো ৫ সিনিয়র আছেন বলেই দল ভালো করছে! সিনিয়র এই গ্রুপটা চলে যাওয়ার পর এদেশের ক্রিকেটে একটা চরম ধাক্কা খাবে বলে অনেকে মনে করেন। কিন্তু এমনটা মনে করছেন না আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি।

বাংলাদেশ প্রতিদিনকে ‘পাইপলাইন’ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘হতাশার কিছু নেই। বরং পাইপলাইন নিয়ে আমি আশাবাদী। আমাদের তরুণরাও অনেক মেধাবী। এই তরুণ ক্রিকেটাররাই খেলতে খেলতে অভিজ্ঞ হলে অনেক ভালো করবেন।’

সিনিয়র ৫ ক্রিকেটারের ‘রিপ্লেসমেন্ট’ কোথায়? এই ‘পঞ্চ পাণ্ডব’ -এর কেউ একজন ইনজুরিতে পড়লে তার উপযুক্ত ‘ব্যাকআপ’ ক্রিকেটার খুঁজে পাওয়া যায় না কেন? এমন প্রশ্নে আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি বলেন, ‘চাইলেই তো আর হঠাৎ করে জাতীয় দলে এসে কোনো তরুণ ক্রিকেটার মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহর মতো খেলতে পারবেন না। কারণ এই ৫ ক্রিকেটার দীর্ঘ দিন থেকে ক্রিকেট খেলছেন। অনেক দিন থেকে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করছেন। বিশ্বের অনেক মাঠে খেলেছেন। অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে তারা অনেক এগিয়ে গেছেন। এ কারণেই তারা ভালো করছেন। আমাদের কাছে তাদের নাম মুখস্থ। এটা খেলতে খেলতেই হয়।’

সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, লিটন কুমার দাসের মতো প্রতিভাবান তরুণ ক্রিকেটাররা জাতীয় দলে খেলছেন। কিন্তু তাদের ধারাবাহিকতা নেই। কখনো অনেক ভালো খেলেন, আবার কখনো খেই হারিয়ে ফেলেন। এছাড়া আরও বেশ কয়েকজন তরুণ ক্রিকেটার রয়েছেন যাদের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত, কিন্তু কিছুদিন পরেই নিভে গেছেন। এদেশের সম্পর্কে অভিজ্ঞ এই সংগঠকের অভিমত, ‘এজন্য আসলে তাদেরকে সময় দিতে হবে। যারা এসেছে তাদের মেধা আছে বলেই নেওয়া হয়েছে। অভিজ্ঞতার অভাবেই এখন অনেকে ভালো করতে পারছেন না। আমার বিশ্বাস একটা সময় পর এরাই জাতীয় দলে স্থায়ী হবে।’

প্রতিটি দলেই পাইপলাইনে একটা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে চলা হয়। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলে তরুণরা সুযোগ পাবেন হাইপারফরম্যান্স দলে। সেখানে ভালো করলে ‘এ’ দলে। ‘এ’ দলের হয়ে বিভিন্ন দেশ সফর করে ভিন্ন ভিন্ন কন্ডিশন ফেস করে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়ে খেলে অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ করে একজন ক্রিকেটার জাতীয় দলে খেলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেন। কিন্তু বাংলাদেশে দেখা যায় অনেক ক্রিকেটারকে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে সরাসরি জাতীয় দলে সুযোগ দেওয়া হয়। পাইপলাইন শক্ত থাকলে কি এভাবে অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে সরাসরি কোনো ক্রিকেটার জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেত? উত্তরে আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি বলেন, ‘অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে সরাসরি জাতীয় দলে নেওয়া যাবে না কেন? ওয়াকার ইউনুস, ওয়াসিম আকরামের মতো ক্রিকেটাররা কোন পর্যায়েই খেলেননি। তাদেরকে সরাসরি জাতীয় দলে নেওয়া হয়েছে। যাদের মধ্যে এই মেধা আছে তাদেরকে নেওয়া যাবে। তবে এটা অবশ্যই সার্বজনীন পন্থা নয়। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এমনটা হতে পারে।’

১৯৭৭-৭৮ মৌসুম থেকে টানা ১০ বছর ছিলেন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ক্লাব আবাহনী ক্রিকেট দলের ম্যানেজার। সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যান মাত্র ২৩ বছর বয়সেই। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত বোর্ডের সঙ্গে আছেন। ক্রিকেটের সঙ্গে আছেন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই সাজ্জাদুল আলম মনে করেন ক্রিকেট বোর্ডের পিছিয়ে পড়ার সুযোগ নেই।

ক্রিকেট যার ধ্যান-জ্ঞান, চিন্তা-চেতনা, অস্থি-মজ্জা —সর্বস্ব জুড়ে রয়েছে —এমন একজন নিঃস্বার্থ ক্রিকেটপ্রেমিক সংগঠক যে দেশের ক্রিকেটের সঙ্গে থাকে, সেদেশের ক্রিকেট কী আর পিছিয়ে পড়তে পারে?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর