শনিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিশ্বকে মুগ্ধ করল রাশিয়া

‘আমার দেখা সেরা টুর্নামেন্ট এটাই।’ গ্যারি নেভিলের এ টুইট রাশিয়ানদের গুরুত্বপূর্ণ একটা সার্টিফিকেট দিয়ে দিল। সাবেক একজন ইংলিশ ফুটবলারের কাছ থেকে এ সার্টিফিকেট পাওয়াটা নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ রাশানদের জন্য। বিশ্বকাপের আগে ব্রিটিশ মিডিয়াই সবচেয়ে বেশি সরব ছিল রাশিয়া সম্পর্কে নেতিবাচক খবর প্রচারে। কিন্তু রাশিয়ায় এসে মানুষ দেখল ভিন্ন চিত্র। এখানে নিরাপত্তা আছে। মেয়েদের প্রতি আছে অগাধ শ্রদ্ধা। বাচ্চাদের সবাই ভালো বাসে। কোনো মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেও কোনো ছেলে বাস-ট্রামে সিট না ছাড়লে তার দিকে কটাক্ষ করে সবাই। এমন এক দেশ নিয়ে এতটা নেতিবাচক খবর কেন প্রচার করল ব্রিটিশ মিডিয়া? সে ভিন্ন প্রসঙ্গ।

নেতিবাচক খবর প্রচারের পরও রাশিয়া বিশ্বকাপে লাখ লাখ মানুষ এসেছে। বিশ্বকাপের খেলা উপভোগ করেছে। রাশিয়ানদের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছে। একটা জাতি রাতারাতি এতটা ভালো হতে পারে না। পরার্থে যারা এগিয়ে যেতে মুখিয়ে থাকে। এমনকি সাহায্য না চাইলেও যারা এগিয়ে আসে। অপরিচিত মুখে অনিশ্চয়তার ছাপ দেখলে নিজের কাজ ফেলে ছুটে আসে। গোমরামুখে বসে থাকলে হাসিমুখে এগিয়ে এসে বলে, তোমার মন খারাপ কেন বন্ধু? এমন জাতি সম্পর্কে পূর্ব ধারণা বদলে পুরোপুরি নতুন এক ধারণা নিয়ে নিজ নিজ দেশে ফিরছে সারা দুনিয়ার ফুটবলভক্তরা।

ফিফা সভাপতি জিয়ানি ইনফ্যান্টিনো আগেই বলেছিলেন, সেরা একটা বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে রাশিয়ায়। বিশ্বকাপের শেষ লগ্নে এসে তিনি বললেন, ‘সর্বকালের সেরা বিশ্বকাপ আয়োজন করল রাশিয়া।’ গতকাল বিশ্বকাপের সমাপনী উপলক্ষে আয়োজিত লুঝনিকি স্টেডিয়ামে প্রেস কনফারেন্স এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এর ব্যাখ্যাও দিলেন— ‘এখানে ফুটবল সমর্থকরা উষ্ণ সংবর্ধনা পেয়েছেন। ভলান্টিয়াররা দারুণ কাজ করেছেন। হাসিমুখে প্রতিটি সমস্যার সমাধানে এগিয়ে গেছেন তারা। ফেয়ার একটা বিশ্বকাপ হলো রাশিয়ায়। নিরাপত্তার কোনো কমতি ছিল না। বিশ্বকাপে ৯৮ শতাংশ দর্শকই মাঠে এসেছেন। ৩ বিলিয়নের ওপর মানুষ টিভিতে খেলা দেখেছেন।’

এ তথ্যগুলো দেওয়ার পর আরও একবার ফিফা সভাপতি বললেন, ‘এটাই সেরা বিশ্বকাপ।’ অথচ বিশ্বকাপের দিন কয়েক আগেও ইংল্যান্ডের মতো দল বলছিল, রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলতে যাবে কিনা তারা ভাবছে।

প্রতিটি শহরেই ফুটবল সমর্থকদের জন্য বিশাল ফ্যানজোন তৈরি করেছে। ১১টি শহরের এই ফ্যানজোনগুলোয় ৭ মিলিয়ন ফুটবল সমর্থক এসেছেন উৎসব করতে। নানান জাতির এসব ফুটবল সমর্থকরা নিজেদের সংস্কৃতি তুলে ধরেছেন। রাশিয়ার সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন। প্রতিটি বিশ্বকাপ শহরেই ছিল ফুটবল সমর্থকদের জন্য বিনোদনের সুন্দর ব্যবস্থা। রাস্তায় রাস্তায় হয়েছে কনসার্ট। রুশ মিউজিকের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন বিশ্ববাসী। রাশিয়ার এ আতিথেয়তা, স্বাদ ও আপ্যায়ন ফুটবল সমর্থকরা কখনো ভুলতে পারবেন না। ব্রাজিলের এক সমর্থক ট্রেনে চড়ে সামারা থেকে মস্কো আসার পথে বার বার বলছিলেন, ‘আমি কখনই ভুলব না রাশিয়াকে। ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা বিদায় নিলেও রাশিয়ায় এখনো প্রচুর ব্রাজিলীয় আর আর্জেন্টাইন সমর্থক আছেন। তারা দল বেঁধে খুব একটা উৎসব করেন না। কিন্তু রাশানদের সঙ্গে উৎসব করতে কসুর করেন না।’

একটা বিশ্বকাপ আয়োজন করেই বিশ্ববাসীকে মুগ্ধ করল রাশিয়া। পুতিনের দেশকে নতুন করে ভালোবাসতে শিখে গেলেন অনেকে। বিশেষ করে ফুটবলভক্তরা।

সর্বশেষ খবর