রবিবার, ৬ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

ক্রিকেটে আসছে কঠিন সময়!

মেজবাহ্-উল-হক

ক্রিকেটে আসছে কঠিন সময়!

তার হাত ধরেই উঠে এসেছেন সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমের মতো তারকা ক্রিকেটার। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস তার কোচিংয়েই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। জাতীয় ক্রিকেট দলের সঙ্গেও টানা ৫ বছর (২০০৫-২০১০) যুক্ত ছিলেন। কখনো সহকারী কোচ, কখনো বা ফিল্ডিং কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এই ‘তিনি’ হচ্ছেন— দেশসেরা কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন। ক্রিকেটামোদীদের নিশ্চয়ই মনে আছে— ২০১৬ সালের আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে টানা তিন ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ার পর সাকিব আল হাসান টুর্নামেন্ট চলাকালীন ঢাকায় ছুটে এসেছিলেন তার গুরুর পরামর্শ নিতে। ফিরে গিয়ে সফলও হয়েছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। সেই গুরু ছিলেন এই মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন। দেশসেরা এই কোচ জানিয়েছেন, এদেশের ক্রিকেটের সামনে অপেক্ষা করছে ‘কঠিন সময়’! কারণ, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক যে সাফল্য তা এসেছে মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ— ৫ তারকা ক্রিকেটারের কাঁধে ভর করে। হয়তো আরও বেশ কয়েক বছর ভালো করবে বাংলাদেশ। কিন্তু তারপর?

পাইপলাইনে ৫ সিনিয়রের ‘উপযুক্ত’ বিকল্প ক্রিকেটার নেই। পাইপলাইন শক্ত করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও চোখে পড়ছে না! বাংলাদেশ প্রতিদিনকে মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন বলেন, ‘আমরা ১০ বছরেও তামিমের কোনো ওপেনিং পার্টনার তৈরি করতে পারিনি। মাশরাফির উপযুক্ত বোলিং পার্টনার করতে পারিনি। সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহর মানের অন্য কোনো ক্রিকেটারও দেখছি না। এটা কখনো দেশের ক্রিকেটের জন্য ভালো নয়।’

‘আমাদের দেশের তরুণ ক্রিকেটাররা অনেক মেধাবী।’ —কিন্তু মেধা পুরোপুরি প্রকাশ হওয়ার আগে তারা ঝরেও পড়ছেন। এমন ক্রিকেটার দলে এসেছেন, যাদের দেখে অমিত সম্ভাবনাময় মনে হয় প্রথমে, তারপর দু-এক ম্যাচ ভালো করে একের পর এক ফ্লপ হতে থাকেন, কারণ কী? সালাউদ্দীনের ভাষ্য, ‘মেধাবী ক্রিকেটার তো আর এমনি এমনি আসে না। মেধাবী ক্রিকেটার তৈরি করতে হয়। তরুণরা মেধাবী—কিন্তু এই মেধাবীদের পরিচর্যা করে যারা পরিপূর্ণ মেধাবী ক্রিকেটার বানাবেন— এমন লোকের সংখ্যা বেশি নেই এ দেশে। শুধু ক্রিকেটারের মেধা থাকলেই হবে না, সংগঠকেরও মেধা থাকতে হবে। এক মেধাবী তরুণকে মেধাবী ক্রিকেটার বানাতে যারা সহায়তা করেন সবাইকেই মেধাবী হতে হয়।’

এ সম্পর্কে আরেকটি উদাহরণ টেনে সালাহউদ্দীন বলেন, ‘স্কুল শিক্ষককে দিয়ে তো আর ইউনিভার্সিটির ক্লাস নিতে দিলে হবে না। যখন একজন ছাত্র স্কুল থেকে কলেজে যায় তখন তার কলেজের শিক্ষকই লাগবে। ভার্সিটিতে গেলে ভার্সিটির শিক্ষকই লাগবে। তা না হলে প্রতিভা কিন্তু নষ্ট হয়ে যাবে। তাই এ জন্য আমরাই দায়ী। আমাদের সিস্টেম দায়ী। এ জন্য ওই ক্রিকেটার দায়ী নয়।’

তাহলে ‘নতুন’ মাশরাফি, সাকিব তৈরি করতে না পারার ব্যর্থতা কার? দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা হিসেবে বিসিবি কি এর দায় এড়াতে পারে? সালাহউদ্দীন বলেন, ‘আমি তো বিসিবিকে ব্যর্থ মনে করি না এখন। ফল তো ভালোই হচ্ছে। সবাই তো ফলই দেখতে চায়। ৫ বছর পর যখন এই সিনিয়র ক্রিকেটাররা থাকবেন না তখন হয়তো বিসিবির এই বডিও থাকবে না। তাই তখন দল খারাপ করলেই কী? তখন যারা বোর্ডে থাকবেন তারাই ব্যর্থ হবেন। দলে ভালো ক্রিকেটার নেই সেটা তো আর কেউ দেখবে না, ফল ভালো হয়নি- যারা বোর্ডে আছেন তারা ব্যর্থ হবেন!’

জাতীয় দলে খেলার আগে থেকেই সাকিব-মুশফিককে দেখেছেন, এখনকার তরুণদেরও দেখছেন? বৈসাদৃশ্য কিছু চোখে পড়ছে? সালাহউদ্দীন বলেন, ‘সাকিব, তামিম, মুশফিকদের সঙ্গে এখনকার ক্রিকেটারদের মানসিকতাতেও রয়েছে বেশ তফাৎ। সাকিবরা তরুণ অবস্থায় চিন্তা করত বিশ্বমানের ক্রিকেটার হবে। কিন্তু এখনকার ক্রিকেটার এভাবে স্বপ্ন দেখতে পারে না। এখানেও দোষ আছে আমাদের। এই তরুণরাও যাতে স্বপ্ন দেখতে পারে সে জন্য আমাদেরই সহায়তা করতে হবে।’

কোচ সালাউদ্দীনের কথা থেকেই বোঝা যায়, সাম্প্রতিক সাফল্য এলেও দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে চলেছে। এমন অবস্থায় করণীয় কী? সালাহউদ্দীন বলেন, ‘আমি মনে করি, সামনে যারা আসবে তাদের এই ৫ জনের চেয়েও ভালো হতে হবে। তাদের সেভাবেই তৈরি করতে হবে। যদি এই ৫ ক্রিকেটারের মানের ক্রিকেটারও আসে তারপরও কিন্তু বলতে পারব না ক্রিকেট এগিয়েছে। এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। ‘এ’ দল শক্তিশালী করতে হবে। আমাদের দেশে এ দল সব সময়ই অবহেলিত থাকে। কোনো সফরে গেলে এ দলে বেশির ভাগ জাতীয় দলের ক্রিকেটার পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে বেশি বেশি তরুণ ক্রিকেটার পাঠাতে হবে। যাতে তাদের অভিজ্ঞতা বাড়ে, নিজেকে জাতীয় দলের জন্য প্রস্তুত করে তুলতে পারে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর