বুধবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

কলিনড্রেসের ড্রেস রিহার্সেল?

ক্রীড়া প্রতিবেদক

কলিনড্রেসের ড্রেস রিহার্সেল?

১৯৮৭ সালটা ঘরোয়া ফুটবলের স্মরণীয় মৌসুম। সেবারই এক বছর নিষিদ্ধ হয়েছিলেন আবাহনীর অধিনায়ক শেখ মো. আসলাম ও মোহামেডানের অধিনায়ক রণজিত। একই দিনের দুই বড় দলের দুই অধিনায়কের নিষিদ্ধ করাটা ক্রীড়াঙ্গনে বিরলই ঘটনা। মৌসুমটা আরও স্মরণীয় হয়ে আছে বিশ্বকাপ খেলা দুই ফুটবলারের আগমনে। সেবার প্রিমিয়ার লিগে শিরোপা জিততে আবাহনী উড়িয়ে আনে আগের বছর মেক্সিকো বিশ্বকাপ খেলা ইরাকের করিম মোহাম্মদ ও সামির সাকিকে। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে সেটাই ছিল বিশ্বকাপ ফুটবলারের প্রথম আগমন। মোহামেডানের নাইজেরিয়ান ফুটবলার এমেকাও ১৯৯৪ সালে বিশ্বকাপের স্কোয়াডে ছিলেন। তবে তা ছিল মোহামেডান ছাড়ার পর।

৩১ বছর পর বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে বিশ্বকাপ খেলা আরেক তারকার দেখা মিলল। রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলা কোস্টারিকার ড্যানিয়েল কলিনড্রেস। যিনি স্বপ্নের বিশ্বকাপে দেশের হয়ে দুটি ম্যাচ খেলে মাঠ কাঁপান। সেই কলিনড্রেস নাম লিখিয়েছেন আলোচিত ক্লাব বসুন্ধরা কিংসে। প্রস্তুতি ম্যাচে কিংসের জার্সি জড়িয়ে মাঠে নেমেছিলেন। তবে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে প্রথম দেখা মিলল সোমবারই। গত বছর চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বসুন্ধরা কিংস এবার ঘরোয়া ফুটবলে সবচেয়ে মর্যাদাকর আসর পেশাদার লিগে জায়গা করে নিয়েছে। বিদেশি ও স্থানীয় মিলিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলে স্মরণকালের সেরা দল গড়েছে তারা।

শক্তিশালী দল, তবে কলিনড্রেস বসুন্ধরা কিংসে নাম লেখানোর পরই ক্রীড়ামোদীরা অপেক্ষায় ছিলেন তাকে মাঠে দেখার। সেই অপেক্ষায় অবসান ঘটল ফেডারেশন কাপে মোহামেডানের বিপক্ষে। নাম বসুন্ধরা কিংস, দলের অভিষেকটাও হয়েছে রাজকীয়ভাবে। ৫-২ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে সাদা-কালোদের। স্বাধীনতার পর অনেক নতুন ক্লাবের আবির্ভাব ঘটেছে। কিন্তু বসুন্ধরা কিংসই প্রথম দল যারা শুরুটা করল এত বড় জয় দিয়ে।

এক সময় মোহামেডানের হারাটাই ছিল আশ্চর্য ঘটনা। কিন্তু এখন যে রুগ্ন হাল তাতে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ৫ কেন আরও বড় ব্যবধানে হারলে অবাকের কিছু হবে না। তারপরও দুবার পিছিয়ে যাওয়ার পর এই দলের বিপক্ষে গোল উৎসব করাটা চাট্টিখানি কথা নয়।

বসুন্ধরা কিংসের এই ঐতিহাসিক অভিষেকের নায়ক আর কেউ নন, কলিনড্রেসই। প্রথম ম্যাচেই কলিনড্রেসের ড্রেস রিহার্সেল দেখা গেল। ৫ গোলের মধ্যে তিনি এক গোল দিলেও ম্যাচের প্রাণ ছিলেন কলিনই। যে আন্তরিকতা ও পরিশ্রমী খেলা খেলেছেন তাতে মনে হয়েছে বসুন্ধরা কিংস তার দীর্ঘদিনের সঙ্গী। প্রফেশনাল ফুটবলারদের সব গুণাবলী প্রথম ম্যাচেই দেখা গেছে। শুরুতেই তিনি মন জয় করে নিয়েছেন দর্শকদের। সামির সাকির ও করিম মোহাম্মদও খেলে গেছেন। কিন্তু এক ম্যাচ খেলেই কলিনড্রেস হয়ে গেলেন ঘরোয়া ফুটবলে পরিচিত নাম। বিশ্বকাপ খেলা ফুটবলারদের যোগ্যতা যে অন্যরকম তা প্রথম ম্যাচেই প্রমাণ দিলেন এই কোস্টারিকান। দর্শকরা মাঠে যেন ম্যাজিশিয়ানকে দেখলেন। কি পাসিং, ডিবলিং, ক্রস, কন্ট্রোল পাওয়ার সব কিছুই তার অসাধারণ। মাঠের চালিকা শক্তি ছিলেন তিনিই। প্রয়োজনে গতি বাড়াচ্ছেন কিংবা স্লো করছেন। অদ্ভুত এক খেলা দেখালেন কলিনড্রেস।

পেনাল্টি থেকে সমতাসূচক গোলটি করেন। তিনটা গোল কলিনের বাড়িয়ে দেওয়া বলে। ৬৬ মিনিটে মোহামেডান যখন পুনরায় এগিয়ে যায় তখন কিছুটা হলেও ভয় ঢুকে যায় কিংস সমর্থকদের। কিন্তু কলিন ম্যাজিকে দিশাহারা মোহামেডান। গ্রুপপর্বে আরও দুই ম্যাচ কোয়ার্টার ফাইনালও খেলবে নিশ্চিত। এরপর যদি বসুন্ধরা কিংস সেমি ও ফাইনাল খেলে তাহলে ফেডারেশন কাপে ম্যাচ দাঁড়াবে ছয়ে। এরপর আবার পেশাদার লিগে দুই পর্ব মিলিয়ে ২৪ ম্যাচ। সুতরাং কলিনের আরও ক্যারিশমা দেখার আছে। মোহামেডান দুর্বল প্রতিপক্ষ। তাই কলিনড্রেসের শুরুটা ড্রেস রিহার্সেলই বলা যায়। শুরুতে যে ক্যারিশমার মহড়া দেখালেন এই বিশ্বকাপ খেলা ফুটবলার পুরো মৌসুমেই আলো ছড়াবেন তা প্রত্যাশা করা যায়। সবচেয়ে বড় কথা এমন খেলোয়াড়ের কাছ থেকে স্থানীয়দের অনেক কিছুই শেখার আছে। শুধু ম্যাজিক দেখলেই চলবে না। শিখতে হবে, এতে উপকৃত হবে বাংলাদেশের ফুটবল। প্রথম দিনে ব্রাজিলিয়ান মার্কোসও দুই গোল দিয়ে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে। অপ্রতিরোধ্য বসুন্ধরা কিংস কতদূর যায় সেটাই এখন অপেক্ষা।

সর্বশেষ খবর