বৃহস্পতিবার, ২৬ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

টেস্ট বনাম ওয়ানডে, টি-২০

মেজবাহ্-উল-হক

টেস্ট বনাম ওয়ানডে, টি-২০

দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচের আগে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা নিজেদের গা গরম করে নিচ্ছেন। প্রথম ম্যাচে টাইগাররা পরাজিত করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। গতকাল রাতেই দুই দল ফের মুখোমুখি হয় —এএফপি

স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান— অস্ট্রেলিয়ার এই কিংবদন্তি খেলোয়াড় ক্রিকেট ইতিহাসের শিরোমণি হয়ে আছেন তার টেস্ট ক্যারিয়ারের জন্য। বিশ্বে ক্রিকেট যতদিন থাকবে ততদিন ক্রিকেটাকাশে নক্ষত্র হয়েই জ্বলবেন ব্র্যাডম্যান।

গ্যারি সোবার্স, ভিভ রিচার্ড, ইয়ান বোথাম, রিচার্ড হ্যাডলি, সুনীল গাভাস্কার, অ্যালান বোর্ডার, হানিফ মোহাম্মদের মতো ক্রিকেটাররা টেস্ট ক্রিকেট খেলেই কিংবদন্তি হয়ে আছেন। মুত্তিয়া মুরালিধরণ, শেন ওয়ার্ন, অনিল কুম্বলের মতো স্পিনাররাও গ্রেট হয়ে আছেন তাদের টেস্ট ক্যারিয়ারের জন্য। ডেনিশ লিলি, কোর্টনি ওয়ালশ, কার্টলি অ্যাম্ব্রস, ম্যালকম মার্শালের মতো ভয়ঙ্কর পেসাররাও তো টেস্ট ক্রিকেট দিয়েই ক্রিকেটবিশ্বে নিজেদের উচ্চাসনে বসিয়েছেন।

এ যুগের সবচেয়ে আলোচিত শচীন টেন্ডুলকার, ব্রায়ান লারা, রিকি পন্টিং, রাহুল দ্রাবিড়ের মতো ক্ষুরধার মস্তিষ্কের ক্রিকেটারদের বিশ্বময় পরিচিতির বড় কারণ কিন্তু তাদের বর্ণাঢ্য টেস্ট ক্যারিয়ার। টেস্ট ক্রিকেটকেই বলা হয় ‘আসল’ ফরম্যাট! অথচ এই টেস্ট ক্রিকেটেই অনীহা বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটারদের।

কয়েক দিন আগেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বোমা ফাটিয়েছেন, ‘সাকিব-মুস্তাফিজরা টেস্ট খেলতে আগ্রহী নন!’ বাংলাদেশের সেরা দুই ক্রিকেটার তাদের ক্যারিয়ারকে দীর্ঘায়িত করতে চান। তারা কেবল ওয়ানডে ও টি-২০ ক্রিকেট নিয়েই পড়ে থাকতে চান। প্রশ্ন হচ্ছে, সেরা ক্রিকেটাররাই যদি টেস্ট খেলতে না চান তাহলে টেস্ট খেলবে কে?

সাকিব-মুস্তাফিজ নিজেরা কখনো মুখ ফুটে বলেননি যে তারা টেস্ট খেলতে চান না। বোর্ড সভাপতি মিথ্যাচার করবেন এমনটাও তো অকল্পনীয়। কিন্তু বোর্ড সভাপতির কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে তো বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের সামনে অপেক্ষা করছে ঘোর ‘অমাবস্যা’। সাকিব-মুস্তাফিজদের ‘আইডল’ মেনে যে তরুণরা আগামীতে ক্রিকেটকে পেশা হিসেবে বেছে নেবেন তারা কি টেস্টের প্রতি আগ্রহী হবেন?

এও তো ঠিক, প্রত্যেক ক্রিকেটারের ব্যক্তিস্বাধীনতা আছে। তারা কোন ফরম্যাটে খেলবেন আর কোন ফরম্যাটে খেলবেন না তা বেছে নেওয়ার অধিকার তাদের আছে। যেমন ফর্মের তুঙ্গে থাকার পরও দক্ষিণ আফ্রিকার তারকা ক্রিকেটার এবি ডি ভিলিয়ার্স টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইংল্যান্ডেরও অনেক ক্রিকেটারকে দেখা যায়, যারা দ্রুতই টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নেন। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটের যে অবস্থা তাতে কি এ দেশের ক্রিকেটারদের অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটারদের মতো এমন বিলাসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ আছে? চাইলেই কি আর নতুন একজন সাকিব কিংবা মুস্তাফিজকে পাওয়া সম্ভব? আবার এও তো ঠিক, কারও ইচ্ছার বিরুদ্ধে মাঠে নামিয়ে লাভ নেই। তাতে বরং দলেরই ক্ষতি।

বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছে ২০০০ সালে। এই ১৮ বছরেও তরুণ ক্রিকেটারদের কাছে টেস্ট ক্রিকেটকে আকর্ষণীয় করার জন্য কি কোনো উদ্যোগ নিয়েছে ক্রিকেট বোর্ড? বাংলাদেশ দল নিয়মিত ওয়ানডে খেলছে, তাই ওয়ানডেতে উন্নতিটাও দৃশ্যমান। টি-২০ ক্রিকেটেও মনোযোগী হচ্ছে। যদিও সংক্ষিপ্ত এই ফরম্যাটে এখনো বাংলাদেশ ততটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। তবে টি-২০-তে তরুণদের আগ্রহী করে তুলতে ‘বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ-বিপিএল’ই যথেষ্ট। টি-২০-তে সময় কম লাগে, কষ্টও কম। আবার টাকাও বেশি। তাই গোটা বিশ্বেই ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ত ফরম্যাট দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে।

কিন্তু টেস্টের জন্য কি অফার আছে? বরং বাংলাদেশের মতো দলগুলো টেস্ট খেলে কালেভদ্রে। নিয়মিত না খেলার কারণে তারকা ক্রিকেটাররাও এই ফরম্যাটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন না। তা ছাড়া টানা পাঁচ দিন খেলার জন্য ফিটনেসে বাড়তি মনোযোগ দিতে হয়। একটা টেস্ট ম্যাচ টানা পাঁচ দিন চললে প্রায় ১১-১২টি টি-২০ ম্যাচ খেলার সমান সময় লাগে। এসব নানা কারণে গোটা বিশ্বেই টেস্টের প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে।

দিন দিন পরিস্থিতি এমন হচ্ছে, টেস্ট ক্রিকেট যেন ওয়ানডে ও টি-২০ ক্রিকেটের প্রতিপক্ষ হয়ে যাচ্ছে! হয় টেস্ট বেছে নাও নয় তো ওয়ানডে টি-২০! এখন ক্রিকেট হয়ে গেছে ‘টেস্ট বনাম ওয়ানডে টি-২০’।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর