রবিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আলোচিত যত টাইব্রেকার

ক্রীড়া প্রতিবেদক

আলোচিত যত টাইব্রেকার

টাইব্রেকারে নতুন নায়ক জিকো

১৯৮২ সালের লিগের প্রথমপর্ব ম্যাচে মোহামেডান-আবাহনী মুখোমুখি। বাদল রায়ের গোলে মোহামেডান এগিয়ে যায়। দ্বিতীয়ার্ধে আবাহনী পেনাল্টি পেলে দর্শকরা নিশ্চিত ছিলেন ম্যাচে সমতা ফিরে আসছে। পেনাল্টি শট নেবেন সুপারস্টার কাজী সালাউদ্দিন। শট মারার আগেই গ্যালারিতে উল্লাস শুরু করে দেয় আবাহনীর সমর্থকরা। অন্য দিকে নীরব মোহামেডানের গ্যালারি। দৃশ্য পাল্টে গেল ক্ষণিকের মধ্যে। উল্লাসে মেতে উঠলেন সাদা-কালোর সমর্থকরা। সালাউদ্দিনের দুরন্ত শট দৃঢ়তার সঙ্গে রুখে দিলেন গোলরক্ষক মোহসিন। ম্যাচ জিতে যায় মোহামেডান। আর সালাউদ্দিনের শট রুখে দিয়ে ফুটবলে নতুন তারকা হয়ে যান মোহসিন। মোহসিনের সেই দৃঢ়তা এখনো সবার চোখে ভাসে। বাংলাদেশের ঘরোয়া ম্যাচে পেনাল্টি বা টাইব্রেকারে গোল সেভ করে অনেক গোলরক্ষকই তারকারখ্যাতি পান। বৃহস্পতিবার স্বাধীনতা কাপ সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে আবাহনীকে হারিয়ে বসুন্ধরা কিংসকে ফাইনালে ওঠান তরুণ গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো। নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ ১-১ গোলে ড্র ছিল। অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচ গড়ালেও ফলাফল নিষ্পত্তি হয়নি। টাইব্রেকারে ম্যাচ গড়ায়। আবাহনীর গোলরক্ষক ছিলেন শহিদুল ইসলাম সোহেল। পরীক্ষিত ও পরিচিত গোলরক্ষক তিনি। অন্য দিকে বসুন্ধরা কিংসে আনিসুর রহমান জিকো। সত্যি কথা বলতে কি পারফরম্যান্স বা খ্যাতি যাই বলি না কেন জিকোর চেয়ে সোহেলই এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু জিকো হয়ে উঠলেন অপ্রতিরোধ্য। ৫-৫ শটের টাইব্রেকারে আবাহনীর বেলফোর্ট ও কিংসের কলিনড্রেস গোল করতে পারেননি। ব্যবধান সাডেন ডেথে গড়ালে ম্যাচের উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। জিতুর শটটি দৃঢ়তার সঙ্গে রুখে দেন জিকো। এরপর তারই শট সোহেলকে পরাস্ত করলে ফাইনালে উঠে যায় বসুন্ধরা কিংস। ঘরোয়া ফুটবলে টাইব্রেকারে শট ঠেকানো বা গোল করা গোলরক্ষকের সংখ্যা কম নয়। কিন্তু জিকোর মতো কৃতিত্ব আর কেউ দেখাতে পারেননি। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের শট রুখে দিয়ে পরে তার শটেই বিজয় উৎসব। এমন নজীর গড়েছেন শুধু জিকোই। কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে রহমতগঞ্জকে হারানো নায়ক জিকোই। এবার শেখ জামাল থেকে বসুন্ধরা কিংসে যোগ দেন তিনি। টাইব্রেকারে ম্যাচ জয়ের নায়ক হয়ে জিকো এখন দেশের ফুটবলে পরিচিত নাম। এবারে ব্রাদার্সে খেলা গোলরক্ষক সুজন চৌধুরী এই স্বাধীনতা কাপেই ৯ বছর আগে আলোড়ন তোলেন। সেবার টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে সুজনের দৃঢ়তায় ঢাকা আবাহনীকে হারিয়ে সেমিতে উঠেছিল ফরাশগঞ্জ। ফাইনালে শেখ রাসেলকে হারানোর পেছনে এই সুজনের কৃতিত্ব ছিল। ১৯৮৬ সালে ফেডারেশন কাপ সেমিফাইনালে অভিজ্ঞ গোলরক্ষক মোত্তালেবের দৃঢ়তা এখনো চোখে ভাসে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডান-আবাহনীর উত্তেজনা ভরপুর সেই ম্যাচ নির্ধারিত সময়ে ৪-৪ ড্র ছিল। অতিরিক্ত সময়েও ড্র থাকায় টাইব্রেকার। মোত্তালেবের দৃঢ়তার সঙ্গে দুই শট রুখে দিয়ে আবাহনীকে ফাইনালে তোলেন। ১৯৯২ সালে ফেডারেশন কাপে গোলরক্ষক সাইদ হাসান কাননের দৃঢ়তায় টাইব্রেকারে আবাহনীকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে মোহামেডান। কিন্তু ফাইনালের নায়ক বনে যান ব্রাদার্সের গোলরক্ষক পনির হোসেন। মোহামেডানের দুটি শট দৃঢ়তার সঙ্গে রুখে দেন তিনি। ১৯৯৫ সালেও ফেডারেশন কাপ ফাইনালের নায়কও পনির। তবে এবার তার দল ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান। ফাইনালে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে গোল না হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। পাঁচ শটের মধ্যে তিনটি রুখে  দেন পনির। এতেই বনে যান তারকা ফুটবলার। আন্তর্জাতিক ফুটবলের কথা বললে চোখে আসবে প্রেসিডেন্ট কাপ। ১৯৮৯ সালে দক্ষিণ কোরিয়া ও বাংলাদেশ লাল দলের ফাইনাল। সেমিফাইনালে আহত হওয়ায় ফাইনালে নিয়মিত গোলরক্ষক কানন নেই। ফাইনালে নামেন অতিরিক্ত গোলরক্ষক সেলিম। টাইব্রেকারে ২ গোল ঠেকিয়ে সেলিমই নায়ক হয়ে যান। দেশকে জেতান প্রথম আন্তর্জাতিক ট্রফি। এরপরই সেলিম যোগ দেন আবাহনীতে। সাফ ফুটবলে বাংলাদেশ একবারই চ্যাম্পিয়ন। ২০০৩ সালে ঢাকায় ফাইনালে প্রতিপক্ষ ছিল মালদ্বীপ। টাইব্রেকারেই শিরোপা নিষ্পত্তি হয়। গোলরক্ষক আমিনুল হক দৃঢ়তার সঙ্গে ১ শট রুখে দিলে শেষ শটে সুজনের গোলে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর