মঙ্গলবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বদলে যাবে দেশের ফুটবল

স্কুল টুর্নামেন্ট আয়োজনে প্রশংসিত ক্রীড়া মন্ত্রণালয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বদলে যাবে দেশের ফুটবল

এক সময়ে ফুটবলে তারকার কমতি ছিল না। হাফিজ উদ্দিন, শহিদুর রহমান সান্টু, এনায়েতুর রহমান, সালাউদ্দিন, মনোয়ার হোসেন নান্নু, শামসুল আলম মঞ্জু, দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল, আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু, খোরশেদ বাবুল, গোলাম রব্বানী হেলাল, আশিষ ভদ্র, বাদল রায়, সালাম মুর্শেদী, আবদুল গাফফার, আবুল হোসেন, শেখ মো. আসলাম, রুমি, কায়সার হামিদ, মো. মোহসিন, ছাইদ হাসান কানন, সম্রাট হোসেন এমিলি, সৈয়দ রুম্মন ওয়ালি বিন সাব্বির, মোনেম মুন্না, জুয়েল রানা, নকিব, মাসুদ রানা, রোকনুজ্জামান কাঞ্চন কত তারকার না দেখা মিলেছিল।

আমিনুল হক, বিপ্লব ভট্টাচার্য, মামুনুল ইসলাম, জাহিদ হোসেন এমিলিদের পর সেমানের খেলোয়াড়ের দেখা মিলছে না। এখন এতটা সংকট যে নতুন খেলোয়াড়ই সৃষ্টি হচ্ছে না। জাতীয় দল গড়তেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। পাইপ লাইন একেবারেই বন্ধ বলা যায়। খেলোয়াড় সৃষ্টির কোনো কর্মসূচিও নেই বাফুফের। ফুটবলে নতুন দল বসুন্ধরা কিংসই এই ক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছে। প্রতিভার সন্ধানে তারা ১৭ বছরের কিশোরদের নিয়ে অনুশীলনের ব্যবস্থা করে। চূড়ান্তভাবে বাছাইকৃত খেলোয়াড়দের বিশেষ ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিভার সন্ধানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়েরও প্রশংসীয় উদ্যোগ নিয়েছে। ফুটবলার সন্ধানে স্কুল টুর্নামেন্টের বিকল্প নেই। দেরিতে হলেও এই মহতী উদ্যোটা নিয়েছে মন্ত্রণালয়। সেপ্টেম্বর থেকে প্রায় তিন মাসব্যাপী বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবলের পর্দা নেমেছে রবিবার। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনাল খেলায় রংপুর বিভাগ ২-১ গোলে রাজশাহীকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ট্রফি জেতায় রংপুরের কিশোর ফুটবলাররা উল্লাসে মেতেছিল। ফলাফল যাই হোক এই টুর্নামেন্টে আয়োজনে ফুটবলপ্রেমীরা সন্তুষ্ট। কেননা অন্ধকারে আলো জ্বালাতে কিশোরদের এমন প্রতিযোগিতা অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। নেত্রকোনা থেকেই বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের যাত্রা। দেশ জুড়ে পাঁচ হাজার বেশি স্কুলের ২৫ হাজার কিশোর ফুটবলার টুর্নামেন্টে নাম নিবন্ধন করেছে। টুর্নামেন্ট থেকে ৪৩ জন ফুটবলারকে বাছাই করে বিকেএসপিতে এক বছর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। সেরা চারজনকে ১ বছর ট্রেনিংয়ের জন্য পাঠানো হবে ফুটবলের দেশ ব্রাজিলে। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের প্রধান উদ্যোক্তা জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ই। টুর্নামেন্ট ঘিরে তিনি অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে বাস্তবায়ন নিয়েই। কেননা বাংলাদেশে আবার প্রতিশ্রুতি মুখেই সীমাবদ্ধ থাকে। জয় যেসব স্বপ্ন দেখিয়েছেন তার যদি পঞ্চাশ ভাগও বাস্তবায়ন হয় দেশে ফুটবল শূন্যতার এই ভয়াবহতা কেটে যাবে। পাল্টে যাবে ফুটবল। ব্রাজিল বা অন্য দেশের ফুটবল উন্নয়নের পেছনে স্কুল টুর্নামেন্টের অবদান আছে। ভারতে বছরে স্কুলের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কত টুর্নামেন্টে হয় তার হিসেব মেলানো মুশকিল। বাংলাদেশেই শুধু উপেক্ষিত। হলেও তা নিয়মিত নয়। আসলে বাফুফের কর্মকর্তাদের ভাবখানা দেখে মনে হয় ফুটবলার তৈরির পেছনে কোনো কিছুই প্রয়োজন নেই। লাথি মারলেই চলে। প্রকৃত পক্ষে ফুটবলের তো এমনি অবস্থা। পাঁচ কেন যদি বলি প্রতি বছর ২ হাজার স্কুলের অংশগ্রহণে অনূর্ধ্ব-১৭ বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ অনুষ্ঠিত হয় তাহলে অনেক আসলাম ও কায়সারের দেখা মিলবে। প্রসঙ্গক্রমে এখানে বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেসা টুর্নামেন্টের কথা না বললেই নয়। মেয়েদের ফুটবলে অগ্রগতির পেছনে এই টুর্নামেন্টের অবদান অনেক। কৃষ্ণা, স্বপ্না, সাবিনা, মারিয়া, আঁখিদের দেখা মিলছে বঙ্গমাতা টুর্নামেন্ট থেকে। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে কিশোরদের ফাইনাল খেলা যারা দেখেছে তারা মুগ্ধ না হয়ে পারেনি। রংপুর ও রাজশাহীর গতিময় খেলা দেখে লাখপতি ফুটবলারদেরই অনেক কিছু শেখার আছে। আর কিছু দরকার নেই। অনূর্ধ্ব-১৭ বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ নিয়মিত মাঠে গড়ালেই পাল্টে যাবে দেশের ফুটবল।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর