রবিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

চার স্পিনার তত্ত্বে সফল বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

চার স্পিনার তত্ত্বে সফল বাংলাদেশ

স্পিন যুগেই তাহলে ফিরে যাচ্ছে বাংলাদেশ! ক্রিকেট বিশ্ব যখন পেসারদের দাপটে অস্থির, তখন স্পিন অ্যাটাকে প্রতিপক্ষকে নাকাল করে জয় তুলে নিচ্ছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রামে খেলেছে চার স্পিনার নিয়ে। টিম ম্যানেজমেন্টের অদ্ভুতুরে এই কৌশলে অবাক সবাই। দিন শেষে বাহবা দিতে কুণ্ঠিত হননি। চার স্পিনারের ঘূর্ণিতে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সাত সেসনেই ৬৪ রানের জয় পায় সাকিব বাহিনী। টাইগারদের অসাধারণ জয়ের নায়ক সাকিব আল হাসান, তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাঈম ইসলাম। স্পিন কোয়ার্টেটের সাঁড়াশি আক্রমণে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং লাইন। সফরকারীদের ২০ উইকেটের সবগুলোই তুলে নিয়ে স্পিন কৌশলকে সঠিক বলে প্রমাণ করেছে টাইগাররা। একই সঙ্গে ফিরিয়ে এনেছে স্পিন তত্ত্ব।       

৭০-৮০ দশকে গতি, সুইং ও বাউন্স দিয়ে ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস তুলছিলেন মাইকেল হোল্ডিং, ডেনিস লিলি, জেফ টমসন, অ্যান্ডি রবার্টস, ইমরান খানরা। ভারতীয় ক্রিকেটের বোলিংয়ে একই সময় ফুল ফুটাচ্ছিলেন চার স্পিনার বিষেন সিং বেদী, এরাপল্লি প্রসন্ন, ভেঙ্কট রাঘবন ও চন্দ্রশেখর। চার স্পিনার দিয়ে শুধু ঘরের মাঠ নয়, বিদেশ বিভুঁইয়েও আক্রমণ শানাতো ভারতীয়রা। দলটির ক্রিকেট বোর্ড ঘরের উইকেটগুলো বানাতো স্পিনারদের মাথায় রেখে। এতে সাফল্যও পাচ্ছিল নিয়মিত। চার দশক পর ভারতীয় স্পিনারদের পথে হাঁটতে শুরু করেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট!

চলতি বছরে দ্বিতীয়বারে মতো টেস্ট খেলছে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। জানুয়ারিতে মুমিনুল হকের জোড়া সেঞ্চুরিতে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ড্র করেছিল। এরপর হারিয়ে ফেলে ছন্দ। যার ফল ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ধবল ধোলাই ও ঘরের মাটিতে জিম্বাবুয়ের কাছে হার। কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল টাইগাররা। যদিও তাইজুলের ঘূর্ণিতে মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় তুলে সিরিজ হার বাঁচায়। এরপরই স্পিন আক্রমণে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পরাস্ত করার কৌশল ঠিক করে টিম ম্যানেজমেন্ট। জহুর আহমেদের উইকেটকে স্পিনারদের জন্য বানিয়ে স্কোয়াডে নেওয়া হয় ১৭ বছর বয়সী নাঈমকে। ইনজুরি কাটিয়ে ফিরেন সাকিব। ছিলেন তাইজুল ও মিরাজ। চারজনের সঙ্গে ছিলেন অকেশনাল স্পিনার মাহমুদুল্লাহও। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথম ইনিংসে ২৪৬ রানে এবং দ্বিতীয় ইনিংসে গুড়িয়ে দেয় ১৩৯ রানে। দুই ইনিংসে সফরকারীরা ব্যাটিং করেছে মোট ৯৯.২ (৬৪+৩৫.২) ওভার। অবশ্য চট্টগ্রামের স্পিন উইকেটে স্বাগতিক সাকিব বাহিনীর স্থায়িত্বও ছিল ১২৮.৩ ওভার।

প্রথম ইনিংসে মুমিনুলের সেঞ্চুরিতে ৩২৪ রান করে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ক্যারিবীয়দের সংগ্রহ ২৪৬। টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে কম বয়সী অফ স্পিনার হিসেবে ৫ উইকেট নিয়ে বিরল রেকর্ড গড়েন নাঈম। তরুণ স্পিনারের স্পেল ছিল ১৪-২-৬১-৫। পিছিয়ে ছিলেন না সাকিবও। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের স্পেল ১১-৩-৪৩-৩, তাইজুলের ২০-৩-৫২-১ এবং মিরাজ ১৫-০-৬৭-১। আশ্চর্য হলেও সত্যি দেশসেরা পেসার মুস্তাফিজুর রহমান দুই ইনিংসে বোলিং করেছেন মাত্র ৪ ওভার। দ্বিতীয় ইনিংসে সাকিবরা গুটিয়ে যান মাত্র ১২৫ রানে। স্পিনিং ট্রাকে ক্যারিবীয়দের টার্গেট ছুড়ে দেয় ২০৪ রানের। সেটা করতে নেমেই ১৩৯ রানের বেশি করতে পারেনি সফরকারীরা। স্বাগতিকদের প্রথম ইনিংসের নায়ক নাঈম। দ্বিতীয় ইনিংসে তাইজুল। টানা তিন টেস্টে ৫ বা ততোধিক উইকেট নেওয়া বাংলাদেশের প্রথম বোলার তাইজুলের স্পেল ১১.২-২-৩৩-৬। অধিনায়ক সাকিবের ৭-০-৩০-২ এবং উইকেট পাননি নাঈম। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২০ উইকেটের সবগুলো নিয়েছেন চার স্পিনার। অধিনায়ক সাকিব পুরোপুরি সন্তুষ্ট স্পিন কোয়ার্টেটের পারফরম্যান্সে, ‘আমাদের চার স্পিনারই দলের প্রয়োজনে দারুণ বোলিং করেছেন। আশ্চর্য হলেও সত্যি, চার স্পিনার নিলেও আমাদের ব্যাটিং গভীরতা কিন্তু কমেনি।’ ভুল বলেননি অধিনায়ক। দুই টেস্ট ম্যাচ সিরিজে এগিয়ে যাওয়ার লড়াইয়ে চার স্পিনারের ব্যাট থেকেই বেরিয়েছে সময়োপযোগী স্কোর। প্রথম ইনিংসে সাকিব ৩৪, তাইজুল ৩৯*, নাঈম ২৬ ও মিরাজ করেছিলেন ২২ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে সাকিব ১, তাইজুল ১, মিরাজ ১৮ ও নাইম ৫ রান করেন। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে এই প্রথম স্পিনাররা দুই ইনিংসে সবগুলো (২০) উইকেট নিয়েছেন। শতভাগ সাফল্য দেখিয়ে তাই কৌশলকে যথাচিত বলে প্রমাণ করেছেন সাকিব গং।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ : ৩২৪/১০, ১২৫/১০, ওয়েস্টইন্ডিজ : ২৪৬/১০, ১৩৯/১০

সর্বশেষ খবর