শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

শিরোপার লড়াইয়ে বসুন্ধরা কিংস-শেখ রাসেল

আসিফ ইকবাল

শিরোপার লড়াইয়ে বসুন্ধরা কিংস-শেখ রাসেল

বসুন্ধরা কিংসের গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো যেন সেমিতে ম্যাজিক প্রদর্শন করলেন। টাইব্রেকারে প্রতিপক্ষের দুই শট ঠেকানো ছাড়াও তারই গোলে আবাহনীকে বিদায় জানিয়েছে তারা

ফেডারেশন কাপের দুঃস্বপ্নের ফাইনাল এখন শুধুই অতীত। প্রায় একমাস আগের ফাইনালটি ছিল ঘটনাবহুল এবং যন্ত্রণাময়। কুংফু কারাতের ওই ফাইনালে রেফারির পক্ষপাতিত্বমূলক পরিচালনায় লাল কার্ড দেখেছিলেন চার চারজন ফুটবলার। ফাইনালে আবাহনীর কাছে ৩-১ গোলে হেরেছিল বসুন্ধরা কিংস। দুঃসহ, দুঃস্বপ্নের ও বেদনাবিঁধূর সেই ফাইনাল ভুলে যেতে গতকাল স্বপ্নের ফুটবল খেলেছে বসুন্ধরা কিংস। মৌসুমের দ্বিতীয় টুর্নামেন্ট স্বাধীনতা কাপ; তার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে অসাধারণ ফুটবল খেলে কলিনড্রেস, মার্কোস ভিনিসিয়াস, আনিসুর রহমান জিকোরা ভুলে গেছেন যন্ত্রণাময় সেই ফাইনাল। শৈত্য প্রবাহে কাতর গোটা দেশ। হাড়কাঁপানো শীতে জবুথবু দেশবাসী। এমন গা হিম করা শীতের সন্ধ্যায় অসাধারণ এক ফুটবল লড়াই দেখলেন ফুটবলপ্রেমীরা। দেখলেন মনভোলানো এক ফুটবল যুদ্ধ। টাইব্রেকারে গড়ানো লড়াইয়ে ৭-৬ গোলে জয় তুলে শেষ হাসি হেসেছে বসুন্ধরা কিংস। একইসঙ্গে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে হারের প্রতিশোধ নিয়েছে দলটি। বিপরীতে ট্রেবল জয়ের স্বপ্নে বিভোর আবাহনী মাঠ ছেড়েছে হারের ব্যথায় মাথা নিচু করে।

বসুন্ধরা কিংস এবারই প্রথম খেলছে দেশের ঘরোয়া ফুটবলের শীর্ষ আসরে। বিশ্বকাপ খেলা ফুটবলার কোস্টারিকার ড্যানিয়েল কলিনড্রেসকে নিয়ে গড়া দলটির মুরব্বি স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন। তার কোচিংয়ে দুর্দান্ত ফুটবল খেলছে মৌসুমের শুরু থেকে। বছরের প্রথম টুর্নামেন্ট ফেডারেশন কাপের ফাইনালে উঠলেও শিরোপা উৎসবে মাততে পারেনি। কিন্তু গতকাল আবাহনীকে হারাতে এবং প্রতিশোধ নিতে মরিয়া বসুন্ধরা অলআউট ফুটবল খেলেছে শুরু থেকেই। গতকাল দলটির ফাইনালে উঠার ম্যাচে নেমেছেন ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার মার্কোস ভিনিসিয়াস দ্য কষ্টা। ইনজুরি কাটিয়ে একমাস পর মাঠে নেমেছেন তিনি। নেমেই চাঙা করেছেন দলকে এবং অসাধারণ জয়ে উজার করে দিয়েছেন নিজেকে। অসুস্থ থাকায় মাঠে নামেননি স্প্যানিশ যুব দলে খেলা জর্জ গোটর। তারপরও বসুন্ধরা দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছে চার বিদেশি নিয়ে খেলা আবাহনীর বিপক্ষে। মৌসুমের দ্বিতীয় টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলতে দুদলই অলআউট ফুটবল খেলতে থাকে। আক্রমণে ঠাসা ম্যাচটির প্রথমার্ধে কোনো গোল হয়নি। যদিও সুযোগ বেশি পেয়েছিল ধানমন্ডি পাড়ার দলটি। দ্বিতীয়ার্ধে মতিন মিয়া নামার পর  ঘুরে দাঁড়ায় বসুন্ধরা। আক্রমণের ফুলঝুড়ি ছুটিয়ে নাকাল করে ছাড়ে আবাহনীকে। ৬২ মিনিটে একটি সুযোগ নষ্ট করেন মতিন মিয়া। ৬৯ মিনিটে আর ভুল করেননি তিনি। কলিনড্রেসের ব্যাক পাস ধরে মাহাবুবুর রহমান সুফিল ফাঁকায় দাঁড়ানো মতিনকে দেন। মতিন মিয়া ঠান্ডা মাথায় প্লেসিং শটে আবাহনীর গোলরক্ষক শহীদুল আলমকে বোকা বানিয়ে উচ্ছ্বাসে মাতান বসুন্ধরাকে (১-০)। অবশ্য ১০ মিনিটের বেশি গোলটি ধরে রাখতে পারেনি ব্রুজোনের শিষ্যরা। ৮২ মিনিটে অফসাইডে থেকে গোল পরিশোধ করেন কারসেন্স বেলফোর্ট। ডি বক্সের বা প্রান্ত থেকে ভেসে আসা বলে শূন্যে লাফিয়ে দারুণ হেডে সমতা আনেন আবাহনীর হাইতির স্ট্রাইকার বেলফোর্ট (১-০)। কিন্তু তিনি পরিষ্কার অফসাইডে ছিলেন। ওই গোলের পর খেলায় আক্রমণের ধার বেড়ে যায়। যদিও পরবর্তী সময়ে আর কোনো গোল হয়নি। গোল হয়নি অতিরিক্ত ৩০ মিনিটেও। অবশ্য দুই দুটি বল ক্রসবারে লাগায় জয় পায়নি ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়নরা। ১২০ মিনিটে খেলার ফল না হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। কোয়ার্টার ফাইনালেও বসুন্ধরা ৩-২ গোলে হারিয়েছিল পুরনো ঢাকার দল রহমতগঞ্জকে। প্রথম সেমিফাইনালে আলিশার আজিজভের জোড়া গোলে ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে জয় পায় শেখ রাসেল। ২৪ ডিসেম্বর ফাইনালে দলটি মুখোমুখি হবে বসুন্ধরা কিংসের। গতকাল টাইব্রেকারে প্রথম শটে গোল করেন আবাহনীর আফগানিস্তানের ফুটবলার মাসিহ সাইঘানি। বসুন্ধরার পক্ষে ঠান্ডা মাথায় গোল করেন কিরগিজস্তানের বখতিয়ার দুইশভেকব। দ্বিতীয় শটে গোল মিস করেন আবাহনীর বেলফোর্ট। বসুন্ধরাকে ২-১-এ এগিয়ে নেন ব্রাজিলিয়ান মার্কোস ভিনিসিয়াস। আবাহনীর তৃতীয় শট নেন ওয়ালী ফয়সাল এবং ব্যবধান ২-২ করেন। ফের বসুন্ধরাকে ৩-২-এ এগিয়ে নেন হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস। ৩-৩ করেন রুবেল মিয়া। ৪-৩ করেন নাসিরুদ্দিন চৌধুরী। পঞ্চম শট নেন আবাহনীর সানডে চিজোবা। গোল এবং ব্যবধান ৪-৪। পঞ্চম শটে গোল করতে পারলেই ফাইনাল, এমন সমীকরণে মিস করেন কলিনড্রেস। ফলে ৪-৪ ব্যবধানে শেষ হয় পেনাল্টি শুট আউট। এরপর গড়ায় সাডেন ডেথে। সাডেন ডেথের প্রথম দুই শটে গোল করেন আবাহনীর রায়হান হাসান ও টুটুল হোসেন বাদশা। বসুন্ধরার পক্ষে দুটি গোল করেন রোকনুজ্জামান কাঞ্চন ও মাসুক মিয়া জনি। অষ্টম শটে খেই হারিয়ে ফেলেন ইমতিয়াজ সুুলতান জিতু। তার শটটি ঠেকিয়ে দেন আনিসুর রহমান জিকো। এরপর আনিসুর জিকো নিজেই অষ্টম শটটি নেন এবং জয়োৎসবে ভাসান নবাগত দল বসুন্ধরা কিংসকে।

সর্বশেষ খবর