শুক্রবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

যেখানে দেশি কোচরাই এগিয়ে

ক্রীড়া প্রতিবেদক

যেখানে দেশি কোচরাই এগিয়ে

বিদেশি কোচ ছাড়া ফুটবল চলে না। বছর চারেক আগে এক অনুষ্ঠানে এই কথাটি বলেছিলেন বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। ওই অনুষ্ঠানেই স্থানীয় কোচদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় ফুটবল অঙ্গনে বেশ হৈচৈও পড়ে গিয়েছিল। এটা ঠিক জাতীয় দল আন্তর্জাতিক ফুটবলে হাতে গোনা যে সাফল্য পেয়েছে তার অধিকাংশ এসেছে বিদেশিদের প্রশিক্ষণে। তবে প্রথম সাফল্য আসে দেশি কোচের অধীনে। ১৯৮৯ সালে প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয় সাদেকের যোগ্য প্রশিক্ষণে।

দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক ট্রফিতে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয় ১৯৯৫ সালে। মিয়ানমারে চ্যালেঞ্জ কাপে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ জার্মান কোচ অটো ফিস্টারের অধীনে। ১৯৯৯ সালে নেপালে সাফ গেমসে বাংলাদেশ প্রথম সোনা জিতে ইরাকের সামির সাকিরের প্রশিক্ষণে। ২০০৩ সালে ভুটানে আমন্ত্রণমূলক ও ঢাকায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ শিরোপা জিতে অস্ট্রিয়ান জর্জ কোটানের প্রশিক্ষণে।

২০১০ সালে ঢাকায় এসএ গেমসে পুনরায় বাংলাদেশ শিরোপা জিতে বিদেশি কোচের মাধ্যমে। অবশ্য সেই টুর্নামেন্টে জাতীয় নয় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দল খেলেছিল।

বিদেশিদের সাফল্য বলতে এতটুকুই। ২০০৩ সালের পর জাতীয় দল কোনো ট্রফিই জিততে পারেনি। অথচ ১৫ বছরে বিদেশি কোচদেরই বাফুফে নিয়োগ দিয়েছে বেশি। বিদেশি কোচদের কেউ কখনো হেয় করেনি। অটো ফিস্টার, জর্জ কোটান, নাসের হেজাজির মতো খ্যাতনামা কোচরা বাংলাদেশের দায়িত্ব পালন করেছেন। ফিস্টারতো বিশ্বকাপেও কোচ ছিলেন।

২০০৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত এই ১৪ বছরে বাংলাদেশে অনেক বিদেশি কোচ এসেছিলেন এখনো আছেন। ফেডারেশন থেকে কখনো কখনো বলাও হয়েছে বাংলাদেশ ভাগ্যবান যে এত উঁচুমানের কোচ পাওয়া গেছে। নেদারল্যান্ডসের লোড ডিক ক্রুইফকে এনে বাফুফের যে উচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছিল তাতে মনে হচ্ছিল বিশ্বসেরা কোচই এসে গেছে। ভালোমানের কোচ আসার পরও এক যুগের বেশি সময় ধরে পুরুষ জাতীয় দলের এমন বেহাল অবস্থা কেন? অবশ্য এর মধ্যে যে স্থানীয় কোচদের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি তাও বলা যাবে না। তবে তা হাতে ছিল ২/৩ জন।

ঢালাওভাবে অঢেল টাকা খরচ করে বিদেশি কোচ এলেও ফুটবলে দৈন্যদশা। অথচ স্থানীয় কোচরা না পারলেই বাফুফে ক্ষোভে ফেটে পড়ে। যদি বলি সাফল্যের দিক দিয়ে দেশি কোচরা এগিয়ে তাহলে কি ভুল হবে? অন্তত অর্ধ যুগের হিসাবে তাই বলে যদি জাতীয় দলও ধরা হয় তাহলে বাংলাদেশের শেষ শিরোপা আসে ২০১০ সালে। আট বছরে প্রাপ্তি শূন্য। ঘরে ও বিদেশে জাতীয় দলের শুধুই হাহাকার। শিরোপাটা দূরে কথা গত চার আসর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ সেমিফাইনাল খেলতে পারেনি।

প্রাপ্তি বা সাফল্য যা তা বয়সভিত্তিক ফুটবলকে ঘিরেই। যদিও বিষয়টি পুরুষ ফুটবলের। তবু আলোচনায় আসবে মহিলা ফুটবল। ফুটবলে বাংলাদেশের মেয়েদের অভাবনীয় সাফল্য এসেছে— অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ, অনূর্ধ্ব-১৮, অনূর্ধ্ব-১৬ এএফসি বাছাই পর্ব-১৪। বাছাইপর্বে বাংলাদেশের মেয়েরা বিজয় নিশানা উড়িয়েছে। জাতীয় পুরুষ দল যেখানে সাফে পাত্তাই পাচ্ছে না সেখানে কিশোরীরা হয় চ্যাম্পিয়ন কিংবা রানার্সআপ হচ্ছে। গ্রুপ পর্বেই বিদায় এমন লজ্জায় ভাসাচ্ছে না জাতিকে। এই সাফল্য অবদান অবশ্যই নারী ফুটবলারদের। কিন্তু কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তারই যোগ্য প্রশিক্ষণে বাংলাদেশ বিজয়ের পতাকা ওড়াচ্ছে। তাকে হটিয়ে বিদেশি নিয়োগ দেওয়ার চিন্তা হয়েছিল। সমালোচনার ভয়ে বাফুফে তা পারেনি।

ছোটন প্রমাণ দিয়েছেন দেশি কোচরাও যোগ্যতার দিক দিয়ে কম যায় না। সৈয়দ গোলাম জিলানীও এক্ষেত্রে একটি উজ্জ্বল নাম। জাতীয় দল যখন ব্যর্থতায় হাবুডুবু খাচ্ছে তখনি ফুটবলে কিছুটা প্রশান্তির হাওয়া এনে দেয় যুবারা। ২০১৫ সালে সিলেটে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয় ভারতকে হারিয়ে। প্রথমদিকে চিন্তা ছিল এই দলের কোচ একজন বিদেশিই হবেন। পরে কাউকে না পেয়ে জিলানীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। বয়সভিত্তিক ফুটবল নিয়ে আগেই কাজ করছিলেন জিলানী। কোচ হিসেবে তিনি যে কতটা যোগ্য তার প্রমাণ দিলেন এই ট্রফি উপহার দিয়ে।

নেপালে আবারও একই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে যুবারা। সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে পিছিয়ে থেকেও ম্যাচ জিতেছে। ফাইনালে হারিয়েছে পাকিস্তানকে। অথচ, ঢাকা ছাড়ার আগে এই দলকে নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। আনোয়ার পারভেজের দক্ষ প্রশিক্ষণে বাংলাদেশ বিজয়ের নিশানা উড়িয়েছে। তারই প্রশিক্ষণে গত বছর কাতারে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৫ বাছাইপর্বে বাংলাদেশ রানার্সআপ হয়েছে। মালয়েশিয়ার অনূর্ধ্ব-১৪ ও ১৭ মগ কাপে প্লেট গ্রুপে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে পারভেজের প্রশিক্ষণে।

মাহাবুবুর রহমান রক্সি দেশের আলোচিত ফুটবলার ছিলেন। কোচিং ক্যারিয়ারেও সাড়া ফেলেছেন। গত বছর ভুটানে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৮ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে যুবারা দুর্দান্ত পারফরম্যান্স শো করেছে যুবারা। ভারতের বিপক্ষে ৩-০ গোলে পিছিয়ে থাকার পরও ভারতকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। কাছে গিয়েও ট্রফি জেতাটা সম্ভব হয়নি। হেড টু হেডের ফাঁদে পড়ে রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। ছোটন, জিলানী, পারভেজ ও রক্সিরা এখন দেশি ফুটবলে বড় বিজ্ঞাপন। তারা অন্তত এতটুকু বোঝাতে পেরেছেন বিদেশিদের চেয়ে তারাও কম নয়। জাতীয় দলে তো বিদেশিরা কোচের দায়িত্ব নিচ্ছেন। এরপরও তো সাফল্য ভাণ্ডার শূন্য। তাহলে দেশিদের এতটা হেয় চোখে কেন দেখা হয়?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর