শনিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

জ্বলে ওঠার এই তো সময়

ক্রীড়া প্রতিবেদক

জ্বলে ওঠার এই তো সময়

নিজেদের খেলা। অথচ আসছে ঘরোয়া মৌসুমে স্থানীয় ফুটবলারদের বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে। এই চ্যালেঞ্জে প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াচ্ছেন বিদেশি ফুটবলাররা। একটা ব্যাপার লক্ষ্যণীয় যে, অনেকদিন পর ঘরোয়া আসরে মানসম্পন্ন ফুটবলারের দেখা মিলবে। যদিও কেউ মাঠে নামেননি তবুও ক্যারিয়ার দেখে বোঝা যাচ্ছে অধিকাংশ বিদেশির পারফরম্যান্স হবে মুগ্ধ করার মতো। যেখানে বিদেশি বলতে আফ্রিকানদের বোঝাতো সেখানে এবার হাইপ্রোফাইল ফুটবলারদের দেখা মিলছে। এর পেছনে বড় অবদান নিঃসন্দেহে বসুন্ধরা কিংসেরই। রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলা কোস্টারিকার ড্যানিয়েল কলিনড্রেসকে নেওয়ার পরই ক্রীড়াঙ্গনে সাড়া ফেলে দেয়। ড্যানিয়েলের মতো ভালো মানের ফুটবলার হয়তো কেউ পায়নি। কিন্তু বসুন্ধরা কিংসের দেখাদেখি আগের চেয়ে মানসম্পন্ন বিদেশি তো সংগ্রহ করেছে অন্য ক্লাবগুলো।

লোকাল ও বিদেশি মিলিয়ে বসুন্ধরা কিংস সেরা দল গড়েছে। ড্যানিয়েল ছাড়াও তারা স্পেনের যুব দলে খেলা জর্জ গোটর, ব্রাজিলের মার্কোস ভিনিয়াস ও এশিয়ান কোটায় কিরগিজস্তানের বখতিয়ার দুয়েসবেকভকে রেজিস্ট্রেশন করায়। ড্যানিয়েল বিশ্বকাপ খেলেছেন। সুতরাং তার মান নিয়ে সংশয় থাকার কথা নয়।

মার্কোসও দারুণ খেলেন। থাই লিগে দুই মৌসুমে তার ৪০ গোল করার রেকর্ড রয়েছে। এই ৪ জনই মাঠে নামবেন নিশ্চিত বলা যায়। গোলরক্ষক বিদেশি না থাকায় এই পজিশনে একজন দেশি ফুটবলারকে দেখা যাবে। সেরা একাদশে বাকি ৬ জন কারা সেটাই দেখার বিষয়। কোচ অস্কার বলেছেন, বসুন্ধরা কিংসে প্রতিটি পজিশনেই নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় রয়েছেন। সুতরাং যোগ্যতার প্রমাণ ছাড়া নবাগত এই দলে সেরা একাদশে সুযোগ পেতে স্থানীয়দের পারফরম্যাস দেখাতে হবে। তা না হলে আসন হবে সাইড বেঞ্চে। বিদেশী ফুটলারদের ভিড়ে স্থানীয়দের জ্বলে ওঠার এই তো সময়। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনীও ভালোমানের বিদেশি কালেকশন করেছে। হাইতির কারডেনস বেলফোর্ড, আফগানিস্তানের মাসিও মাইগানি ও গতবারের খেলা সানডে তো থাকছেনই। বেলফোর্ড এসেছিলেন কিংসে খেলতে। কিন্তু কোচ অস্কার তার পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট না হওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে তিনিও যোগ্য, তা না হলে আবাহনীর মতো দল তাকে নেবে কেন। শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রও ভালোমানের বিদেশি পেয়েছে। গতবার লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা রাফায়েল ওদোয়ো, চট্টগ্রাম আবাহনীর অ্যালিসন উদোকো, নতুনভাবে আসা ব্রাজিলের আলেক্স রাফায়েল, এশিয়ান কোটায় আছেন আজিজুভ।

শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব এবার তারুণ্যনির্ভর দল গড়লেও বিদেশি নিয়েছে ভালোমানের। গতবারে খেলে যাওয়া রাফায়েল ওদোয়ো চলে গেলেও রয়ে গেছেন আলোচিত সোলায়মান কিংস। নতুন এসেছেন আর্জেন্টিনার মিসিয়ানো, কিরগিজস্তানের ডেভিড টিটাং, মুডো লামিন। বিদেশি সংগ্রহের দিক দিয়ে সাইফ স্পোর্টিংও পিছিয়ে নেই। বসুন্ধরা কিংস, ঢাকা আবাহনী, শেখ রাসেল, শেখ জামাল ও সাইফ স্পোর্টিং শিরোপার লক্ষ্য নিয়ে দল গড়ছে। এরা মাঠে চারজন করেই বিদেশি ফুটবলার সেরা একাদশে রাখবেন। সেক্ষেত্রে লোকালদের সুযোগ পাওয়াটাই চ্যালেঞ্জের। সত্যি বলতে কি এই পাঁচ দলে যদি কোনো বিদেশিকে রিজার্ভ বেঞ্চে দেখা যায় তা হবে বড় বিস্ময়ের।

ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডানের লোকাল কালেকশন চোখে পড়ার মতো না হলেও বিদেশি চয়েস একেবারে খারাপ নয়। চট্টগ্রাম আবাহনীরও তাই। এখানেও সেরা একাদশে নাম লেখাতে স্থানীয় ফুটবলারদের চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হবে। নোফেল স্পোর্টিং ছাড়া পেশাদার লিগে ১২টি দলই ৪ জনের বিদেশি কোটা পূরণ করে নামবে। ১২ দলে ৪ জন করে মানে ৪৮ জন বিদেশি সেরা একাদশে। এরপর আবার নোফেলে ৩ জন। ১৩ দলে সেরা একাদশে ১৪৩ জনের মধ্যে ৫১ জনই বিদেশি। বাকিটা খেলবেন দেশি ফুটবলাররা। কারা খেলবেন বা সুযোগ পাবেন সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ। বিদেশি ৪ জন করে খেলার অনুমতি দেওয়ায় স্বাভাবিকভাবে অনেক স্থানীয় মাঠে নামা থেকে বঞ্চিত হবেন। এতে তো হতাশ হওয়ার কিছু নেই। ভালোমানের বিদেশির কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার রয়েছে। তাছাড়া এখানে যোগ্যতার প্রশ্ন জড়িয়ে আছে। যারা যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারবেন তারাই লিগ খেলবেন। এখানে প্রকৃত যোগ্যদের দেখা মিলবে। এতে তো বাংলাদেশের ফুটবলই উপকৃত হবে।

আশির দশকেই বাংলাদেশের ঘরোয়া লিগে মানসম্পন্ন বিদেশি ফুটবলারের দেখা মিলছিল। ঢাকা আবাহনীতে ১৯৮৬ বিশ্বকাপ খেলা করিম মোহাম্মদ, সামির সাকিকে দলে নিয়েছিল। অন্যদিকে মোহামেডানে খেলেন ইরানের নালজেগার, বিজন তাহেরি, নাইজেরিয়ার এমেকা ও চিমা। এদের মধ্যেও যদি সেসময় আসলাম, কায়সার হামিদ, মুন্না, রুমি, কানন, সাব্বিররা যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারেন তাহলে এখনকার ফুটবলররা পারবেন না কেন? বিপলু, জীবনদের খুশি হওয়ার কথা, তারা বিশ্বকাপে খেলা ও মানসম্পন্ন বিদেশিদের সঙ্গে লড়বেন। এখান থেকেই হারিয়ে যাওয়া ছন্দ খুঁজে পেয়ে জাতীয় দলকে জাগাতে পারবেন। এই চ্যালেঞ্জটাই হতে পারে বাংলাদেশের ফুটবলারদের যোগ্যতা প্রমাণ করার সঠিক সময়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর