মাদক সেবনের অভিযোগে ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ থেকে বহিষ্কার করা হয় ম্যারাডোনাকে। বিশ্বসেরা ফুটবলারের বহিষ্কারাদেশ কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি বাংলাদেশের একজন আইনজীবী। ম্যারাডোনাকে বহিষ্কার ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে ফিফার বিপক্ষে মামলা ঠুকে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তোলেন ওই আইনজীবী। মামলার ওই খবর প্রচারিত হয় বিশ্বব্যাপী। তাতে স্পষ্ট হয়ে পড়ে ফুটবল মানে তলানিতে হলেও জনপ্রিয়তায় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশ বাংলাদেশ। র্যাঙ্কিংয়ে ২০৩ দেশের মধ্যে ১৯৭। অথচ গ্রাম থেকে গ্রামান্তর, নগর থেকে মহানগর-সর্বত্রই বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে নানা বর্ণের, নানা রঙয়ের পতাকায় সয়লাব বাড়ির ছাদ, গাছের মগডাল। আশ্চর্য হলেও সত্যি, সুনীল আকাশে পতপত করে উড়তে থাকা সেসব পতাকায় নেই বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা।
বিশ্বকাপ কাপ এলে উত্তেজনায় কাঁপতে থাকে বাংলাদেশ। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের দেশটির ১৬ কোটি জনতার রক্তে মিশে আছে। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, স্পেন, পর্তুগালের সমর্থন নিয়ে যে উন্মাদনা, তাতে অপরাপর দেশকে বিস্মিত করে। ১৯৩০ সাল থেকে চার বছর পরপর বসছে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর। বাংলাদেশের জনগণ টিভিতে বিশ্বকাপ দেখছে ১৯৮২ সালে ইতালি বিশ্বকাপ থেকে। এরপর থেকেই বাংলাদেশের ক্রীড়াপ্রেমীরা অপেক্ষায় থাকেন ফুটবল মহাযজ্ঞের। অপেক্ষায় থাকেন প্রিয় ফুটবলারদের ফুটবল সৌকর্য দেখার। মাত্র ২০ দিন পর মাঠে গড়াচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবল। নেইমার, লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোদের ফুটবলশৈলী দেখতে রাত জাগার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ফুটবলপ্রেমীরা। প্রিয় দলকে অন্তর দিয়ে কে কত বেশি ভালোবাসেন, সেটা প্রমাণ করতে প্রিয় দলের পতাকা উড়ানোর অলিখিত প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেন। এমনও দেখা গেছে একই বাড়ির ছাদে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স, পর্তুগালের পতাকা উড়িয়েছে। খিলগাও’র বাসিন্দা জুনায়েদ এলাহি বনশ্রী আইডিয়াল স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। ফুটবলে আর্জেন্টিনার সমর্থক মেসিকে পছন্দ করেন বলে। বাড়ির ছাদে আর্জেন্টিনার পতাকা উড়িয়ে বলেছেন, ‘এবার আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হবে। মেসি সেরা খেলোয়াড় হবেন।’ তার বড় বোন মেহেনাজ তাবাসসুমের সমর্থন আবার ব্রাজিলের। সেও বাড়ির ছাদে ব্রাজিলের পতাকা উড়িয়েছে। শুধু এরাই নয়, গোটা বাংলাদেশে একই চিত্র। সমর্থন নিয়ে সুক্ষ্ম একটি চিড় ধরে আমজনতার মাঝে। তবে শত্রুতার নয়, আনন্দের। সমর্থকরা যে হারে পতাকা উড়াচ্ছেন, তাতে করে পতাকা বানানোর হিড়িক পড়েছে গোটা দেশে। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, পর্তুগালসহ বিশ্বকাপের নানা দেশের পতাকা বানাতে নিদ্রাহীন রাত পার করছেন পতাকা নির্মাতারা। এমনও দেখা গেছে দিনে ২২ ঘণ্টা কাজ করেও অর্ডার সামাল দিতে পারছেন না। রাজধানী ঢাকার অদূরে মিরাজনগরের বাসিন্দা আলী হোসেন এক মাস ধরে ছোট-বড় পতাকা তৈরি করছেন। তাতেও কুলাতে পারছেন না অর্ডার সামাল দিতে, ‘গত দুই মাস ধরে আমি টানা কাজ করছি। এমনও হয়েছে কখনো কখনো দুই ঘণ্টাও ঘুমাতে পারিনি। তারপরও কাজ শেষ করতে পারছি না।’
বিশ্বকাপ চলাকালীন বাংলাদেশের আকাশ ছেঁয়ে থাকে নানা দেশের পতাকায়। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি পতাকা ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার। দুই দেশের সমর্থন নিয়ে চায়ের টেবিলে ঝড় উঠে। জমে উঠে আড্ডা। দুই ফুটবল পরাশক্তির সমর্থনে অপেক্ষাকৃত চাহিদা আর্জেন্টিনার বেশি বলেন হোসেন, ‘প্রতিদিন আমরা হাজার হাজার পতাকা তৈরি করি। আজকে আমরা ১১ হাজারের উপর আর্জেন্টিনার পতাকা তৈরি করেছি।’ আর্জেন্টিনার ২০০ মিটার লম্বা পতাকা নিয়ে মার্চ করেছেন সমর্থকরা। অবশ্য পিছিয়ে নেই ব্রাজিলের সমর্থকরাও। তারাও ৩০০ ফুট দীর্ঘ পতাকা নিয়ে মিছিল করেছেন।শুধু পতাকা নয়, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার জার্সিও বিক্রয় হয় প্রচুর। গুলিস্তানের ক্রীড়া সামগ্রী বিক্রেতা শহীদ বলেন, ‘ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার জার্সি বেশি বিক্রয় হয়। জার্সি প্রতিটি গড়ে ৫০০/৬০০ টাকা দামে বিক্রয় হয়। মেসি, নেইমার, রোনালদো নাম খচিত জার্সিও বিক্রয় হয় অনেক। এছাড়া সারা বছরই বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, লিভারপুলের জার্সিও বিক্রয় হয় অনেক।’
বিশ্বকাপ মানেই বাংলাদেশের ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে ছড়িয়ে পরে উন্মাদনা। সব কাজ বাদ দিয়ে বসে পড়েন টেলিভিশনের সামনে প্রিয় দলকে সমর্থন জোগাতে।