মঙ্গলবার, ১৭ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

উৎসব উচ্ছ্বাসে মডরিচদের বরণ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

উৎসব উচ্ছ্বাসে মডরিচদের বরণ

ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী জাগরেবের রাস্তায় ছাদ খোলা বাসে মডরিচরা —এএফপি

বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। পূরণ হয়নি সোনালি স্বপ্নের। স্বপ্ন পূরণ কিংবা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন না হলেও কিচ্ছু যায় আসেনি এতে। বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছে প্রিয় ক্রোয়েশিয়া, এতেই উত্ফুল্ল সবাই। এতেই আনন্দিত। প্রিয় ফুটবলারদের এক নজর দেখতে জাগরেবের রাস্তায় নেমেছিলেন সবাই। লাল-সাদা জার্সি গায়ে চড়ানো সবাইকে দেখে মনে হয়েছে জাগরেবের রাস্তা যেন সেজেছে নতুন সাজে।  লুকা মডরিচ, ইভান রাতিটিচ, মারিও মানজুকিচরা বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলছেন এমন উচ্ছ্বাসে দেশটির রাষ্ট্রপতি কোলিন্দা কিতরাভিচ উপস্থিত থেকেছেন মাঠে। ম্যাচগুলোতে প্রিয় দলকে উৎসাহিত করতে শামিল হয়েছেন আম-জনতার কাতারে। নিরাপত্তার বেড়াজালে সার্বক্ষণিক থাকা রাষ্ট্রপ্রধানের আন্তরিকতা যখন এমন, তখন ৪৫ লাখ ক্রোয়াটের কি অবস্থা? ফুটবল অন্তঃপ্রাণ ক্রোয়াটবাসী গতকাল উৎসবমুখর পরিবেশে নেচে গেয়ে বরণ করেন  প্রিয় ফুটবলারদের।

১৯৯১ সালে স্বাধীন হওয়ার পর আর কখনো এমন আনন্দ করেনি ক্রোয়াটরা। এমন উৎসবে মেতে উঠেনি। ফাইনালে পরাশক্তি ফ্রান্সের সঙ্গে সমানে সমান লড়াই করে রানার্স আপ হয়েও উৎসবের রঙয়ে সেজেছে দেশটি। গতকাল ফুটবলাররা যখন মস্কো থেকে রাজধানী জাগরেবে পা রাখেন, তখন বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে উঠে আম-জনতা। মডরিচদের বরণ করতে জাগরেবের ৮ লাখ নাগরিকের প্রায় সবাই লাল-সাদা পোশাকের জার্সি গায়ে চড়িয়ে নেমে পড়েছিলেন রাস্তায়। মস্কো থেকে জাগরেবের দূরত্ব ১১৬০ মাইল বা ১৮৬৭ কিলোমিটার। বিমানে আসতে সময় লাগে মাত্র ১ ঘণ্টা। স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ৩টায় ফুটবলারদের বহন করে বিমানটি যখন ক্রোয়েশিয়ার আকাশসীমায় প্রবেশ করে, তখন তিনটি যুদ্ধ বিমান পাহারা দিয়ে নিয়ে আসে বহনকারী বিমানটিকে। ফুটবলাররা বিমানবন্দরে পা রাখার বহু আগে থেকেই রাজধানীর বড় বড় রাস্তা, অলি গলিতে নেমে আসেন জার্সি গায়ে, পতাকা হাতে ক্রোয়াটরা। ঝড়ো হতে থাকেন সবাই ক্রোয়েশিয়ান ন্যাশনাল থিয়েটারের সামনে। প্রিয় তারকাদের দেখতে দুপুরের আগেই ভরে যায় থিয়েটারের সামনের জায়গা। ফুটবলারদের চাক্ষুষ দেখতে বাকিরা উপস্থিত হন বিমান বন্দরের আশেপাশের রাস্তায়। মডরিচদের নিয়ে হুড খোলা বাস বিমানবন্দর থেকে ধীরে ধীরে এগোতে থাকে থিয়েটারের দিকে। রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে থাকা সমর্থকরা পতাকা উড়িয়ে, নেচে গেয়ে বরণ করে নেয় তাদের। অনেককেই দৌড়াচ্ছেন গাড়ির সঙ্গে।

২৭ বছর আগে সার্বিয়া ভেঙে জন্ম ক্রোয়েশিয়ার। বিশ্বকাপে প্রথম অংশ নেয় ১৯৯৮ সালে। বাজিমাত প্রথম আসরেই। ডেভর সুকারদের দুর্দমনীয় পারফরম্যান্সে জায়গা নেয় সেমিফাইনালে। পরের চার আসরে অবশ্য পারফরম্যান্স ছিল অনুজ্জ্বল। এবার যখন খেলতে আসেন জ্লাটকো রাতিচের শিষ্যরা, তখন গোনায় ধরেনি কেউ। কিন্তু আসর যত গড়িয়েছে, ততই ক্যারিশমা দেখিয়ে উঠে এসেছেন আলোচনায়। আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে যে স্বপ্ন দেখার সূচনা করেন মডরিচরা, সেটা ধরে রাখেন নকআউট পর্বে ডেনমার্ককে টাইব্রেকারে, কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে রাশিয়াকে এবং সেমিফাইনালে ১২০ মিনিট সমানে সমান লড়াই করে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে। রবিবারের ফাইনালে ফেবারিট হয়ে খেলেনি দল। কিন্তু অদম্য মানসিকতার পরিচয় দিয়ে লড়াই করেছে সমানে সমান। এমন ফুটবলারদের বরণ করতে বাধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে উঠাই স্বাভাবিক। সব ধারণাকে ভ্রান্ত বানিয়ে প্রিয় মডরিচদের বরণ করে নেয় ক্রোয়াটরা উৎসব আর আমেজে।

সর্বশেষ খবর