বৃহস্পতিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভাগ্যকে দোষ দিয়ে লাভ নেই

ক্রীড়া ডেস্ক

ভাগ্যকে দোষ দিয়ে লাভ নেই

বেলজিয়ামের অধিনায়ক ইডেন হ্যাজার্ড

ফাইনালে ফ্রান্সকে হারাতে পারলেই বিশ্বকাপের স্বপ্নের ট্রফি জিত নিতো ক্রোয়েশিয়া। বিশ্ব পেত নতুন এক চ্যাম্পিয়নকে। তা আর হয়নি ফ্রান্স জিতে পুরনোদের মধ্যেই স্বপ্নের ট্রফি থেকে গেল। ২০১০ সালে স্পেনই শেষ নতুন দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ জয় করেছিল। ফাইনালে নেদারল্যান্ডস ও জিতলে বিশ্বে নতুন চ্যাম্পিয়নের দেখা মিলতো। দুর্ভাগ্য বলতে হয় ডাচদের। বিশ্বকাপে তারাই একমাত্র দল যারা তিনবার ফাইনাল খেলেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি।

এবার বিশ্বকাপ শুরুর আগে নতুনদের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। বেলজিয়াম ও পর্তুগালের নামটি উচ্চারিত হয়। তবে জিকো বলেছিলেন পর্তুগাল কত দূর যেতে পারবে জানিনা। কিন্তু বেলজিয়াম এবার যে মানের দল নিয়ে রাশিয়ায় গেছে যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারলে নতুন হিসেবে তাদেরই চ্যাম্পিয়নের সম্ভাবনা বেশি। ম্যারাডোনা বলেছিলেন যে দলে হ্যাজার্ড ও লুকাকুর মতো ভয়ঙ্কর খেলোয়াড় আছে তাদের কাছে অনেক কিছুই আশা করা যায়।

বিশেষজ্ঞদের ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হতে চলেছিল। এবার বিশ্বকাপে শুরু থেকেই বেলজিয়াম ছিল অপ্রতিরোধ্য। গোলরক্ষক, রক্ষণভাগ, মধ্যমাঠ, আক্রমণভাগ সব পজিশনেই ছিল যোগ্য মানের খেলোয়াড়। জি গ্রুপে ইংল্যান্ড পানামা ও তিউনিশিয়া থাকায় ধরেই নেওয়া হয়েছিল ইংল্যান্ড ও বেলজিয়ামের নকআউট পর্ব নিশ্চিত। কে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবে সেটাই ছিল বড় প্রশ্ন। বেলজিয়াম টানা তিন ম্যাচ জিতেই বুঝিয়ে দেয় তারা ট্রফি জেতার যোগ্যতা রাখে।

জাপানকে হারিয়ে কোয়ার্টারে। এরপর পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে ধরাশায়ী করে সেমিফাইনাল। এরপরতো গোটা দুনিয়ার মিডিয়া বেলজিয়ামকে নিয়ে মাতোয়ারা। অনেকে লিখেই ফেলেছিলেন নতুন চ্যাম্পিয়নদের দেখাটা এখন সময় ব্যাপারই মনে হচ্ছে। কিন্তু সেমিতে এসেই স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে গেল হ্যাজার্ডদের।

৯০ মিনিটের লড়াইয়ে অধিকাংশ সময়ে বেলজিয়াম বল দখলে রাখলেও ম্যাচ জিতে গেল ফ্রান্স। ১ গোলে পিছিয়ে থাকার পরও তারা যে নৈপুণ্য প্রদর্শন করছিল তাতে মনে হচ্ছিল ম্যাচের চেহারা যে কোনো সময়ে বদলে যাবে। কিন্তু তা আর হলো না। ভাগ্যের সহায়তা পেয়ে ম্যাচ জিতে ফাইনালে চলে গেল ফ্রান্স।

ফুটবলে ভাগ্য যে বড় ফ্যাক্টর তা প্রমাণ মিলল সেমিফাইনালে। খেলল বেলজিয়াম জিতল ফ্রান্স। কিন্তু তা মানতে নারাজ ইডেন হ্যাজার্ড। তিনি বলেন, ভাগ্যকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমরা পারেনি এটাই সত্য। তিনি বলেন, আপনি ভাগ্যের কথা বলে আমাদের সান্ত্বনা দেবেন এতেই কি আমরা ব্যর্থতা ঢাকতে পারব? তাহলে কি প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে জাপানের বিপক্ষে ২-০ গোলে পিছিয়ে থাকার পর আমাদের জয়টাকে ভাগ্য বলে বেলজিয়ামকে খাটো করবেন। আসলে ভাগ্যকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। ১ বা বড় ব্যবধান বলেন, জয়টাই আসল। যদি পর্যালোচনা করেন তাহলেতো ব্রাজিল আমাদের বিপক্ষে যে অসাধারণ ম্যাচ খেলেছিল তাতেতো তাদেরই জেতার কথা। জিতলাম কিনা আমরা। ওরা পারেনি আমরা পেরেছি এটাই মূল বিষয়।

দেখেন বিশ্বকাপে তৃতীয় হওয়ার পর অনেকে আমাদের বাহবা দিচ্ছেন। দেশে ফিরেও জনগণের ভালোবাসা পাচ্ছি। কারণ বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটাই আমাদের বড়প্রাপ্তি। এতে আমিও খুশি হয়েছি। ট্রফি না হোক অন্তত সান্ত্বনার মেডেলতো গলায় ঝুলেছে। কিন্তু এর সঙ্গেতো আর শিরোপার তুলনা চলে না। ফাইনালে ক্রোয়েশিয়া কি খারাপ খেলেছিল? তারপরও ফ্রান্স বিশ্বজয় করেছে। এখানে কেউ যদি বলেন, ভাগ্য ফ্রান্সকে ফেবার করেছিল তাহলে ভুল করবেন। ফুটবল যারা বোঝেন তারা নিশ্চয় এখানে ভাগ্য শব্দটা উচ্চারণ করবেন না। ক্রোয়েশিয়া শুরু থেকেই যত গতিময় খেলা খেলুক না কেন ফ্রান্স কৌশল বেছে নিয়েছিল যা তাদের জিততে সহায়তা করেছেন। এটাই একটা দলের বড় গুণ।

তৃতীয় হয়ে আমরা প্রশংসায় ভাসছি। আমি বলবো সব উছ্বাস ঝেড়ে ফেলে সামনের জন্য প্রস্তুত নিতে হবে। আমরা পারিনি, সামনের বিশ্বকাপে আমি খেলতে পারব কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। চার বছর দেখতে দেখতে চলে যাবে। আমি বলবো কাতার বিশ্বকাপের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া। সঠিকভাবে এগুতে পারলে হয়তো সামনে বেলজিয়াম বিশ্বজয়ের উৎসব করতে পারবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর