রবিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ব্যাটে-বলে উজ্জ্বল টাইগাররা

মেজবাহ্-উল-হক

ব্যাটে-বলে উজ্জ্বল টাইগাররা

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সব শেষ দুই ওয়ানডে সিরিজের মধ্যে দারুণ মিল! দুই সিরিজই টাইগাররা জিতেছে ২-১ ব্যবধানে। দুই সিরিজের প্রথম ও শেষ ম্যাচে জয়। আর মাঝের ম্যাচে জয়ের কাছে গিয়েও ম্যাচ হাত ছাড়া। পার্থক্য এটাই যে ওই সিরিজটি হয়েছে ক্যারিবীয় দ্বীপে, আর এটি টাইগারদের ঘরের মাঠে। চলতি বছরের জুলাইয়ে ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল মাত্র ৩ রানে। আর এই সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ক্যারিবীয়রা জিতেছে মাত্র ২ বল হাতে রেখে। দুই ম্যাচেই শেষ মুহূর্তের পরিস্থিতি ছিল রুদ্ধশ্বাস। সিরিজের বাকি দুই ম্যাচেই মাশরাফিরা জিতেছে সহজেই। তবে সবচেয়ে বড় মিল হচ্ছে দুই সিরিজেই বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। ওই সিরিজে তিন ম্যাচে দুই সেঞ্চুরি ও এক হাফ সেঞ্চুরিতে করেছিলেন ১৪৩ গড়ে ২৮৭ রান। আর এই সিরিজে দুই হাফ সেঞ্চুরিতে ৭১ গড়ে করেছেন ১৪৩ রান। তামিমের ওই সিরিজের গড় আর এই সিরিজের মোট রান সমান মিলে গেছে কাকতালীয়ভাবে।

এই সিরিজে তামিম কোনো সেঞ্চুরি পাননি এটা ঠিক। কিন্তু ইনজুরি থেকে ফিরেই তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হওয়াও তো সোজা কথা নয়! ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে এই সিরিজে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন মুশফিকুর রহিম। সিরিজে সর্বোচ্চ গড় তারই ১৩৩। অবশ্য মুশফিকের সর্বোচ্চ রান এই ১৩৩ই। তিন ম্যাচের মধ্যে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা মাত্র একবারই মিস্টার ডিপেন্ডেবলকে আউট করেছে। এছাড়া বাকি দুই ম্যাচেই অপরাজিত ছিলেন মুশফিক। শেষ ম্যাচে নজর কেড়েছেন সৌম্য সরকার। মারকাটারি ব্যাটিং করেছেন। প্রথম দুই ম্যাচে টপ অর্ডারে জায়গাই হয়নি তার। শেষ ম্যাচে ওয়ানডাউনে খেলার সুযোগ পেয়েই নিজেকে আলাদা করে চিনিয়েছেন এই তারকা। সব শেষ জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধেও সিরিজের শেষ ম্যাচে দলে সুযোগ পেয়ে ওয়ান ডাউনে নেমে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করেছেন। আহামরি কিছু করতে না পারলেও হতাশ করেনি সাকিব-লিটনের ব্যাটও। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের টপ অর্ডার এখন ফর্মের তুঙ্গে। অধিকাংশ ম্যাচে মিডলঅর্ডার ও লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের প্রয়োজনই হচ্ছে না! বোলিংয়েও দাপট দেখাচ্ছে বাংলাদেশ। এই সিরিজে টাইগাররা যে দুই ম্যাচে জিতেছে দুই ম্যাচেই জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছেন বোলাররা। সিরিজের প্রথম ম্যাচে ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মর্তুজার ক্যারিশমায় জিতেছে দল। আর শেষ ম্যাচে স্পিনে জাদু দেখিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দুই ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছেন এই দুই বোলার। তিন ম্যাচের এই সিরিজে এই দুই বোলারই ৬টি করে উইকেট নিয়ে তালিকায় উপরে রয়েছেন। তবে রান দেওয়ার ক্ষেত্রে মাশরাফির চেয়েও বেশি কিপটেমী করেছেন মিরাজ। দারুণ বোলিং করেছেন মুস্তাফিজুর রহমানও। কাটার মাস্টারের উইকেট সংখ্যা ৫। তবে মুস্তাফিজ যেভাবে দাপুটে বোলিং করেছেন সে তুলনায় উইকেট পাননি। প্রথম দুই ম্যাচ খেলে ৩ উইকেট নিয়েছেন রুবেল হোসেন। কিন্তু রান কিছুটা বেশি দেওয়ায় তৃতীয় ম্যাচে তার জায়গা হয়নি একাদশে। তার জায়গায় সুযোগ পেয়ে আগুনে বোলিং করেছেন তরুণ তুর্কি মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। তিন ম্যাচে তিন উইকেট পেয়েছেন সাকিব আল হাসানও। ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে এই সিরিজে বোলিংয়ে ক্যারিশমা দেখিয়েছেন বোলাররা। বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ শেষ ওয়ানডে সিরিজ। এরপর নিউজিল্যান্ড সফরে যাবে টাইগাররা। তারপর মাশরাফিদের আয়ারল্যান্ড সফর, সেখান থেকে বিশ্বকাপ থেকে টাইগাররা চলে যাবে ইংল্যান্ডে। বিশ্বকাপের আগে এই তিন সিরিজকেই অগ্নিপরীক্ষা হিসেবে নিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম পরীক্ষায় বেশ ভালোভাবেই উত্তীর্ণ টাইগাররা। বিশ্বকাপের আগে বাকি আরও দুই পরীক্ষা। পরের দুই পরীক্ষাতেও (নিউজিল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড সিরিজ) সফল হয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করতে চায় বাংলাদেশ। তবে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে এই সিরিজ জয় বাড়িয়ে দিয়েছে টাইগারদের আÍবিশ্বাস। ব্যাটে-বলে উজ্জ্বল টাইগাররা।

সর্বশেষ খবর