মঙ্গলবার, ৩ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

শেষ হলো ইনিয়েস্তার বুড়ো হাড়ের ভেলকি

আসিফ ইকবাল

শেষ হলো ইনিয়েস্তার বুড়ো হাড়ের ভেলকি

লিওনেল মেসি কিংবা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো তারকা খ্যাতি হয়তো নেই। ফুটবল প্রতিভায় কিন্তু দুই তারকার চেয়ে পিছিয়েও নেই। সাফল্যে বরং এগিয়ে। বলা হচ্ছে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার কথা। ৩৪ বছরের ইনিয়েস্তাকে বলা হয় স্প্যানিশ টিকিটাকা ফুটবলের ‘প্রফেসর’। বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে ঠাণ্ডা মাথার ফুটবলার তার ক্যারিয়ারে জিতেছেন বিশ্বকাপ, ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ। বার্সেলোনার হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, লা লিগা। বিশ্বকাপ ট্রফি জেতায় তিনি পেছনে ফেলেছেন বর্তমান বিশ্বের সেরা দুই তারকা মেসি ও রোনালদোকে। পরশু রাতে রাশিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নিয়েছে ২০১০ সালের চ্যাম্পিয়ন স্পেন। হারের সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে গেছে ফুটবল ‘প্রফেসর’ ইনিয়েস্তার বিশ্বকাপ। ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপে ইনিয়েস্তার বয়স হবে ৩৮, তখন দর্শক হয়েই উপভোগ করতে হবে ফুটবল মহাযজ্ঞ।

২০১০ সালে স্পেন ১-০ গোলে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে জিতেছিল বিশ্বকাপ ট্রফি। স্প্যানিশ ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে দামি ওই গোলটি এসেছিল ইনিয়েস্তার সোনালি বুট থেকে। ২০০৬ সাল থেকে বিশকাপ খেলছেন। বার্সেলোনার প্রাণভোমরা ইনিয়েস্তা জার্মানি বিশ্বকাপে মাত্র একটি ম্যাচ খেলেছিলেন। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচে অংশ নিয়ে গোল করেন ২টি। ২০১৪ সালে প্রথম রাউন্ড টপকাতে পারেনি স্পেন। এবার স্পেন বিশ্বকাপে খেলতে আসেন সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা দ্বিতীয় শিরোপা জিততে। প্রথম ম্যাচে পর্তুগালের সঙ্গে ড্র করে ৩-৩ গোলে। পরের দুই ম্যাচের একটিতে ইরানকে ২-১ গোলে এবং মরক্কোর সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে স্পেন। ম্যাচ তিনটিতে শুরু থেকে খেলেন ইনিয়েস্তা। ৩৪ বছর বয়সী প্রফেসরের খেলা সমালোচনা করেন সমালোচকরা। বলাবলি করছিল, ইনিয়েস্তার বুড়ো হাড়ের ভেলিক শেষ! সমালোচকদের ভয়েই হয়তো ভারপ্রাপ্ত কোচ ফার্নান্দো হিয়েরো শুরুতে একাদশে রাখেননি। তার জায়গায় নামান মার্কো অ্যাসেনসিওকে। কিন্তু অ্যাসেনসিও কোনো প্রভাব ফেলতে পারেননি ম্যাচে। তখনই পরিষ্কার হয়ে পড়ে ইনিয়েস্তা স্প্যানিশ ফুটবলের কতটা প্রভাব বিস্তার করে আছেন।

বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব বার্সেলোনার সঙ্গে ২১ বছরের সম্পর্ক শেষ করেছেন চলতি বছরে। নাম লিখিয়েছেন জাপানের ভিসেল পেভেল ক্লাবে। কিন্তু ২১ বছরের ইতিহাসে ইনিয়েস্তা যে ফুটবলশৈলী উপহার দিয়েছেন ফুটবলপ্রেমীদের, সেটার জন্য যুগ যুগ অপেক্ষায় থাকতে হবে কাতালানদের।

রাশিয়ার বিপক্ষে নকআউট পর্বে শুরু থেকে একাদশে না রাখায় এক সময়কার সমালোচকরা এখন সমালোচনা করছেন কোচের। দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন ইনিয়েস্তাকে শুরুতে না খেলানোয়। দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে ফুটবল প্রফেসর নামার পর আক্রমণে দলের গতি বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয়, রাশিয়ার গোলবার লক্ষ্য করে দুর্দান্ত একটি শটও নিয়েছিলেন ইনিয়েস্তা। তাকে শুরুতে না খেলানোয় এক সময়কার সতীর্থ সেস ফেব্রেগাস বিস্ময় প্রকাশ করেন, ‘আমি ওর সঙ্গে ১৫ বছর ধরে খেলেছি। আমি জানি ও কত বড়মাপের ফুটবলার। স্পেনকে কত সম্মান এনে দিয়েছেন। শুরুতে তাকে একাদশে না খেলানোয় সমালোচনা হবেই। এটা ঠিক হয়নি।’  

ইনিয়েস্তার বিদায়ে বিশ্ব হারালো এক ফুটবলশিল্পী। ইনিয়েস্তার মতো ফুটবলাররা আসেন যুগে যুগে। আরও একজন ইনিয়েস্তার অপেক্ষায় ফুটবলপ্রেমীদের থাকতে হবে দীর্ঘদিন।

সর্বশেষ খবর