বুধবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

তরুণদের নতুন চ্যালেঞ্জ

মেজবাহ্-উল-হক

তরুণদের নতুন চ্যালেঞ্জ

ওয়ানডে সিরিজে ছিলেন না বাংলাদেশের সেরা দুই ক্রিকেটার বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও ড্যাসিং ওপেনার তামিম ইকবাল। এছাড়া দলে থাকা ‘পঞ্চপাণ্ডব’ এর বাকি তিন সিনিয়র সদস্য মাশরাফি মর্তুজা, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও দাপুটে পারফর্ম করতে পারেননি। তারপরও টাইগারদের কাছে পাত্তাই পায়নি জিম্বাবুয়ে। সিরিজের তিন ম্যাচেই আফ্রিকার দলটিকে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। তরুণরাই এনে দিয়েছে সাফল্য।

বেশ কয়েক বছর থেকেই বাংলাদেশ দল অতিমাত্রায় পঞ্চপাণ্ডবের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। পাঁচ সিনিয়র ক্রিকেটার ভালো খেললে দল জেতে, না হলে নেই। কিন্তু জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে এই সিরিজে ঘটলো উল্টো ঘটনা। তরুণ ব্রিগেটের কাঁধে চড়েই সাফল্যের বন্দরে পীেঁছে গেল দল। সিনিয়র ক্রিকেটারদের মতো বাংলাদেশের তরুণরাও যে দায়িত্বশীল তা বোঝা গেল জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজেই।

এবার তরুণদের সামনে আরেক চ্যালেঞ্জ— টেস্ট সিরিজ! ইনজুরির কারণে সাকিব-তামিম তো নেই-ই। আর দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট তো অনেক আগেই বাই বাই জানিয়ে দিয়েছেন নড়াইল এক্সপ্রেস। ওয়ানডে সিরিজে মাশরাফি নিজে আহামরি পারফর্ম করতে না পারলেও ক্যাপ্টেন হিসেবে দলকে দারুণভাবে পরিচালনা করেছেন। ড্রেসিংরুমে তরুণদের অনুপ্রাণিত করেছেন। তবে টেস্ট সিরিজে মাশরাফির কাজটাই করতে হবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে। সিলেট স্টেডিয়ামে ৩ নভেম্বর শুরু হবে প্রথম টেস্ট। রঙিন পোশাকে সফলতার পর এবার সাদা পোশাকে তরুণদের নতুন চ্যালেঞ্জ। ওয়ানডের মতো টেস্টেও জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করতে চায় বাংলাদেশ।

‘ম্যাচ বাই ম্যাচ’ চিন্তা করেই সামনে এগুতে চায় টাইগাররা। তাই এখন ক্রিকেটারদের ভাবনায় কেবলই সিলেট টেস্ট। তা ছাড়া এই ম্যাচটি আরেকটি কারণে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, প্রথমবারের মতো ৩৬০ আউলিয়ার আবাসভূমিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে টেস্ট।

বাংলাদেশ দল সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের ক্রিকেটে অনেক দিন থেকেই ভালো খেলছে। কিন্তু সে তুলনায় টেস্টে ভালো করতে পারেনি। তবে ঘরের মাঠে সাদা পোশাকে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো বড় দলকেও হারানোর রেকর্ডও খুব পুরনো নয়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো ম্যাচটি খেলতে হবে দলের বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে ছাড়াই, যারা টেস্টে ক্যারিশম্যাটিক ভূমিকা পালন করে থাকেন। এই দলে অধিকাংশ ক্রিকেটারই তরুণ। অন্যদিকে জিম্বাবুয়ে দলে ফিরেছেন অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা। যদিও তারা ওয়ানডেতে ভালো করতে পারেনি, তবে টেস্টের ফল অন্যরকম করে দেওয়ার জন্য তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশ দলের শক্তির জায়গা হচ্ছে ব্যাটিং লাইনআপ। ফর্মের তুঙ্গে থাকা ইমরুল কায়েস ও লিটন কুমার দাস রয়েছেন ওপেনিংয়ে। তিনে রয়েছেন টেস্টের তারকা পারফর্মার মুমিনুল হক। এছাড়া মিডল অর্ডারে ভরসা হয়ে রয়েছেন ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ মুশফিকুর রহিম ও ঠাণ্ডা মাথার ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। লোয়ার অর্ডারের ভরসা দিতে পারেন আরিফুল হক, যদি তিনি একাদশে সুযোগ পান। রংপুরের এই ব্যাটসম্যান এখনো অনেক দিন থেকেই জাতীয় দলের সঙ্গে রয়েছেন। এশিয়া কাপে পুরোটা সময় দলের সঙ্গে থাকলেও একাদশে ছিলেন না। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজেও কম্বিনেশনের কারণে তাকে বাদ পড়তে হয়েছিল প্রথম দুই ম্যাচে। তৃতীয় ম্যাচে সুযোগ পেলেও সেভাবে ব্যাটিং করার সুযোগ পাননি। কারণ জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দলের দুই ওপেনার ইমরুল ও লিটন জোড়া সেঞ্চুরি করে দলে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছে। তবে অনেকদিন ওয়ানডে দলের সঙ্গে থাকার কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সম্পর্কে ড্রেসিংরুমের আবহ সম্পর্কে একটা ভালো ধারণ হয়েছে আরিফুলের। আর টেস্ট খেলার প্রস্তুতিটা তো তিনি সেরে রেখেছেন এশিয়া কাপ থেকে ফিরে জাতীয় লিগে ডাবল সেঞ্চুরি করে।

বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণভাগ দুর্দান্ত। কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে পেস আক্রমণে দেখা যেতে পারেন আবু জায়েদ চৌধুরী রাহী কিংবা শফিউল ইসলাম সুহাসকে। জাতীয় লিগে দাপট দেখানো পেসার নবাগত খালেদ আহমেদও সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন একাদশে। আর স্পিন আক্রমণে রয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম ও নাজমুল ইসলাম অপু।

তবে পেসার দুজন নাকি তিনজন খেলানো হবে তা নির্ভর করবে উইকেটের ওপর। সিলেট স্টেডিয়ামে আগে কখনো টেস্ট হয়নি। তাই উইকেট যে কেমন তা আন্দাজ করা কঠিন!  পেসাদের জন্য বাড়তি সুবিধা থাকলে স্পিনার একজন কম দেখা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে তাইজুল কিংবা অপুর মধ্যে একজনকে দেখা যেতে পারে। ব্যাটিং লাইনআপ অন্যরকমও হতে পারে। সুযোগ পেতে পারেন মোহাম্মদ মিথুনও। বাংলাদেশ দলের পরীক্ষিত এক ব্যাটসম্যান। মোহাম্মদ মিথুনকে দেখা যেতে পারেন আরিফুল কিংবা মুমিনুলের জায়গায়।

তরুণ ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্তও একাদশে সুযোগ পাওয়ার দাবি রাখেন। ঘরোয়া লিগে তিনি দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। তবে জাতীয় লিগে ওপেনিংয়ে ব্যাট করলেও টেস্টে তার সে সুযোগ আপাতত নেই। কেন না টপ ফর্মে রয়েছেন দুই ওপেনার লিটন ও ইমরুল। শান্তকে দলে নিলে ওয়ান ডাউনে নামানোর চিন্তা করেই নেওয়া হবে।

ওয়ানডে সিরিজে যেমন তরুণ ক্রিকেটারদের ওপর ভর করেই জিম্বাবুয়ে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। টেস্টেও এই কৌশলে জিম্বাবুয়েকে হারাতে চান কোচ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর