বুধবার, ১৮ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভয় ছিল শুধু বেলজিয়ামকেই

ক্রীড়া ডেস্ক

ভয় ছিল শুধু বেলজিয়ামকেই

ফ্রান্স দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছে। শুরু থেকেই ফ্রান্স ছিল আলোচনায়। চূড়ান্ত স্কোয়াড ঘোষণা করার পর বিশেষজ্ঞরা বলেন, রক্ষণ, মধ্যমাঠ, আক্রমণভাগ প্রতিটি পজিশনেই নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় রয়েছে। খেলোয়াড়রা যদি যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারেন ফ্রান্সের পক্ষে বিশ্বকাপ জেতাটা কঠিন হবে না। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে। ফ্রান্স ঠিকই বিশ্বকাপে বিজয়ের পতাকা উড়িয়েছে। এটি তাদের দ্বিতীয় বিশ্ব জয়। ১৯৯৮ সালে নিজ দেশে প্রথমবার বিশ্ব জয় করে তারা।

দিদিয়ের দেশমের নেতৃত্বে স্বপ্নের ট্রফি ঘরে তুলেছিল ফ্রান্স। সেই দেশমই কোচ হিসেবে দেশকে বিশ্বকাপ উপহার দিলেন। এ এক বিরল রেকর্ড। জার্মানির বেকেন বাওয়ারই ছিলেন প্রথম খেলোয়াড় যিনি অধিনায়ক ও কোচ হিসেবে দেশকে বিশ্বকাপ উপহার দেন।

১৯৭৪ সালে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি বিশ্বকাপ জয় করেছিল নিজ দেশে। ১৯৯০ সালে কোচ হিসেবে বেকেন বাওয়ার জার্মানকে উপহার দেন স্বপ্নের ট্রফি। এখানেও অদ্ভূত একটা মিল রয়েছে দুজনার মধ্যে। দেশম অধিনায়ক হিসেবে নিজ দেশে বিশ্বকাপ জিতে ছিলেন। বেকেন বাওয়ারও অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপটা জিতেছিল নিজ দেশে।

যোগ্য কোচের প্রশিক্ষণে ফ্রান্স বিশ্বকাপ জিতেছে এ নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। দেশম তা মানতে নারাজ। তার কথা এই কৃতিত্ব পুরোটা খেলোয়াড়দের। ওরা ভালো খেলেছিল বলেই অসম্ভবকে সম্ভবে রূপান্তরিত করা গেছে। রাশিয়া বিশ্বকাপে এমবাপ্পে ও পল পগবা অনেকেই আলো ছড়িয়েছেন। তবে শুরুর আগে আলোচনা ছিল আঁতোয়ান গ্রিজম্যানকে নিয়েই।

লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো সঙ্গে তাকে তুলনা করা হয়। গতবার ব্যালন ডি অরের সম্ভাব্য তালিকায় তারও নাম ছিল। কিন্তু জিততে পারেননি।

ফুটবল বিশ্লেষকদের বক্তব্য ছিল ফুটবল এগার জনের খেলা। কিন্তু গ্রিজম্যান যদি মাঠে একাই জ্বলে উঠতে পারেন তা হলে প্রতিপক্ষদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। না গ্রিজম্যান একা নয়, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও টিম স্পিরিটই ফ্রান্সকে এনে দিয়েছে স্বপ্নের ট্রফি।

প্রশ্ন হচ্ছে যাকে নিয়ে শুরু থেকে এত আলোচনা ছিল সেই গ্রিজম্যান কি ভেবেছিলেন বিশ্ব জয়ের কথা। চ্যাম্পিয়নের পর দেশে ফিরে গেছে ফ্রান্স দল। ফরাসি মিডিয়াগুলো তাকে এই প্রশ্ন করতেই গ্রিজম্যান দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, ফ্রান্স ফুটবলে এমনি এক দল যারা শিরোপা ছাড়া কিছুই ভাবে না। আমরা তো হুট করে বা ভাগ্যের জোরে বিশ্বকাপ জিতেনি। নিজেদের অনেক ঝালাই করে নিয়েছি। আমাদের সবচেয়ে সুবিধাটা ছিল কোচ হিসেবে আমরা দেশমকে পেয়েছি। যার নেতৃত্বে ফ্রান্স বিশ্বকাপ জিতেছিল। এমন একজন ফুটবল জ্ঞানী লোক পাশে থাকলে মন এমনিতেই চাঙ্গা থাকে। তা ছাড়া তিনি প্রতিটি ম্যাচে আমাদের ভুল দেখিয়ে বলেছিলেন তোমরা এভাবে খেল। উনি মাঠে না খেললেও আমি বলবো সাফল্যের মূল কৃতিত্বটা তারই।

গ্রিজম্যান বলেন, আমরা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলেছি। কিন্তু অস্বীকার করব না নিজেদের সেভাবে মেলে ধরতে পারেনি। কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে ছন্দটা খুঁজে পেয়েছিলাম। দেখেন নকআউট পর্ব মানে হারলেই বিদায়। প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা ছিল আমাদের প্রতিপক্ষ। তুচ্ছ করছিল না তারপরও আমরা চেয়েছিলাম প্রতিপক্ষটা যেন মেসিরাই হয়। কারণ তাদের রক্ষণভাগ ছিল খুবই দুর্বল। ঠিকমতো আক্রমণ চালালেই জেতা সম্ভব। ওদের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে জয় পেয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে গেলাম। উরুগুয়েকে হারিয়ে সেমিতে। অস্বীকার করবো না আমরা চাচ্ছিলাম এখানে যেন প্রতিপক্ষটা ব্রাজিল হয়। কিন্তু বেলজিয়াম থাকাতে কিছুটা হলেও ভয়ে ছিলাম। গ্রিজম্যান বলেন, আপনারা যদি আমাকে এবার বিশ্বকাপের ৩২ দলের মান বিচার করতে বলেন, আমি সর্বোচ্চ মার্কস বেলজিয়ামকে দেব। ওরা এবার বিশ্বকাপে প্রতিটি ম্যাচই অসাধারণ খেলেছে। ওদের গতির সঙ্গে অন্য কারও তুলনা চলে না।

 

কোচ দেশম প্রতিটি ম্যাচে ছক আঁকিয়ে মাঠে নামিয়ে ছিলেন। কিন্তু বেলজিয়ামের বিপক্ষেই আমরা চাপে পড়ে যাই। এমনকি গোল করার পরও তা ধরে রাখতে পারব কি না দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ওরা একের পর এক অ্যাটাক করেছে। গোল পায়নি। আমি বলবো বেলজিয়ামকে হারানোর পর আমাদের আত্মবিশ্বাসটা বেড়ে যায়। যা ফাইনালে শক্তির টনিক হিসেবে কাজ করে। ক্রোয়েশিয়াও এবার বিশ্বকাপে দারুণ খেলেছে। ফাইনালেও তারা আমাদের ছেড়ে কথা বলেনি। তবে তারা বড় একটা ভুল করে ফেলেছে।

যা আমি বলতে চাই না। তাদের ভুলগুলো কাজে লাগিয়ে আমরা পাল্টা আক্রমণে গোল করে বিশ্ব জয় করেছি। তবে শেষ কথাটা বলবো ফুটবলে কৌশল ও অভিজ্ঞতা বড় একটা ফ্যাক্টর।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর