শিরোনাম
শনিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

‘সাকিব মানেই খেলবে’

মেজবাহ্-উল-হক

‘সাকিব মানেই খেলবে’

খেলার জন্য পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন না সাকিব আল হাসান। জ্বরের জন্য আগের দিন অনুশীলনও করেননি। তারপরও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজের গুরুত্বপূর্ণ দ্বিতীয় ম্যাচে খেলেছেন। টাইগার ক্যাপ্টেনকে খেলতে হয়েছে। পুরোপুরি সুস্থ না থাকার পরও ব্যাটে-বলে দেখিয়েছেন আগুনে পারফরম্যান্স। ব্যাট হাতে মাত্র ২৬ বলে খেলেছেন ৪২ রানের হার না মানা ইনিংস। আর বল হাতে মাত্র ২০ রানে নিয়েছেন ৫ উইকেট। টি-২০-তে সাকিবের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেরা বোলিং টি-২০-তে।

মিরপুরে ‘শিশির’-এর জন্য দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিং করা ছিল খুবই কঠিন। যেখানে মুস্তাফিজের মতো বোলারও ওভারপ্রতি সাড়ে ১২ করে রান দিয়েছেন, সেখানে ক্যারিবীয়রা বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের ওভারপ্রতি গড়ে ৫-এর বেশি রান নিতে পারেননি। এমন এক ম্যাচের পর অধিনায়ক হিসেবে; দিনের সেরা পারফর্মার হিসেবে সবচেয়ে বেশি খুশি সাকিবেরই হওয়ার কথা। টাইগার ক্যাপ্টেন দারুণ খুশিও।

কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে তার শরীরের অবস্থা সম্পর্কে যখন জানতে চাওয়া হয়, তখন অনেকটা অভিমানী সুরে সাকিব বলেন, ‘সবার ধারণা তো এটাই যে, সাকিব মানেই খেলবে। না খেলার চিন্তা কেউ করে?’

গত বছরের অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট সিরিজে খেলেননি সাকিব। ক্লান্তির কারণে ছুটি নিয়েছিলেন। তারপর সিরিজে টাইগাররা হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর ‘সাকিবের ছুটি’ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক সমালোচনা হয়। আর সমালোচনা থেকে বাঁচতেই কিনা ইনজুরি নিয়েও তিনি খেলেছেন চলতি বছরে ওয়েস্ট সফরে। তিন ম্যাচের সেই টি-২০ সিরিজে বাংলাদেশ বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে সিরিজ জিতেছে এবং সাকিব হয়েছিলেন সিরিজ সেরা। তারপর এশিয়া কাপেও তিনি ব্যথার ইনজেকশন নিয়ে খেলেছেন। কিন্তু মারাÍক ইনফেকশন হওয়ায় ফাইনালে খেলা হয়নি।

সাকিব দলে যেন একাই দুই ক্রিকেটারের ভূমিকা পালন করেন। তিনি দলে না থাকলে একজন বোলার কিংবা ব্যাটসম্যান অতিরিক্ত নিতে হয়। সে কারণে মারাÍক অসুস্থ না হলে সাকিবকে খেলতেই হয়। আর বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারও যেন অন্য ধাতুতে গড়া এক মানুষÑযখন যত সমস্যা তখন তিনি তত সফল। প্রতিবন্ধকতা জয় করার অনন্য এক কৌশল জানেন টাইগার দলপতি। এমন একজন খেলোয়াড় সিরিজের মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে না থাকলে কি আর চলে?

কঠিন ম্যাচে ভালো খেলার রহস্য জানতে চাইলে সাকিব বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ নিতে আমার ভালো লাগে। চেষ্টা থাকে দলের জন্য যতটা সম্ভব কন্ট্রিবিউট করার। সেটা না পারলে অনেক খারাপ লাগে।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজে এখন ১-১ সমতা। প্রথম ম্যাচে টাইগাররা হেরে গেলেও দ্বিতীয় ম্যাচে দারুণভাবে জিতেছে। আজ সিরিজের শেষ ম্যাচটি অঘোষিত ফাইনাল। এমন ম্যাচে কি সাকিব খেলবেন? উত্তরটা টাইগার ক্যাপ্টেনের মুখেই শুনুন, ‘এখন জ্বর নাই, ঠা া যদি একটু কমে যায়, লুজ মোশন আছে ওটাও যদি কমে যায়, তাহলে হয়তো ভালোভাবে খেলতে পারব।’

দ্বিতীয় টি-২০-তে জিতে বাংলাদেশ আÍবিশ্বাসী সিরিজ জয়ের ব্যাপারে। যদিও টি-২০-তে ভবিষ্যদ্বাণী চলে না। তা ছাড়া খেলতে হবে টি-২০-এর মাস্টার দলটির বিরুদ্ধে। যাদের ব্যাটিং অর্ডারের এক থেকে ৯ নম্বর পর্যন্ত এক একজন সুপার হিটার। ম্যাচের গতি পাল্টে দেওয়ার জন্য যে কোনো একজন উইকেটে টিকে গেলেই যথেষ্ট। তবে বাংলাদেশকে অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে সর্বশেষ সিরিজটি। যে সিরিজে প্রথম ম্যাচে সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসের বেসেটেরেতে বড় ব্যবধানে হেরে গিয়েও আমেরিকার ফ্লোরিডায় পরের দুই ম্যাচে দারুণভাবে জিতে সিরিজ নিশ্চিত করেছিল টাইগাররা। ফ্লোরিডার পুনরাবৃত্তিই চাচ্ছে স্বাগতিকরা।

সাকিবের ভাষ্য, ‘সম্ভাবনা তো আছে। এই কন্ডিশনটা ওদের (উইন্ডিজ) থেকে আমাদের বেশি ফেভারেবল হওয়া উচিত। ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক মিলে এখানে আমাদের খেলোয়াড়রা অসংখ্য ম্যাচ খেলেছে। এই মাঠ আমাদের কাছে অনেক পরিচিত। সেই হিসেবে সিলেট তত পরিচিত ছিল না, আমরা খুব কম ম্যাচ খেলেছি সেখানে। যারা বেশি ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলে না তাদের জন্য সিলেটের কন্ডিশন ছিল নতুন। সে দিক থেকে মিরপুর আমাদের জন্য অনেক পরিচিত। সাপোর্টটা খুব ইম্পরট্যান্ট থাকে মিরপুরে। দর্শকের চিৎকার অন্যরকম অনুভূতি তৈরি করে। আমার কাছে মনে হয়, এটাও অনেক পজিটিভ একটা দিক শেষ ম্যাচের আগে।’

দর্শকের উদাত্ত সমর্থনই নাকি ফ্লোরিডায় বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছিল! কিন্তু সেখানে তো ছিল মাত্র কয়েক হাজার দর্শক। আর বাংলাদেশের খেলা মানেই তো মিরপুর জনসমুদ্র। তাহলে এমন সমর্থন পেয়েও সাকিবদের ভালো না খেলে উপায় আছে!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর