শিরোনাম
বুধবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সেই চামেলির চিকিৎসা হচ্ছে না অর্থ সংকটে

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

সেই চামেলির চিকিৎসা হচ্ছে না অর্থ সংকটে

ব্যাটিং অ্যাকশনে চামেলি খাতুন - অসুস্থ চামেলি খাতুন

‘ক্রিকেটের মাঠে রান করাটাই আমার জন্য বড়’—চামেলি খাতুনকে নিয়ে প্রায় আট বছর আগে লেখা একটি জাতীয় দৈনিকের ফিচারের পেপার কাটিং বিছানায় রাখা। যত্ন করে রাখা সেই কাটিংয়ে লেখা আছে, ‘খালেদ মাসুদ পাইলট, শচীন টেন্ডুলকার আর আফ্রিদি—তিনজনের তিন রকম গুণ আমার পছন্দ।’ হয়তো তাদের দেখে অনুপ্রেরণা নিয়েই হয়েছিলেন জাতীয় ক্রিকেট প্রমীলা দলের অলরাউন্ডার। দেশের প্রথম প্রমীলা দলের প্রতিনিধি হয়ে অংশ নিয়েছিলেন ২০১১ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে। জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন বেশ কয়েকটি ওয়ানডে ও টি-২০ ম্যাচও। যার প্রমাণ বিছানায় রাখা দলের হয়ে খেলা অনেক ছবি এবং বিভিন্ন সময়ে পাওয়া ক্রেস্ট ও ট্রফি।

বিছানায় রাখা, কারণ যে ঘরটিতে চামেলির সঙ্গে কথা হচ্ছে তা এতটাই ছোট যে সেখানে আলাদা করে কোনো কিছু রাখার টেবিল নেই। কোমরব্যথায় তিনি না পারছেন ঘুমাতে, না পারছেন ভালো করে বসতে। আধশোয়া হয়েই প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকলেন। কখনো কথা বলতে বলতে ফুঁপিয়ে কাঁদতেও লাগলেন। ছেলেবেলা থেকেই চামেলি খাতুন ডানপিটে। এ-পাড়া থেকে ও-পাড়া দাপিয়ে বেড়াতেন সব সময়। টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে খেলার ম্যাচের ক্রেস্ট আর ট্রফি কিনতেন। ছয় বোন দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনিই সবার ছোট। ১২ বছর বয়সেই হয়ে উঠলেন দুর্দান্ত অ্যাথলেট। সুযোগ পেয়ে গেলেন জাতীয় অ্যাথলেটিকসে। এরপর ফুটবল, তারপর ক্রিকেট। সব কটিকেই জাতীয় দলে অনায়াসেই সুযোগ পান তিনি। অষ্টম শ্রেণির পর আর পড়ার সুযোগ হয়নি। সব ছেড়ে খেলাতেই মন দিলেন। ২০০৮ সালে প্রথম ইনজুরি, ডান পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেল। এর কমাস পর ছিঁড়ল হাতেরটা। চিকিৎসায় একটু সুস্থ বোধ করলেও খেলা ছাড়েননি। ২০০৯-এ ব্যায়ামাগারে ভারোত্তোলন করতে গিয়ে প্রথম কোমরে ব্যথা পান। বিশ্বকাপ খেলার জন্য সে ব্যথাও পুষেছিলেন বছর দুয়েক। কিন্তু তারপর আর পারলেন না। বিশ্বকাপ শেষে দেশের প্রথম প্রমীলা নারী দলের সবাইকে চাকরি দেওয়া হয়েছিল আনসার ভিডিপি সদর দফতর থেকে। চামেলির আনসার ক্রমিক ৬৭২। চাকরি সরকারিকরণ হওয়ার পর তিনি ২০১২-তে খেলা ছেড়ে দেন। তত দিনে কোমর ও পিঠের ব্যথাটা বেশ বেড়েছে। বাবাসহ পরিবারের তিনজন সদস্য এখনো তার ওপর নির্ভরশীল। বছর খানেক আগে চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তিনি জানতে পারেন তার ভার্টিভারা কলামের অর্থাৎ মেরুদণ্ডের মূল হাড়ের যে জয়েন্ট, তার ফাঁকে যে ডিস্ক থাকে সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। চিকিৎসক দ্রুত সার্জারির পরামর্শ দিলেও অর্থের অভাবে চামেলি তাতে আগ্রহ বোধ করেননি। বছর না ঘুরতেই অবস্থার অবনতি হয়ে যায়। এখন অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে পুরো ডান পাশ তার অবশ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় একমাত্র চাকরিটাতেও অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন তিনি। শঙ্কা দেখা দিয়েছে চাকরি হারানোর।

ভারতের শান্তিনিকেতনে থাকা তার এক সতীর্থ সম্প্রতি তাকে দেখতে এসেছিলেন তাদের বাড়িতে। তিনি বললেন, চামেলির বিষয়ে কলকাতার বেলভিউ ও পেয়ারলেস হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। তারা জানিয়েছেন, সার্জারি ও চিকিৎসার খরচ মিলিয়ে মোট ৯ লাখ টাকা লাগতে পারে। তবে কলকাতার চেয়েও তারা এই সার্জারির জন্য চেন্নাই কিংবা ভেলরকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। এখন ভারত যাওয়াসহ থাকা-খাওয়া এবং পুরোপুরি চিকিৎসার জন্য অন্তত ১০ লাখ টাকা চামেলির প্রয়োজন। একসময় কাঁদতে কাঁদতে হাঁপিয়ে উঠে হতাশ হয়ে বললেন, হাত পাতার মতো কেউ নেই তার চারপাশে। তাই সমাজের বিত্তশালীদের কাছে চামেলির চাওয়া, যাতে তারা অর্থ সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে আসেন।

সর্বশেষ খবর