বৃহস্পতিবার, ২৬ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের সম্ভাবনা

দৃষ্টি থাকবে শিরিনের দিকে

ক্রীড়া প্রতিবেদক

দৃষ্টি থাকবে শিরিনের দিকে

নারী কুস্তিগীর শিরিন সুলতানা

কুস্তির জনপ্রিয়তা বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশেও এর কমতি ছিল না। একসময় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের জিমনেসিয়ামে ঘরোয়া আসরে উপচে পড়া দর্শকের সমাগম হতো। সত্তর ও আশির দশকে ঢাকা স্টেডিয়ামে অ্যামেচার কুস্তি প্রতিযোগিতা দেখতে গ্যালারি ভরে যেত। নাসের ভুলুদের একনজর দেখার জন্য সে কী উন্মাদনা। কুস্তির সেই জনপ্রিয়তা ও উন্মাদনা হারাতে বসেছে। অথচ এই খেলায় ভালো করার সম্ভাবনা ছিল। আবদুল জলিল কুস্তিতে নৈপুণ্য প্রদর্শন করে পালোয়ানের খ্যাতিও পেয়েছিলেন। ফেডারেশন তাদের সাধ্যমতো জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ ও অন্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে। কিন্তু ঊর্ধ্বতন মহলের নজর না থাকায় কুস্তির সম্ভাবনা ও জনপ্রিয়তা এখন ম্লান হতে বসেছে। এটা ঠিক, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় প্রতিভাবান কুস্তিগিরের দেখা মিলত। কিন্তু মেয়েরা কুস্তিতে লড়াই করবে তা ভাবাই যেত না। কালের বিবর্তনে বাংলাদেশের নারী কুস্তিগিররা শুধু ঘরোয়া আসরে নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। এমনই একজন কুস্তিগির শিরিন সুলতানা। অল্প বয়সে কুস্তিতে নেমে ক্রীড়াঙ্গনে আলোড়ন তুলতে সক্ষম হয়েছেন এই নারী কুস্তিগির। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ২০০৯-১৬ পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণির ওজনে চ্যাম্পিয়ন হয়ে নারী কুস্তিতে নিজের নাম রেকর্ডের খাতায় লিখিয়ে রাখেন শিরিন। উশুতেও তিনি নজর কাড়েন।

দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সুনাম কুড়াচ্ছেন শিরিন। ২০১২ সালে কলকাতায় ইন্দো-বাংলাদেশের কুস্তিতে তিনি সোনা জেতেন। গ্র্যান্ড সিল্কে তামা ও ২০১৬ সালে সাউথ এশিয়ান গেমসে ৬ কেজি ক্যাটাগরিতে মাত্র ১ পয়েন্টের জন্য সোনা জিততে পারেননি শিরিন। রুপা নিয়েই তাকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। ২০১৭ সালে ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে তামা জেতেন। এভাবে নিজেকে সুপরিচিত করে তোলেন কুস্তিতে। গত এপ্রিলে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ গেমসে পদক প্রায় জিতেই ফেলেছিলেন। শেষ মুহূর্তে মাংসপেশিতে টান পড়ায় চতুর্থ হয়ে থাকতে হয় শিরিনকে। কমনওয়েলথ গেমসেই প্রমাণ মেলে উপযুক্ত ট্রেনিং ও সুযোগ-সুবিধা পেলে বাংলাদেশের নারী কুস্তিগিররা বড় বড় গেমসে দেশের সুনাম কুড়ানোর সামর্থ্য রাখেন। ১৮ আগস্ট ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় শুরু হচ্ছে এশিয়ান গেমস। শিরিন ছাড়াও পুরুষ দুই কুস্তিগির শরৎ রায় ও আলী আমজাদ এ গেমসে লড়বেন। তবে দৃষ্টি যে শিরিনের দিকে থাকবে, তা কমনওয়েলথ গেমসেই প্রমাণ মিলেছে।

অলিম্পিকের পরই পৃথিবীর সেরা গেমস এশিয়ান গেমস। এখানে কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, ইরান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানের বিখ্যাত কুস্তিগিররা অংশ নেবেন। দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ নিয়েই দেশগুলো পদক জিততে কুস্তিতে নামবে। সেখানে শিরিন বা দুই পুরুষ প্রতিযোগী সেভাবে নিজেদের প্রস্তুত করতে পারছেন? ১ জুলাই কোচ হাজী মো. আশরাফ আলীর তত্ত্বাবধানে অনুশীলন শুরু করেছেন তারা। মাত্র দেড় মাস এশিয়ান গেমসের জন্য পর্যাপ্ত সময় কিনা? এ ব্যাপারে শিরিন বলেন, ‘কুস্তিতে অনেক কলাকৌশল পাল্টাচ্ছে। তাই প্রস্তুতিটাও সেরকম হওয়া দরকার। তবে কমনওয়েলথ গেমসের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাইব। আশা করি দেশকে হতাশ করব না।’ শিরিন হয়তো বিভিন্ন কারণে আক্ষেপের কথা সেভাবে বলতে চাননি। এটা সত্য, সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও শিরিন বা অন্যদের সেভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। শুধু অভিজ্ঞতা অর্জন নয়, ভালো প্রশিক্ষণ পেলে বড় গেমসেও পদক জেতা সম্ভব তা শিরিনদের ক্যারিশমায় প্রমাণ মেলে।

সর্বশেষ খবর