বুধবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ছোট ফরম্যাটে ছোট সাফল্যও

ফিরে দেখা ২ ০ ১ ৮

মেজবাহ্-উল-হক

ছোট ফরম্যাটে ছোট সাফল্যও

নিদাহাস টি-২০ ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২১৫ রানের টার্গেট পেরিয়ে জয়ের পর টাইগারদের নাগিন নাচ

টি-২০ ক্রিকেটে টাইগারদের সবচেয়ে বড় সাফল্য- বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তাদের ‘হোম সিরিজ’ জিতেছিল বাংলাদেশ। এছাড়া শ্রীলঙ্কার মাটিতে নিদাহাস ট্রফিতে স্বাগতিকদের দর্শক বানিয়ে ফাইনালে উঠেছিল টাইগাররা। ২০১৮ সালে টি-২০ সাফল্য এতটুকুই। চলতি বছরে মোট ১৬টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছে টাইগাররা। জয় মাত্র ৫টি। হার ১১ ম্যাচে।

টি-২০র সবচেয়ে বেদনার স্মৃতিও আছে এই বছরেই। ভারতের মাটিতে তিন ম্যাচের সিরিজে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত এই ফরম্যাটের ইতিহাসে সেরা জয়টা বাংলাদেশ পেয়েছে চলতি বছরেই। ১০ মার্চ কলম্বোতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথমে ব্যাট করে ২১৪ রান করেছিল শ্রীলঙ্কা। এরপর মুশফিকুর রহিমের ক্যারিশম্যাটিক ব্যাটিংয়ে ৫ উইকেটে দুর্দান্ত এক জয় পায় টাইগাররা। মিস্টার ডিপেন্ডেবল মাত্র ৩৫ বলে খেলেছিলেন ৭২ রানের হার না মানা ইনিংস। এই ম্যাচে শেষ মুহূর্তে মাহমুদুল্লাহ ব্যাট থেকে আসা ১১ বলে ২০ রানের ইনিংসটাও ছিল অসাধারণ। তবে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছিলেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন কুমার দাস। তাদের উদ্বোধনী জুটিতে এসেছিল ৭৪ রান। তামিম ২৯ বলে ৪৭ এবং ১৯ বলে ৪৩ করেছিলেন লিটন। দুর্দান্ত এই ম্যাচটিই বাংলাদেশের টি-২০ ক্রিকেটের বড় বিজ্ঞাপন হয়ে থাকবে।

জুলাই-আগস্টে ক্যারিবীয় দ্বীপেই বাংলাদেশ পেয়েছে টি-২০র সবচেয়ে বড় সাফল্য! বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের তাদের ঘরের মাঠে সিরিজে হারিয়ে রীতিমতো ক্রিকেট বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছে সাকিবরা। অথচ ওই সিরিজের প্রথম ম্যাচেই সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসে ৭ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ। তারপর পরের দুই ম্যাচে আমেরিকার ফ্লোরিডায় জিতে সিরিজ নিশ্চিত।

ওই সিরিজে ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত দাপট দেখিয়ে সিরিজে সেরা হয়েছিলেন টাইগার ক্যাপ্টেন সাবিক। ঘরের মাঠেও ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের দারুণ সুযোগ তৈরি হয়েছিল। তিন ম্যাচের সিরিজে প্রথম ম্যাচে হেরে গিয়ে দ্বিতীয় ম্যাচে দারুণভাবে জিতেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষের ম্যাচে সাকিবরা জিততে পারেনি। তবে বছরের সবশেষ এই সিরিজেও ‘ম্যান অব দ্য সিরিজ’ পুরস্কার পেয়েছেন সাকিব।

তবে বছরের শুরুতেই দুই ম্যাচের সিরিজে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল বাংলাদেশ। যদিও তখন নিয়মিত কোচ না থাকায় লাল-সবুজরা ছিল বেশি ছন্নছাড়া। তা ছাড়া ওই সিরিজে ভরাডুবির এক বড় কারণ ছিল- কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে বাংলাদেশের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে লঙ্কান কোচের দায়িত্ব নিয়ে প্রথম সফরেই বাংলাদেশের এসেছিলেন। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজেও নিয়মিত কোচ ছিলেন। তারপর ক্যারিবীয় সফরে ইংলিশ কোচ স্টিভ রোডস টাইগারদের কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পরই বদলে যায় পুরো দল।

অবশ্য স্টিভ রোডস দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ এ পর্যন্ত মোট ছয়টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছে। তার মধ্যে তিনটিতে ছয় এবং তিনটিতে পরাজয়। 

চলতি বছরে টি-২০তে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ১৬ ম্যাচে ৩৪.৫ গড়ে ৪১৪ রান করেছেন তিনি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, কোনো সেঞ্চুরি কিংবা হাফ সেঞ্চুরি নেই। অবশ্য ২০১৮ সালে টি-২০তে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানই সেঞ্চুরি করতে পারেননি। তিনটি হাফ সেঞ্চুরি আছে মুশফিকুর রহিমের। ৩০.৫৩ গড়ে তিনি ৩৯৭ রান করেছেন তিনি। তৃতীয় সর্বোচ্চ রান তামিম ইকবালের (৩৫৬), চতুর্থ সর্বোচ্চ লিটনের রান ৩৩৩। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে পঞ্চম সর্বোচ্চ সাকিবের রান ২৪৮। তবে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার খেলেছেন ১১ ম্যাচ। সাকিব উইকেটও নিয়েছেন ১৫টি।

ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ২০ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন সাকিব, এটি ২০১৮ সালে ক্রিকেট বিশ্বেই দ্বিতীয় সেরা বোলিং ফিগার (প্রথম ক্যারিবীয় বোলার কেমো পলের, (৫/১৫)। এই বছরে বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার মুস্তাফিজুর রহমান। কাটার মাস্টার ১৩ ম্যাচে নিয়েছেন ২১ উইকেট।

টি-২০ নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের আহামরি কোনো পরিকল্পনা চোখে পড়ে না! সে কারণে এই ফরম্যাটে সাফল্যও চোখে পড়ার মতো নয়। ক্রিকেটে ছোট ফরম্যাটে সাফল্যও ‘ছোট’!

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর