শিরোনাম
শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

টাইগারদের ব্যাটিং তাণ্ডব

মেজবাহ্-উল-হক

টাইগারদের ব্যাটিং তাণ্ডব

হাফ সেঞ্চুরির পর দর্শকদের অভিনন্দনের জবাব দিচ্ছেন লিটন দাস -রোহেত রাজীব

লিটন দাস ও সৌম্য সরকারের সাইক্লোনের পর মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে গতকাল চলতে থাকে সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ঝড়। ক্যারিবীয় বোলারদের নাস্তানাবুদ করে ৪ উইকেটে ২১১ রান করে বাংলাদেশ। টি-২০র ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো দুইশত রানের স্কোর পায় টাইগাররা।

লিটন-সৌম্যর জুটিতে এসেছিল ৩৪ বলে ৬০ রান, সাকিব-মাহমুদুল্লাহর পার্টনারশিপে মাত্র ৪২ বলে অপরাজিত ৯১ রান। এই দুই জুটিই গতকাল সিরিজের দ্বিতীয় টি-২০তে বাংলাদেশ রানের পাহাড়ে পৌঁছে দেয়।

টি-২০তে সাকিবদের দলীয় সর্বোচ্চ স্কোর ২১৫ রান, নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে করেছিল টাইগাররা। তবে কাল নতুন রেকর্ড গড়ার দারুণ সুযোগ ছিল। টাইগাররা ২০০ রান করেছিল ১১৩ বলেই। শেষের ৭ বলে আসে ১১ রান। তবে টি-২০তে দলীয় সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড এটি। এর আগে ২০৪ রান করেছিল নিউজিল্যান্ড, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, ২০১৩ সালে।

গতকাল পাওয়ার  প্লেতে ক্যারিবীয় বোলারদের ওপর রীতিমতো স্টিম রোলার চালিয়েছেন লিটন। ইনিংসের চতুর্থতম ওভারে ক্যারিবীয় অধিনায়ক কার্লোস ব্রাথওয়েটের পর পর দুই বলে দুই ছক্কা।

বলের পেস কাজে লাগিয়ে ফাইন লেগ দিয়ে উড়িয়ে বল সীমানা ছাড়া করেন লিটন দাস। দ্বিতীয়টি তো স্কোয়ার লেগ দিয়ে বল গ্যালারিতে আচড়ে ফেলেন বাংলাদেশের এই ওপেনার।

পাওয়ার প্লেতে আরও দুটি ছক্কা হাঁকান এই টাইগার ওপেনার। ক্যারিবীয় গতি তারকা ওশেন টমাসের ওভারে পর পর দুই বলে। একটি ফাইন লেগ দিয়ে। আরেক ছক্কায় বল স্ট্রেট দিয়ে গ্যালারির গ্রিলে আচড়ে ফেলেন।

প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশকে যে শেলডন কটরেল ভুগিয়েছিলেন তাকে তো ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই তিন বাউন্ডারি হাঁকিয়ে নাকাল করে ছাড়েন লিটন। মাত্র ২৬ বলে টি-২০র দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। চারটি ছক্কার সঙ্গে পাঁচটি অসাধারণ বাউন্ডারি। শেষ পর্যন্ত ৩৪ বলে ৬০ রান করে থামেন লিটন। কাল তার স্ট্রাইকরেট ছিল ১৭৬.৪৭।

লিটনের ব্যাটে ঝড় দেখে আর কতক্ষণ চুপ থাকবেন সৌম্য! ক্যারিবীয় স্পিনার ফ্যাবিয়ানের শট বলে তিনি ডিপ মিডউইকেট দিয়ে বল গ্যালারিতে আচড়ে ফেলেন। কী চমৎকার শট! লিটন, লিটন বলে গর্জন ওঠা গ্যালারিতে শুরু হয়ে যায় সৌম্য, সৌম্য! অবশ্য এরপর আর বেশিক্ষণ উইকেটে থাকতে পারেননি। পরের ওভারেই কটরেলের বলে আউট হয়ে যান। সেই শট বলেই ক্যাচ হয়েছেন সৌম্য। তবে এক্সট্রা কাভারে অসাধারণ ক্যাচ নিয়েছেন ব্রাথওয়েট। আউট হওয়ার আগেই ২২ বলে ৩২ রান করেছেন তিনি।

একই ওভারের প্রথম বলে সৌম্যকে বিদায় করে দেওয়ার পর শেষ বলে লিটনের উইকেটও তুলে নেন ক্যারিবীয় এই গতি তারকা কটরেল। বাংলাদেশের দুই সেরা ব্যাটসম্যানকে আউট করে স্যালুট দেন ক্যারিবীয় বোলাররা। ইনিংসের ১২তম ওভারে দুই মারকুটে ব্যাটসম্যানের উইকেট নিয়ে যেন স্বস্তি ফেরে ক্যারিবীয় শিবিরে। তবে কটরেল দুই উইকেটকে তুলে নিলেও তার আগে সহ্য করতে হয়েছে বেদম প্রহার। চার ওভারে তিনি রান দিয়েছেন ৩৮।

লিটন ও সৌম্যর ৪৩ বলের জুটিতে আসে ৬৮ রান। এই জুটিই বাংলাদেশকে বড় ইনিংসের ভীত গড়ে দেন। অবশ্য তামিমের সঙ্গে প্রথম উইকেট জুটিতেও মাত্র ২৬ বলে মহামূল্যবান ৪২ রান যোগ করেছেন লিটন।

পাওয়ার প্লেতে এসেছিল ৬১ রান। হারাতে হয়েছিল কেবলমাত্র তামিম ইকবালের উইকেটটি। কাল শুরুতে ঝড়ের আভাস দিয়েও সুবিধা করতে পারেননি ড্যাসিং ওপেনার। অপয়া-১৩তে একবার নতুন জীবনও পেয়েছেন। তারপরও ইনিংসটা বড় করতে পারেননি। আউট হয়েছেন ১৬ বলে ১৫ রান করে।

টাইগারদের দলীয় সেঞ্চুরি হয়েছে ১০.১ ওভারে। দলীয় ডাবল সেঞ্চুরি ১৭.১ ওভারে। শুরুতে লিটন-সৌম্য-তামিমের গড়ে দেওয়া প্লাটফরম পেয়ে শেষের দিকে সহজেই রানের গতি বাড়িয়ে নেন সাকিব ও মাহমুদুল্লাহ। দুই তারকাই ঝড়ো গতিতে রান তোলেন। সাকিব শেষ পর্যন্ত ২৬ বলে ৪৩ রানে নটআউট ছিলেন, আর ২২ বলে ৪৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন মাহমুদুল্লাহ। সিরিজের প্রথম ম্যাচে সিলেটে ব্যাটিং ব্যর্থতায় হেরেছিল স্বাগতিকরা, গতকাল মিরপুরে সেই ব্যাটসম্যানদের তাণ্ডবেই আশার আলো দেখল বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ : ২১১/৪ (২০ ওভার), ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১৭৫/১০ (১৯.২ ওভার)

সর্বশেষ খবর